‘জাতিসংঘে বাংলা’ স্মারক গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ৮:৫৩:২৭ অপরাহ্ন
জেসমিন মনসুর, বার্মিংহাম থেকে: জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষা হলো ইংরেজি, ফরাসি, আরবি, চীনা, রুশ ও স্প্যানিশ। পৃথিবীর চার সহস্রাধিক ভাষার মধ্যে সপ্তম স্থানে থাকা বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠন “রিকগনিশন অব বাংলা অ্যাজ অ্যান অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ অব দ্য ইউনাইটেড নেশনস”। সংগঠনটির উদ্যোগে ২০২৫ সালের ৯ই নভেম্বর, রোববার, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে আগত সংগঠনের আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দ ও কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে বার্মিংহামের মাল্টিপারপাস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এক সফল সম্মেলন।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর সংগঠনের প্রতিষ্ঠা থেকে বর্তমান পর্যন্ত কার্যক্রমের সারসংক্ষেপ নিয়ে প্রকাশিত দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘জাতিসংঘে বাংলা’-র আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি তফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব ফয়জুর রহমান চৌধুরী এমবিই-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বৃটিশ এমপি ব্যারিস্টার আইয়ুব খান। তিনি বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের প্রচারণায় নিজের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ প্রয়াস অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সংগঠনের কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলা একটি সমৃদ্ধ ভাষা এবং বিশ্বের প্রায় তেত্রিশ কোটি মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। তাই বাংলা জাতিসংঘের পূর্ণ দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন সংগঠনের সহসভাপতি ও প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব কে. কে. এম. আবু তাহের চৌধুরী, সুইনডন কমিটির সভাপতি আরজু মিয়া এমবিই, কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য আব্দুল লতিফ জেপি, সাউথ ওয়েলস রিজিওনাল সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মোহাম্মদ মকিস মনসুর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শেখ মফিজুর রহমান, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবু তাহের এমবিই, বার্মিংহাম বাংলা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী যুবরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য কামরুল হাছান চুনু, আব্দুল কাদির আবুল, ফিরোজ খান, পোর্টসমাউথ সভাপতি মাসুদ আহমদ, সাবেক কাউন্সিলর শাহিদ আলী, সাংবাদিক ফারুক যোশী, লন্ডন মহানগর সভাপতি নাজমুল হোসেন চৌধুরী, কমিউনিটি নেতা ডা. আব্দুল খালিক, ম্যানচেস্টার কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মীর গোলাম মোস্তফা, পোর্টসমাউথ সাধারণ সম্পাদক আবু সোয়েব তানজাম, বাংলা কাগজের চেয়ারম্যান আজাদ আবুল কালাম, প্রধান শিক্ষক রফিকুল আলম, কলামিস্ট শেবুল চৌধুরী, কমিউনিটি নেতা মাফিজ খান, লেখক নাসির উদ্দীন হেলাল, কমিউনিটি নেতা আঙ্গুর মিয়া, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট রাসিয়া খাতুন ও মিসেস রশিদ প্রমুখ।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা ওলিউর রহমান চৌধুরী দুবাগী। সভাপতির বক্তব্যে তফাজ্জল হোসেন চৌধুরী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম তজাম্মেল টনি হক এমবিইসহ প্রয়াত নেতাদের একবিংশ শতাব্দীর ভাষাসৈনিক আখ্যা দিয়ে বলেন, কমিউনিটি তাঁদের অবদান কখনও ভুলবে না। তিনি উল্লেখ করেন, সংগঠনের নিরলস প্রচেষ্টায় ২০২২ সালের ৬ই জুন বাংলা ভাষা জাতিসংঘে আংশিক স্বীকৃতি পেয়েছে এবং পূর্ণ স্বীকৃতির জন্য তারা অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চায় নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি বিদেশে বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্ন স্কুলে বাংলা পাঠ্যবই অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে অভিভাবকদের সহযোগিতা কামনা করা হয়। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশ সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা পেলে বাংলা ভাষা জাতিসংঘের পূর্ণ দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি পাবে। ২০২২ সালে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের অদাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়।
তবে সভায় বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কারণ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশন থেকে হাইকমিশনার, সহকারী হাইকমিশনার বা কোনো প্রতিনিধিই উপস্থিত ছিলেন না। বক্তারা মনে করেন, এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলে তা আরও অর্থবহ হতো।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সাল থেকে সংগঠনটি দেশ ও প্রবাসে বিভিন্নভাবে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। সম্মেলনে উপস্থিত সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে খুব শিগগিরই এই প্রচেষ্টা সফল হবে। অনুষ্ঠান শেষে মধ্যাহ্নভোজের মাধ্যমে সভার সফল পরিসমাপ্তি ঘটে।



