রাজনীতি ভোটমুখী, দলগুলোর মাঠে সমঝোতা ও জোটবদলের ব্যস্ততা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৫:৩৬:১৪ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি: তপশিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে অবশেষে স্পষ্ট হলো দেশের নির্বাচনী সময়রেখা। ১২ ফেব্রুয়ারিকে ভোটের দিন নির্ধারণ করায় দীর্ঘ অনিশ্চয়তা কাটিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন এখন পুরোপুরি নির্বাচনের মুডে। মাঠপর্যায়ে দলগুলোর কার্যক্রম দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে, এবং নানা জোট–সমঝোতার আলোচনায় রাজনীতিতে খানিকটা নতুন উত্তাপও তৈরি হয়েছে। জনগণের মধ্যেও ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে ভোটকে ঘিরে প্রত্যাশার আবহ। অনেকেই মনে করছেন—এবার হয়তো উৎসবমুখর একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখা যাবে।
দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বলছেন, দেড় দশক ধরে জনগণ তাদের ভোটাধিকার সম্পূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে পারেনি। তাই এবারের ভোটকে ঘিরে মানুষের ভিন্ন ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তবে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলেও তারা মনে করছেন। তাদের বক্তব্য—সব দলের জন্য সমান সুযোগ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা এবং শান্ত পরিবেশই নির্বাচনের মূল শর্ত।
সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বড় রাজনৈতিক পক্ষ নির্বাচনের বাইরে থাকলেও টুয়েন্টি–ফোর মুভমেন্টের অংশীদার দলগুলো এবার অংশ নিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যেকোনো দল যদি এমন আচরণ করে যাতে নির্বাচন বিতর্কিত হয়, তাহলে পরবর্তী পার্লামেন্টও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। আর তাতে নতুন সরকারও শুরুতেই বৈধতা–সঙ্কটে পড়তে পারে। সে কারণে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য রাখাটা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জোট–সমঝোতা, প্রার্থী চূড়ান্তকরণে ব্যস্ততা
বিএনপি–জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি দল তপশিল ঘোষণার আগেই প্রচারে নেমে গেছে। তাদের সঙ্গে নতুন ও পুরোনো জোট গঠনের আলোচনা চলছে সমান তালে। এর মধ্যেই তিনটি জোট গঠন দৃশ্যমান হয়েছে—
‘গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট’: ৯টি বাম দলের সমন্বয়ে।
‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’: জাপার একাংশ ও জেপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।
‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’: এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
আরও পড়ুন ⤵
অন্যদিকে বিএনপিও তাদের যুগপৎ আন্দোলনের সহযোগীদের নিয়ে জোট সম্প্রসারণে আলোচনায় আছে। জামায়াতের বাইরে আরও কয়েকটি ইসলামী দল এতে যুক্ত হতে পারে। এ ছাড়া জামায়াত নেতৃত্বাধীন ৮ ইসলামী দলও ‘ওয়ানবক্স পলিসি’ নিয়ে আসন সমঝোতার আলোচনা চালাচ্ছে।
প্রগতিশীল ইসলামী জোটের পুনর্গঠন
এমএ আউয়াল নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় প্রগতিশীল ইসলামী জোটও পুনর্গঠনের পথে। একটি বৃহৎ সুন্নি জোটের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে—যারা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এমএ আউয়ালের দাবি—অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিরপেক্ষ হতে হবে, নইলে জনগণের মনে থাকা ভীতি দূর হবে না।
বিশ্লেষকদের মতামত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলছেন—তপশিল ঘোষণায় শঙ্কা কিছুটা কেটেছে। তবে পুরো আস্থা তৈরি হবে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে। প্রধান উপদেষ্টার পূর্ব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে—এটা জনগণের মনে নতুন প্রত্যাশা সৃষ্টি করেছে।
দলগুলোর অবস্থান
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন—তপশিল ঘোষণায় প্রমাণিত হয়েছে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে কমিশন ও সরকার আগ্রহী। তিনি এটিকে দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় বলেও উল্লেখ করেন। তার মতে, জোট–সমঝোতায় ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের মিত্র দলগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের গণমাধ্যমকে জানান—চব্বিশের আগস্টের আন্দোলনের পর থেকেই ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই চলছে, এবং তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
এনসিপির সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন—সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সদিচ্ছা থাকলেও নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতার ঘাটতি আছে। তবুও নির্বাচনের ঘোষণা সন্দেহ দূর করেছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সাইফুল হক মনে করেন—নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ অপরিহার্য। সেই পরিবেশ তৈরিতে সরকার–ইসি–দলগুলোকে আস্থা পুনর্গঠনে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন—যারা কঠিন সময়ে রাজপথে লড়াই করেছে, তাদের প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে বিএনপিকে যথাযথ বিবেচনা করতে হবে।




