মালয়েশিয়ায় ইউটিএইচএমে সমাবর্তন: মা-ছেলের এক অবিস্মরণীয় সাফল্যের গল্প
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৯:৫৭ অপরাহ্ন
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া: ইউনিভার্সিটি টুন হুসেইন ওন মালয়েশিয়ার সমাবর্তনের মঞ্চ। সোনালি আলোয় ঝলমল হলঘর। গাউন পরিহিত শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ভরে উঠছে আঙিনা। ক্যামেরার ফ্ল্যাশে উজ্জ্বল প্রতিটি মুখ। এর মাঝেই উঠে এলো এমন এক দৃশ্য, যা উপস্থিত সবাইকে থমকে দিয়ে তাকাতে বাধ্য করেছে। একই মঞ্চে পাশাপাশি হাঁটছেন মা এবং ছেলে। একজন নিতে যাচ্ছেন পিএইচডির স্ক্রল, আরেকজন ব্যাচেলর ডিগ্রি।
এই দৃশ্য আর পাঁচজনের মতো সাধারণ নয়, পরিবারের বহু বছরের স্বপ্ন, পরিশ্রম আর অপেক্ষার জমাট বাঁধা ফল যেন এক ফ্রেমে রূপ নিল। সেই মা ড. নোরশিলা আবু বাকার, বয়স ৫১ বছর। আর তার পাশে ২৫ বছরের উদ্যমী তরুণ আকমাল হাফিজ নুরহিজাল আজাম। দুজনেই সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পথচলার সঙ্গী, আজ দুজনেই সাফল্যের মাইলফলক ছুঁলেন একসঙ্গে।
ড. নোরশিলার গবেষণা থিসিস শেষ করতে সময় লেগেছে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি—প্রায় দুই বছর। মহামারির সময় ল্যাবরেটরি বন্ধ, গবেষণামূলক পরীক্ষা থমকে যাওয়া, চলাচলে নিষেধাজ্ঞা—সব মিলিয়ে প্রতিটি ধাপেই ছিল বাধা। কিন্তু তিনি ছাড়েননি। প্রতিটি ভোরে নতুন করে শক্তি পেয়েছেন, প্রতিটি রাতে নিজেকে সাহস দিয়েছেন। গভীর দৃঢ়তায় পথ চলেছেন শেষ পর্যন্ত।
শনিবার সমাবর্তনের দিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে নোরশিলার চোখে ছিল অশ্রুর ঝিলিক। তিনি বললেন, ছেলের কাঁধে গাউন, আমার কাঁধেও গাউন। একই দিনে, একই মঞ্চে। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি জীবনে আর কী হতে পারে?
২৫ বছর আগে তার মাস্টার্স সমাবর্তনেও ছিলেন তিনি। কিন্তু তখন তিনি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আজ সেই সন্তানই মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে স্নাতক হয়ে মঞ্চে উঠেছে। এক বৃত্ত যেন পূর্ণ হলো।
আকমালের কণ্ঠে মায়ের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা। তিনি বলেন, “মা আমার শক্তির উৎস। তার উৎসাহ না থাকলে আর্টস থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আসার সাহস কখনো পেতাম না।
শ্রোতাদের অনেকেই হাসলেন, কেউ মাথা নেড়ে সমর্থন করলেন। মা–ছেলের এই সম্পর্ক শুধু রক্তের নয়, জ্ঞানেরও, স্বপ্নেরও, সংগ্রামেরও।
ইউটিএইচএম–এর ২৫তম সমাবর্তন সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে উৎসবমুখর। ৬ থেকে ১১ ডিসেম্বর, এই কয়েকদিনে ৪,৯১৫ জন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে যাবেন নতুন পরিচয়ে, হাতে স্বপ্নের সনদ নিয়ে। তাদের মধ্যেই সবচেয়ে উজ্জ্বল অনুপ্রেরণার নাম নোরশিলা ও আকমাল।
এদিন টেকনিক্যাল শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিতে তান শ্রী দাতুক সোহ থিয়ান লাইকেও প্রদান করা হয়েছে সম্মানসূচক ডক্টরেট।

