ওয়েলসে সফলভাবে সম্পন্ন হলো ডব্লিউবিসিসির বিজনেস এক্সপো ২০২৫

বাংলাদেশিদের ১৮০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগে ওয়েলসের অর্থনীতিতে নতুন গতি

লন্ডন অফিস: শত শত ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও পেশাজীবীদের অংশগ্রহণে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে ওয়েলস বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স (WBCC)-এর আয়োজিত বিজনেস এক্সপো ২০২৫। ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফ সিটি স্টেডিয়ামে ১২ নভেম্বর আয়োজিত এই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান ওয়েলস ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।

ওয়েলসের অর্থনীতির ‘পাওয়ারহাউস’ হিসেবে পরিচিত ওয়েলস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের ব্যবসায়িক ও বিনিয়োগ সহযোগিতায় কাজ করছে। প্রতি বছর ওয়েলসের অর্থনীতিতে বাংলাদেশি কমিউনিটির অবদান প্রায় ১৮০ মিলিয়ন পাউন্ড, যা ওয়েলসের বাণিজ্য ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত।

দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে সামনে রেখে আয়োজিত এই সাউথ ওয়েলস বিজনেস সেমিনার অ্যান্ড এক্সপো ২০২৫-এ অংশ নেন আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের দুই শতাধিক ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও পেশাজীবী।
অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা বিনিময়, পার্টনারশিপ গঠন এবং নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে ওয়েলস ও বাংলাদেশের মধ্যে নতুন সম্পর্ক সৃষ্টি।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ওয়েলস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট আব্দুল আলিম, এবং পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডব্লিউবিসিসির ডিরেক্টর জেনারেল ইমতিয়াজ হুসাইন।

এ সময় বক্তব্য রাখেন ওয়েলসের লর্ড লেফটেন্যান্ট মিসেস লুইস ফ্লিট, বাংলাদেশের হাইকমিশনার হার এক্সেলেন্সি আবিদা ইসলাম, ওয়েলস বিষয়ক সচিব জো স্টিভেন্স এমপি, এবং ওয়েলস সরকারের অর্থমন্ত্রী মার্ক ড্রেকফোর্ড।

ওয়েলস সরকারের অর্থমন্ত্রী মার্ক ড্রেকফোর্ড বলেন, ওয়েলসে বাংলাদেশি কমিউনিটি যে নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে, তা ওয়েলস সরকার গভীরভাবে মূল্যায়ন করে।

ওয়েলস বিষয়ক সচিব Jo Stevens MP বলেন, ওয়েলসের ফিনটেক কোম্পানি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় — বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তা ওয়েলস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের নেতৃত্ব ছাড়া সম্ভব ছিল না।

বাংলাদেশের হাইকমিশনার হার এক্সেলেন্সি আবিদা ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এই চেম্বার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন সবসময় এ উদ্যোগে পাশে থাকবে।

দুই ঘণ্টার বিরতির পর শুরু হয় স্পনসর প্রেজেন্টেশন সেশন।
এতে অংশ নেয় ParcTaxi, University of South Wales, Euro Foods Group, Smart Move Education Group, এবং Mutual Trust Bank PLC।

ইউরো ফুডস গ্রুপের চেয়ারম্যান সেলিম হুসাইন MBE বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা আজ ওয়েলসের খাদ্য ও খুচরা ব্যবসার অন্যতম চালিকাশক্তি।

Smart Move Education Group-এর প্রতিনিধি মোহাম্মদ হাসান জানান, আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

Mutual Trust Bank PLC প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেবা সহজীকরণের বিভিন্ন উদ্যোগ উপস্থাপন করে।

চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উপদেষ্টা দেলোয়ার এ. হুসাইন বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন দেশের ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হতে পারবেন। এই উদ্যোগে তারা সরাসরি উপকৃত হবেন। তাছাড়া পার্ক ট্যাক্সি কমিউনিটিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে।

ইভেন্টের পার্টনার হিসেবে ছিল University of South Wales ও ParcTaxi, এবং স্পনসর হিসেবে যুক্ত ছিল Mutual Trust Bank PLC, Euro Foods Group, Smart Move Education Group, ও Crown Farms।

বক্তারা একমত হন যে, ওয়েলস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স দুই দেশের ব্যবসায়িক সহযোগিতা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।

অনুষ্ঠানে ডব্লিউবিসিসির পরিচালক পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মুক্তার আহমেদ, আহমেদ আলি, আব্দুল লতিফ, মিনাজ আলী জেপি, ইয়াহিয়া হাসান, আজিজ আহমেদ চৌধুরী, ফাইসাল রাহমান, শাহ শাফি, রোজিনা আলিম, আফজাল খান, মোহাম্মদ জাব আলি, শাহজাহান, মোহাম্মদ বদরুল ইসলাম, সাদিক মিয়া, এবং তরুণ সফল উদ্যোক্তা ইমরান জব্বার প্রমুখ।