স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল নিযুক্ত ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২:০৩:৩৭ অপরাহ্ন
শহিদুল ইসলাম: দীর্ঘ ১৬ বছর পর স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল হিসেবে নিযুক্ত হলেন ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই, ডিবিএ, ডি.লীট। গত ১৬ নভেম্বর ২০২৫ রবিবার এডিনবরাস্থ ব্রিটানিয়া স্পাইস রেস্টুরেন্টে সেরিমনি অব ইনস্টলেশন অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনারারি কনসাল হিসেবে দায়িত্ব হস্তান্তর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্বাক্ষরিত মনোনয়নপত্র (সার্টিফিকেট অব ক্রেডেনশিয়াল) ড. ওয়ালী তছর উদ্দিনের হাতে তুলে দেন যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম।
আয়োজনের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী স্কটিশ ব্যাগপাইপের সুরের মূর্ছনায় ফুল দিয়ে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলামকে অনুষ্ঠানস্থলে বরণ করা হয়।
আরো পড়ুন ➡️ শাহজালাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি লুটন ইউকে–র নতুন কমিটি গঠন
সুমাইয়া তাবাসসুম সানের সঞ্চালনায় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম। অনারারি কনসালের দায়িত্ব ও কার্যক্রম তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন বাংলাদেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে ভূমিকা পালন করবেন।
লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে স্কটল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বার্থ রক্ষায় কিংবা স্কটল্যান্ডে ভ্রমণে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে যেকোনো সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করবেন ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রাখার জন্য ড. ওয়ালীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, অনারারি কনসালের মাধ্যমে স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উন্নত ও গতিশীল হবে।
অনারারি কনসাল হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ায় ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই তাঁর বক্তব্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
অভিষেক অনুষ্ঠানে আগত কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী, বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও সহকর্মীদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি। ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে অনারারি কনসাল হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

আবেগতাড়িত কণ্ঠে ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্র ও নাতি-নাতনিদের প্রতিও ধন্যবাদ জানান। দীর্ঘকাল কমিউনিটির উন্নয়নে তাঁর ভূমিকার পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে পরিবারের অবদান তিনি কৃতজ্ঞচিত্তে উল্লেখ করেন।
তিনি আরও বলেন—স্কটল্যান্ডে বসবাসরত বাংলাদেশি কমিউনিটির তরুণরা স্কটিশ মূলধারার রাজনৈতিক কার্যক্রমে আরও বেশি যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেন স্কটল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরের গণ্যমান্য কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ও পেশাজীবীরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ম্যানচেস্টারস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার মোহাম্মদ জোবায়েদ হোসেন, বাংলাদেশ হাইকমিশনের হেড অব চ্যান্সারি মো: শাহরিয়ার মোশাররফ, বেরউইক টাউন কাউন্সিলের কাউন্সিলর আইরিন খান এবং অ্যাবারডিন সিটি কাউন্সিলের কাউন্সিলর নুরুল হক আলী প্রমুখ। এছাড়া ইনভারনেস, ডানফার্মলিন, গ্লাসগো, নিউক্যাসল ও লন্ডন থেকে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠান শেষে ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিইকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানায় গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল, স্কটল্যান্ড রিজিয়ন এবং স্কট-বাংলা স্পোর্টিং ক্লাবের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই ১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো স্কটল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল হিসেবে নিযুক্ত হন। তবে ২০০৯ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনারারি কনসাল কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
ড. ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিই ১৯৫২ সালে মৌলভীবাজার জেলার নালিহুরী গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৭ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান।
একজন সফল ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা হিসেবে ব্রিটেন, ইউরোপ ও বাংলাদেশে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। স্কটিশ রাজধানী এডিনবরায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী রেস্টুরেন্ট—বারান্দা, ল্যান্সার ও ব্রিটানিয়া স্পাইস।
দাতব্য কার্যক্রমের জন্য ড. ওয়ালীর খ্যাতি ছড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী। ব্যবসায় উদ্যোক্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে এবং মানবিক সেবায় অসামান্য অবদান রাখায় তিনি বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে—১৯৯৯ সালে “ইন্ডাস্ট্রি পার্সোনালিটি অব দ্য ইয়ার”, “এশিয়ান জুয়েল লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড”, ১৯৯২ সালে “ইয়াং স্কট অব দ্য ইয়ার”সহ বিভিন্ন সম্মাননা।
মাল্টিকালচারাল কমিউনিটিতে বর্ণগত সম্প্রীতি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখার জন্য ১৯৯৫ সালে তিনি ব্রিটেনের রানীর পক্ষ থেকে এমবিই উপাধিতে ভূষিত হন এবং ১৯৮৪ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জাস্টিস অব পিস হিসেবে নিয়োগ পান। এছাড়া এডিনবরার ন্যাপিয়ার ইউনিভার্সিটি, হেরিওট ওয়াট ইউনিভার্সিটি এবং কুইন মার্গারেট ইউনিভার্সিটি কর্তৃক তিনি সম্মানসূচক অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন। স্কটল্যান্ডে কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির জন্য এ ধরনের সম্মাননা পাওয়া বিরল।
অসংখ্য সেবামূলক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি পরিচিত। ড. ওয়ালী ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স, সিলেট উইমেন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সিলেট ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, সিলেট হার্ট ফাউন্ডেশন, ব্র্যাক ইউকে ভিশন বাংলাদেশসহ অসংখ্য সংগঠনের নেতৃত্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে তিনি ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ইবিএফসিআই) প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
‘Wali Uddin: Blessed Son of Two Nations’ শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের লেখক ড. উদ্দিন অনারারি কনসালের মাধ্যমে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও মানবিক মূল্যবোধের অনুপ্রেরণায় স্কটল্যান্ড–বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাবেন—এমনটাই সকলের প্রত্যাশা।


