ভারত যে কারণে ঢাকাতে তার কৌশলগত অবস্থান হারানোর ঝুঁকিতে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৩১:০৮ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নয়াদিল্লির জন্য ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। কংগ্রেস সংসদ সদস্য শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভারতের জন্য ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ তৈরি করেছে। কংগ্রেস সংসদ সদস্য শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপোড়েন নিরসনে ভারতের দীর্ঘমেয়াদী কৌশল পুনর্মূল্যায়নের সুপারিশ করেছে।
‘ফিউচার অফ ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ রিলেশনশিপ’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে ভারতের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল অস্তিত্বের এবং একটি নতুন রাষ্ট্র জন্মের। কিন্তু বর্তমান চ্যালেঞ্জটি আরও জটিল; এটি একটি প্রজন্মের বিচ্ছিন্নতা এবং ভারতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার সম্ভাব্য কৌশলগত পুনর্বিন্যাস। রিপোর্টে বাংলাদেশে ‘ইসলামিক মৌলবাদী শক্তির পুনরুত্থান’ এবং ঢাকাতে ‘চীন ও পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কমিটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ভারত যদি এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নেয়, তবে যুদ্ধের কারণে নয় বরং ‘অপ্রাসঙ্গিকতার’ কারণে ঢাকাতে তার কৌশলগত অবস্থান হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে কমিটি জানিয়েছে, এটি ভারতের মানবিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে নেয়া একটি সিদ্ধান্ত। তবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি কমিটিকে নিশ্চিত করেছেন যে, শেখ হাসিনাকে ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে, কমিটি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করার এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে গঠনমূলক যোগাযোগ বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
আরও পড়ুন ⤵
প্রতিবেদনটি এমন এক সময়ে প্রকাশ পেল যখন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরের পর ঢাকায় প্রথম আলো, ডেইলি স্টার কার্যালয় ও ছায়ানটে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সে প্রসঙ্গে শশী থারুর বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন,‘বাংলাদেশ থেকে আসা এই খবরে আমি খুবই হতাশ।’
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়টিও স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে,‘যদিও (দুই দেশের মধ্যে) সম্পর্ক আরও বহুমাত্রিক হয়ে উঠছে এবং বাংলাদেশে এক নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠছে, তবুও এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে ১৯৭১ সালের উত্তরাধিকার আমাদের দুই দেশের মধ্যে সদিচ্ছা বৃদ্ধি এবং ঐতিহাসিক ভ্রাতৃত্ববোধকে শক্তিশালী করবে।’
কমিটি মনে করে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে না পারে, সেজন্য ভারতকে ‘জনমুখী’ নীতি গ্রহণ করতে হবে। ভারতের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সুরক্ষায় অবৈধ অভিবাসন ও চরমপন্থা মোকাবিলা করাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।



