বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা ইউনিভার্সিটি আ্যলামনাই ইন দ্য ইউকের বিজয় দিবস পালন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭:৩৮:৩৫ অপরাহ্ন
“সব কটা জানালা খুলে দাওনা, আমি গাইব বিজয়েরই গান। ওরা আসবে চুপি চুপি, যারা এ দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ”
নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, লন্ডন: বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, এগার দফা ছাত্র আন্দোলন, ঊনসত্তরের ছাত্র গণ অভ্যুথান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল অনন্য। পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই প্রথম রুখে দাঁড়িয়ে বুকের রক্ত দিয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্দোলন সংগ্রামকে স্মরণ করে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনে ২০শে ডিসেম্বর শনিবার পূর্ব লন্ডনের স্থানীয় একটি হলে দুটি পর্বে মহান একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ এবং বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা ইউনিভার্সিটি আ্যলামনাই ইন দ্য ইউকে ৫৫তম বিজয় দিবস উদযাপন করেছে।
সহ-সভাপতি রিপা সুলতানা রাকীবের তত্ত্বাবধানে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গান গেয়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি সিরাজুল বাসিত চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের আলোচনা ও স্মৃতিচারণ পর্ব সুচারুভাবে পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। তিনি শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকা চমৎকারভাবে তুলে ধরেন, ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের মাধ্যমে নয় মাসব্যাপী চলা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আজ ২০শে ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর উপ প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের মৃত্যুতে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে উপস্থিত সকলে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের পরিচালনায় সাক্ষাৎকার ভিত্তিক স্মৃতিচারণ ও বক্তৃতা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। স্মৃতিচারণ পর্ব স্মৃতির জানালা কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ জাফরের উপস্থাপনায় প্রথমেই স্মৃতিচারণে অংশ নেন
সংগঠনের উপদেষ্টা শাহগীর বখত ফারুক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠনের উপদেষ্টা আবু মুসা হাসান॥ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহারুন আহমেদের উপস্থাপনায় স্মৃতিচারণে অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠনের উপদেষ্টা দেওয়ান গৌস সুলতান ও উপদেষ্টা আব্দুর রাকীব॥ সহ-সভাপতি নিলুফা ইয়াসমীন হাসানের উপস্থাপনায় স্মৃতিচারণে অংশ নেন উপদেষ্টা সহুল আহমেদ মকু, নির্বাহী সদস্য প্রশান্ত লাল দত্ত পুরকায়স্থ বিইএম এবং সাধারণ সম্পাদক এম কিউ হাসানের উপস্থাপনায় স্মৃতিচারণে অংশ নেন নির্বাহী সদস্য মাহফুজা রহমান ও নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবু ইকবাল
সাক্ষাৎকারে বীর মুক্তিযোদ্ধাদ্বয় তাঁদের মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, মার্চ মাসের শুরুতেই তাঁরা মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। এবং মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে তাঁরা লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশ গড়ার কাজে নিজেকে যুক্ত করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তাঁরা বলেন, অনেক শিক্ষার্থী সেই সময়ে মুক্তিযুদ্ধে যায়নি, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করেছে, পরীক্ষা দিয়েছে। তাই মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে তাঁদেরকে আটো প্রমোশন গ্রহণ করতে হয়েছে।
যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের প্রতক্ষদর্শী সাক্ষাৎকারে তাঁরা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের উপর যে হানাদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল তার বর্ণনা দেন। এতে উপস্থিত সকলে আবেগে আপ্লুত হয়ে পরেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা হাবিব রহমান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে প্রবাসে বসে যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তা তুলে ধরেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ছায়ানট ও উদীচীর উপর আক্রমনের নিন্দা জানান।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন নির্বাহী সদস্য মারুফ চৌধুরী ও সহ-সভাপতি মির্জা আসাব বেগ।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক সম্পাদক এরিনা সিদ্দিকী সুপ্রভার চমৎকার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘সব কয়টা জানালা খুলে দাওনা‘ গানের সাথে প্রেরণা মন্ডলের নৃত্যের মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন বিশিষ্ঠ শিল্পী রাশিদা বানু, তারেক সৈয়দ, সৈয়দ জুবায়ের, কেজেবি কনক, রিপা সুলতানা রাকীব, কাজী কল্পনা, নিলা নিকি খান, সাঈদা চৌধুরী ও সাঈদা তামান্নার গান উপস্থিত সকলে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন।
বিখ্যাত কবি শামসুর রহমানের কালজয়ী কবিতা ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ যৌথ আবৃত্তি করেন মেজবাহ উদ্দিন ইকো ও মাহমুদা চৌধুরী, এবং ‘স্বাধীনতা তুমি’ আবৃত্তি করেন মিজানুর রহমান।
অনুষ্ঠান চলাকালে সংগঠনের প্রতি তাঁদের অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সংগঠনের দুইজন সদস্যকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সম্মাননা প্রাপ্তরা ছিলেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা দুই সংগীতশিল্পী সাঈদ জুবায়ের ও তারেক সায়েদ।
সংগঠনের সভাপতি সিরাজুল বাসিত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুল হাসান এবং কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী কমিটির সদস্যা খাদিজা আহমেদ বন্যা ও মাহমুদা চৌধুরী। পরবর্তীতে এই দুই গুণী শিল্পীকে উত্তরীয় প্রদান করেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজবাহ উদ্দিন ইকো।
অনুষ্ঠানে আগত সবাইকে ‘বিজয়ফুল’ পরিয়ে দেন সৈয়দ হামিদুল হক, মাহফুজা রহমান, মাহারুন আহমেদ ও নিলুফা ইয়াসমীন।
অনুষ্ঠানের সমাপনীতে, সভাপতি সিরাজুল বাসিত চৌধুরী এবং সাবেক সভাপতি ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মারুফ চৌধুরী সদস্যদেরকে স্কলারশিপ ট্রাস্ট ফান্ডে অবদান রাখার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন ⤵
সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুল হাসান স্কলারশিপ ট্রাস্ট ফান্ড সম্পর্কিত আপডেট দেন। তিনি জানান যে, গত বার্ষিক সাধারণ সভায় ১৪০টি স্কলারশিপ সদস্যদের দ্বারা অঙ্গীকার করা হয়েছিল এবং এর অধিকাংশই ফান্ডে প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ট্রাস্ট ফান্ড টিমের মাধ্যমে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিভাবান ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা ১০০ জন ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপ প্রদান করা যায়। এই স্কলারশিপ বিতরণের উদ্দেশ্যে স্কলারশিপ প্রদান অনুষ্ঠান জানুয়ারি ২০২৬-এর শুরুতে সেনেট ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে উপাচার্য, প্রো-উপাচার্য, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবক উপস্থিত থাকবেন।
সভাপতি সিরাজুল বাসিত চৌধুরী সমাপনী বক্তব্যে সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যে সকল নারী পুরুষ আত্মত্যাগ করেছেন তাদের বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করেন এবং বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানকে সফল করতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। এবং আগত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
