রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়েছে কিনা যেভাবে বুঝবেন, নিয়ন্ত্রণের উপায়
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২০ আগস্ট ২০২৫, ১১:৫১:৪৯ অপরাহ্ন
অনুপম স্বাস্থ্য ডেস্ক: চিকিৎসকের মতে, যাঁরা নিয়মিত মাছ-মাংস খেয়ে থাকেন, তাঁদের ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার ঝুঁকি বেশি। অত্যধিক মদ্যপানও ইউরিক অ্যাসিডের কারণ হতে পারে। আর ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেই গাঁটের ব্যথা অনিবার্য। তবে মনে রাখবেন, শরীরের গিরায় গিরায় ব্যথা, সারা শরীর ব্যথা বা কামড়ানো ইত্যাদি ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার লক্ষণ নয়।
রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়লে তাকে হাইপারইউরিসেমিয়া বলা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড বড় ধরনের কোনো ক্ষতি বা সমস্যা করে না। স্বাভাবিক অবস্থায় শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের নির্দিষ্ট মাত্রা হল, পুরুষের ক্ষেত্রে: ৩.৪–৭.0 mg/dL এবং মহিলার ক্ষেত্রে: ২.৪–৬.0 mg/dL। এর চেয়ে বেশি হলে তা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।
মূলত ইউরিক অ্যাসিড বেশি প্রভাব ফেলে হাড় ও কিডনির উপরেই। খাওয়া-দাওয়ায় একটু হ্রাস টানলেই এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব। তবে ইউরিক অ্যাসিডের লক্ষণ সম্পর্কে অনেকেরই তেমন কোনও ধারণা নেই। সে ক্ষেত্রে এই কয়েকটি বিষয়ের দিকে নজর রাখতেই হবে।
যেভাবে বুঝবেন রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়েছে
শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে বার বার প্রস্রাব পাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। কারণ কিডনি চায় শরীরে থাকা অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিডকে বার করে দিতে। তবে বার বার প্রস্রাব ছাড়াও শরীরে ইউরিক অ্যাসিডে মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি প্রস্রাব থেকে বেরতে পারে রক্তও। এছাড়া, হতে পারে ইউটিআই বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন।
ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়লে প্রস্রাবের সময় অনেকেরই জ্বালা করে। এই জ্বালা এতটা বেশি হয় যে মানুষটি প্রস্রাব আসলেও অনেক সময় করতে চান না। এর থেকে কিডনিতে পাথরও হতে পারে। তাই আপনার সঙ্গেও এমনটা ঘটলে এক বার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ইউরিক এসিড বাড়ায় যেসব খাবার
লাল মাংস (গরু, খাসি, ভেড়া)
অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাংস (কলিজা, কিডনি, ব্রেইন)
সামুদ্রিক মাছ (সার্ডিন, হেরিং, ম্যাকারেল, অ্যাঙ্কোভি)
শুকনো মাছ—শুটকি
ডাল জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে (মটরশুঁটি, মসুর, ছোলা)
মাশরুম, পালং শাক, ফুলকপি
বিয়ার ও অ্যালকোহল
চিনিযুক্ত সফট ড্রিংকস (ফ্রুক্টোজ সিরাপ যুক্ত)
এসব খাবার অতিরিক্ত খেলে ইউরিক এসিড বেড়ে যায়।
যেভাবে ঠেকাবেন রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা
ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে কফি, কোল্ড ড্রিংকস, মদ খাওয়া চলবে না। করা যাবে না ধূমপানও। পালংশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, মিষ্টিকুমড়া, ঢ্যাঁড়স, টমেটো সব্জি না খাওয়াই ভাল। পাশাপাশি, অতিরিক্ত প্রোটিন যেমন- খাসির মাংস, সামদ্রিক মাছ এড়িয়ে চলুন। বিভিন্ন রকম ডাল খাওয়াও ইউরিক অ্যাসিডের রোগীদের জন্য ভাল নয়।
ওজন বেশি থাকলেও এই রোগের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই সঠিক ডায়েটের পাশাপাশি শরীরচর্চা করাও জরুরি। তবে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেশি বেড়ে গেলে অবিলম্বে চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। সে ক্ষেত্রে ওষুধের উপর নির্ভর করতেই হবে।
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে অব্যর্থ টোটকা অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার। ১ চা চামচ ভিনেগার নিন, এক গ্লাস জলের সঙ্গে মিশিয়ে দিনে অন্তত ২-৩ বার এই মিশ্রণ পান করুন নিয়মিত। উপকার পাবেন।
অবশ্যই পানি খেতে ভুলবেন না। পানি কিন্তু ইউরিক অ্যাসিডকে ইউরিনের মাধ্যমে বের করে রক্ত থেকে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
তবে খাবার নিয়ন্ত্রণ করার দুই মাস পর ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সে ক্ষেত্রে নরমাল হয়ে গেলে বাদকৃত খাবার আবার শুরু করবেন না। ধীরে ধীরে ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ অনুযায়ী অথবা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তারপর সেই খাবার পরবর্তীতে গ্রহণ করা যেতে পারে। সুতরাং ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে আপনি অবশ্যই ডায়েট ঠিক করে ফেলুন। তাহলে নিজেকে অনেক দ্রুত সুস্থ করে তুলতে পারবেন।




