রায়ের আগে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে যা বলেছেন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১:৫৮:৩৭ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সোমবার (১৭ নভেম্বর) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। রায় টেলিভিশনে সরাসরি প্রচার করা হবে। তার আগেই ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সতর্ক করে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে দলীয় নেতাকর্মীরা ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঠেকিয়ে দেবে। তিনি দাবি করেন, তার মায়ের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার রায় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। একই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘পরিস্থিতি সহিংসতায় রূপ নিতে পারে।’
জয় জানান, আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা না উঠলে তারা নির্বাচন প্রতিহত করবেন। তার ভাষায়, ‘আমরা নির্বাচন হতে দেব না আওয়ামী লীগ ছাড়া। আমাদের প্রতিবাদ আরও জোরালো হবে, আমরা যা দরকার তা করব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিছু না করলে নির্বাচন আগে বাংলাদেশে সহিংসতা ঘটবে… মুখোমুখি সংঘর্ষ হবেই।’
রোববার তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা জানি রায় কী হবে। তারা তাকে দোষী সাব্যস্ত করবে, আর সম্ভবত মৃত্যুদণ্ড দেবে।’ তিনি দাবি করেন, তার মা ভারতে সম্পূর্ণ নিরাপদ, যেখানে তাকে ‘রাষ্ট্রপ্রধানের মতো’ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখপাত্র জয়ের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ট্রাইব্যুনাল ‘সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে’ বিচারকাজ পরিচালনা করছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। মুখপাত্র বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। দলটি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে এবং জবাবদিহির প্রক্রিয়া মানতে চাইছে না।’ তিনি আরও বলেন, সরকারের প্রথম লক্ষ্য ‘উত্তেজনা প্রশমন এবং মানুষের জীবন-সম্পদ রক্ষা।’
উল্লেখ্য, ৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নয়াদিল্লিতে নির্বাসনে যান। গত বছরের ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করে আসছেন। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রায় ১৪০০ জন মানুষ নিহত এবং হাজারো আহত হয়, যা ১৯৭১ সালের পর দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী এই অস্থিরতায় পোশাক শিল্পও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে।
হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে ঢাকায় সহিংসতা বেড়েছে। রোববার একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তার আগে ১২ নভেম্বর শহরের বিভিন্ন স্থানে ৩২টি বিস্ফোরণ ও বেশ কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ হয়। এসব নাশকতার অভিযোগে আওয়ামী লীগের কর্মীদেরও আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪০০-র বেশি বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, চেকপোস্ট জোরদারসহ জনসমাবেশেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
জয় আরও জানান, তিনি ও তার মা দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তার দাবি, ‘গত কয়েক দিন ধরে সারা দেশে হরতাল, বিশাল বিক্ষোভ—এসব আরও বাড়বে।’
দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিরোধী মত দমন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশ নেয়নি, কারণ বহু নেতা কারাবন্দি ছিলেন বা বিদেশে অবস্থান করছিলেন। এবার পরিস্থিতি উল্টো হয়েছে। জয় বলেন, ‘তিনি ক্ষুব্ধ, রাগান্বিত, হতাশ। আর আমরা সবাই যা প্রয়োজন তা করে লড়াই চালিয়ে যাব।’




