দেশের প্রতি ১০ জন শিশুর ৪ জনের রক্তে উদ্বেগজনক মাত্রায় সীসা: জরিপ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ৪:১৮:২১ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: দেশের প্রায় প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ৪ জনের রক্তেই ‘উদ্বেগজনক’ মাত্রায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে ইউনিসেফ ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নতুন জরিপে উঠে এসেছে।
জরিপে বলা হয়, ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ৩৮ শতাংশের (অর্থ্যাৎ প্রায় প্রতি ১০ জনে চারজন শিশু) এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রায় ৮ শতাংশের রক্তে সীসার মাত্রা ‘নিরাপদ সীমার চেয়ে বেশি’।
লাগেজভ্যান প্রকল্পের নামে ৩৫৮ কোটির ক্ষতি / রেলওয়ের সাবেক ডিজিসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
দেশের সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা ঢাকায়; যেখানে ৬৫ শতাংশ বলে উঠে এসেছে জরিপে।
ইউনিসেফ বলছে, সীসা দূষণ শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে হুমকি সৃষ্টি করে এবং এর প্রভাব সব আর্থ-সামাজিক শ্রেণির ওপরই পড়ছে। আক্রান্ত শিশুদের অর্ধেকের বেশি ধনী এবং ৩০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বলেও জরিপের প্রতিবেদনে দেখা যায়।
রোববার (১৬ নভেম্বর) ঢাকায় ইউনিসেফ ও অন্যান্য অংশীদারদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দেশে শিশু ও নারীদের ওপর পরিচালিত সবচেয়ে বিস্তারিত জরিপ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০২৫ (এমআইসিএস ২০২৫) এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করেছে।
বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রায় ৬৩ হাজার পরিবারের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত এ জরিপে শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, সুরক্ষা ও বিকাশে বিদ্যমান অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরেছে। জাতীয় অগ্রাধিকার ও বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ১৭২টি মানদণ্ড এবং ২৭টি এসডিজি সূচক তুলে এনেছে জরিপের মাধ্যমে।
জরিপের ফলাফল থেকে দেশের সব বিভাগ, জেলা এবং তিনটি সিটি করপোরেশন এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে, যা নীতিনির্ধারকদের বৈষম্যের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করবে।
এ প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে শিশুশ্রমের হারও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
ফলাফল বলছে, দেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে শিশুশ্রমের হার এখন ৯ দশমিক ২ শতাংশ; যা ২০১৯ সালের এই জরিপে ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ শিশুশ্রমের হার ছয় বছরের মাথায় ২ দশমিক ৪ শতাংশ পয়েন্ট বেড়েছে; যার বেশি দেখা উত্তরাঞ্চলে।
রাজশাহী বিভাগে শিশুশ্রমের হার ১২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং রংপুরে এর হার ১১ দশমিক ৮ শতাংশ। এর ফলে দেশে ‘আরও ১২ লাখ শিশু ঝুঁকিতে পড়েছে’ বলে তুলে ধরে ইউনিসেফ। সাম্প্রতিক সময়ে ‘সিজারিয়ান সেকশনের’ হারও বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, পূর্বের জরিপে যেখানে সিজারিয়ান সেকশনের হার ছিল ৯ শতাংশের মতো সেটি নতুন জরিপে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ শতাংশে। এখানে দেখা যায়, দরিদ্রের মধ্যে এ হার ৩৪ শতাংশ এবং ধনীদের মধ্যে ৬৮ শতাংশ।
স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে ৭৫ শতাংশে প্রসবের ক্ষেত্রে সিজারিয়ান সেকশনের হার বৃদ্ধি ‘স্বাস্থ্যঝুঁকি ও অর্থনৈতিক চাপ’ উভয়ই বাড়াচ্ছে বলে ইউনিসেফের ভাষ্য।
তবে শিশু মৃত্যুর হার এবং বাল্যবিবাহের মত সূচকে কিছুটা ইতিবাচক সাফল্যের দেখা মিলেছে জরিপে। বাল্যবিবাহের হার ২০১৯ সালের ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে, তবে এখনও প্ৰায় অর্ধেক মেয়ের ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়ে যায়।
এছাড়া নবজাতকের ক্ষেত্রে প্রতি হাজারে মারা যায় ২২ জন, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর (৩৩ শিশু) ৬৭ শতাংশ। পূর্বের জরিপে এ সংখ্যা ছিল ২৪।
চলতি বছরের শুরুতে জরিপের সময়ে শিশু মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে সিলেটে (২৯) এবং ঢাকায় (২৫)। সবচেয়ে কম মিলেছে খুলনা (১৫) এবং ময়মনসিংহ (১৮) বিভাগে।
যে নারীর বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে তাদের প্রত্যেক শিশু জন্মদানের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জরিপের ফল ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো শিশুর মৃত্যু হলে তা জন্মের কতদিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে, সেই হিসেবটি আমলে নেওয়া হয়েছে।
ঢাকায় স্বাস্থ্যসেবা এত উন্নত হওয়া সত্ত্বেও শিশুমৃত্যুর হার বেশি কেন-এক চিকিৎসকের প্রশ্নের উত্তরে, বিবিএস থেকে বলা হয়, জরিপের ফল আরও বিশ্লেষণ করলে এর উত্তর মিলবে। এখন যে তথ্য মিলেছে সেটিই প্রাথমিক ফলাফলে তুলে ধরা হয়েছে।
ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, বাল্যবিবাহ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস প্রমাণ করে যে অগ্রগতি সম্ভব, কিন্তু সীসা-দূষণ এবং শিশুশ্রমের মতো সংকট লাখ লাখ শিশুকে তাদের সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত করছে, এবং বেড়ে চলা সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের হার নারীদের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। যখন প্রতিটি শিশুর বেঁচে থাকা, বিকশিত হওয়া ও শেখার অধিকারকে সম্মান করা হবে, তখন এটি অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী বাংলাদেশের মাধ্যমে পরিমাপ করা যাবে।
জরিপের এসব ফলাফল ধরে সরকারের নীতি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এই তথ্যকে সুনির্দিষ্ট কাজে পরিণত করতে এবং কোনো শিশু যাতে বাদ না পড়ে সেই লক্ষ্যে পরিবর্তন আনতে সরকারকে সহায়তা করতে ইউনিসেফ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।




