বহু অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর, নতুন সংকটের ইঙ্গিত
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৬:০৪ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি (বিএমইউ) পরিচালিত এক বছরের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রতি চার জনের একজনের দেহে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু শনাক্ত হয়েছে। এসব জীবাণুর বিরুদ্ধে বহুল ব্যবহূত অ্যান্টিবায়োটিক অনেক ক্ষেত্রে কাজ করছে না।
গতকাল সোমবার বিএমইউর মিল্টন হলে বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষ্যে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) প্রতিবেদন ২০২৪-২৫’ এ তথ্য উঠে এসেছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল ‘এখনই পদক্ষেপ নিন, আমাদের বর্তমানকে রক্ষা করুন, ভবিষ্যেক সুরক্ষিত করুন।’
৪৬ হাজারের বেশি নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের চিত্র : বিএমইউর অণুজীববিজ্ঞান ও রোগ প্রতিরোধ বিদ্যা বিভাগ গত এক বছরে ৪৬ হাজার ২৭৯টি রোগীর নমুনা বিশ্লেষণ করে। এতে দেখা যায়, সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, সেফট্রিয়াক্সোন, জেনটামাইসিনের মতো নিয়মিত ব্যবহূত ওষুধ থেকে শুরু করে মেরোপেনেম ও টিগেসাইসিলিনের মতো শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক পর্যন্ত বহু ক্ষেত্রে কার্যকারিতা হারাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে চিকিৎসা জটিল হয়ে পড়ছে, সুস্থতায় লাগছে বেশি সময় এবং বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি। প্রতি চার নমুনায় একটিতে জীবাণু, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ প্রতিরোধী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহেদা আনোয়ার। তিনি জানান, বিশ্লেষণ করা মোট নমুনার ২৪ শতাংশ (১১ হাজার ১০৮টিতে) বিভিন্ন ধরনের জীবাণু পাওয়া গেছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, সেফট্রিয়াক্সোন, জেন্টামাইসিন, মেরোপেনেম, টিগেসাইক্লিনসহ বহু ওষুধ আর কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। রোগীর দেহে রেজিস্ট্যান্স তৈরি হওয়ায় এসব অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়ছে। ফলে রোগ নিরাময়ে সময় দীর্ঘ হচ্ছে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে।
আরও পড়ুন ⤵
সভাপতির বক্তব্যে মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের ইবনে সাত্তার বলেন, ‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বর্তমানে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্যের অন্যতম বড় হুমকি। অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া, অসম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ এবং প্রাণিসম্পদে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে জীবাণুগুলো ধীরে ধীরে ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এএমআরের কারণে আগে যে রোগ সহজেই সেরে যেত, এখন তা জটিল হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসার খরচ বাড়ছে, আইসিইউ ভর্তি থেকে মৃত্যু—সবই বাড়ছে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ফলে।
বিএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, এএমআরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা অসম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে, যেগুলো সমাধানযোগ্য নয় তারও সমাধান খুঁজে বের করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই দায়িত্ব পালন করে জাতিকে আশা দেখাতে হবে। এ সময় ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘একসময় মানুষ ব্যাকটেরিয়ার কাছে পরাস্ত হতো, কারণ তখন তাদের হাতে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের মতো যথেষ্ট ওষুধ ছিল না। আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে মানবজাতি আবার সেই একই সংকটে পড়তে পারে, তবে এবার ওষুধ থাকবে, কিন্তু সেগুলো ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর হবে না।

