ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের অষ্টম বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ৮:৩৮:৩৭ অপরাহ্ন
সিরাজুল বাসিত চৌধুরী সভাপতি, মোহাম্মদ কামরুল হাসান সাধারণ সম্পাদক, সৈয়দ জাফর কোষাধ্যক্ষ
নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, লন্ডন: আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হলো ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে-এর অষ্টম বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন। গত ৯ নভেম্বর রোববার পূর্ব লন্ডনের রিজেনেন্টস লেক ব্যাংকুয়েটিং হলে দিনব্যাপী এ সভা অনুষ্ঠিত হয় বিপুল সংখ্যক সদস্যের উপস্থিতিতে। বিদায়ী সভাপতি প্রশান্ত লাল দত্ত পুরকায়স্থ বিইএম-এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দীন ইকোর সঞ্চালনায় সভাটি সম্পন্ন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়টি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে অবস্থানরত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেলবন্ধনের উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যে ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকে’ গঠিত হয় এবং ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি সাধারণ সভার মাধ্যমে সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয়। সংগঠনটি শুধু প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলন নয়, বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এককালীন বৃত্তি প্রদানকেও অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করে। দু’বছর পর পর নতুন কার্যকরী কমিটি গঠিত হয়, এবং তারই ধারাবাহিকতায় ৯ নভেম্বর অষ্টম সাধারণ সভার মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফর রহমান। সভাপতি প্রশান্ত লাল দত্ত পুরকায়স্থ তাঁকে উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিটি অধ্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি উপস্থিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের ঐতিহ্য ভুলে না গিয়ে ব্রিটিশ সমাজে সম্পৃক্ত হতে হবে এবং সন্তানদেরও আমাদের শিকড় ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।” তিনি শিক্ষার গুরুত্বের ওপরও বিশেষ জোর দিয়ে বলেন, “শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমাদের সন্তানরা যদি একাডেমিক বা ভোকেশনাল শিক্ষায় সফল হয়, তাহলেই আমরা শক্তিশালী বাংলাদেশি কমিউনিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারব।”
তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ২০২৫-২৭ সালের জন্য নতুন কার্যকরী কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন শাহগীর বখত ফারুক এবং সদস্য ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান ও ব্যারিস্টার নাজির উদ্দিন চৌধুরী। যেহেতু কোন পদেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না, তাই ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হয়নি। তাঁরা ৩২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির নাম ঘোষণা করেন।
সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সিরাজুল বাসিত চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মেসবাহ উদ্দীন ইকো এবং সহ-সভাপতি পদে নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, রীপা সুলতানা রাকীব ও মির্জা আসাব বেগ। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ব্যারিস্টার এম কিউ হাসান। যুগ্ম সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহারুন আহমেদ মালা, ব্যারিস্টার ও সলিসিটর মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও ব্যারিস্টার মিজানুর রহমান। কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর এবং যুগ্ম কোষাধ্যক্ষ ফাইজুল হক রিপন ও কনকন কান্তি ঘোষ। দপ্তর সম্পাদক ফখর উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ হামিদুল হক এবং যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দা ফারহানা সুবর্ণা ও খালিদ ইয়াহইয়া। এছাড়া, এরিনা সিদ্দিকী সুপ্রভা সাংস্কৃতিক সম্পাদক, সৈয়দ এনামুল ইসলাম প্রেস অ্যান্ড পাবলিসিটি সম্পাদক এবং মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন আহমেদ শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। কার্যকরী সদস্য হিসেবে রয়েছেন ইসমাইল হোসেন, মোস্তফা কামাল মিলন, মারুফ আহমেদ চৌধুরী, প্রশান্ত দত্ত পুরকায়স্থ বিইএম, আব্দুল মুকিত চৌধুরী, ফখরুল মোহাম্মদ ইসলাম, মোহাম্মদ রফিক আহমেদ, মোহাম্মাদ কামরুল হাসান, সবিতা শামশেদ, মোহাম্মদ চন্দন মিয়া, খাদিজা আহমেদ বন্যা, মাহমুদা চৌধুরী ও কল্পনা কাজী।
সভায় প্রয়াত অ্যালামনাই সদস্য রাজিয়া বেগমের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সাধারণ সম্পাদক এম কিউ হাসান তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করেন। এছাড়া সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। কোরআন তেলাওয়াত করেন খালিদ ইয়াহইয়া এবং গীতা থেকে পাঠ করেন বিধান মন্ডল।
সভায় গত দুই বছরের কার্যক্রম প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দীন ইকো এবং আর্থিক প্রতিবেদন পেশ করেন কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর। সপ্তম এজিএমের মিনিটস উপস্থাপন করেন দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার মিজানুর রহমান। বিদায়ী সভাপতি প্রশান্ত দত্ত পুরকায়স্থ তাঁর বক্তব্যে সংগঠনের সফলতার কৃতিত্ব সকল সদস্যদের দেন এবং দায়িত্ব পালনকালে সহযোগিতার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
সিনিয়র অ্যালামনাইদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মারুফ আহমদ চৌধুরী, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, মির্জা আসাব বেগ, সৈয়দ আবু বকর ইকবাল, মতিন চৌধুরী ও ফখরুল ইসলাম মেজবাহ প্রমুখ।
বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দীন ইকো, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আবুল কালাম ও সাবেক সভাপতি মারুফ আহমদ চৌধুরী সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুঃস্থ মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান ও ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের বিবরণ তুলে ধরেন। ২০১৭ সালে শুরু হওয়া এই কার্যক্রমে গত বছর ২৫ জন এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে এককালীন বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এবারের এজিএমে সদস্যরা আগামী বছরে আরও দেড়শ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ হাবিব রহমান, শাহগির বখত ফারুক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান ও ব্যারিস্টার নাজির উদ্দিন চৌধুরী।
মধ্যাহ্নভোজের পর সাংস্কৃতিক সম্পাদক রীপা সুলতানা রাকীব, মিজানুর রহমান, এরিনা সিদ্দিকী সুপ্রভা ও সৈয়দা সুবর্ণার সঞ্চালনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে মাহফুজা রহমানের লেখা কবিতা ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ ১৬ জন সদস্য একযোগে পরিবেশন করেন, যার প্রতিটি লাইন ছিল উদ্দীপনার প্রতীক। এরপর রীপা সুলতানা রাকীব ও কাজী কল্পনার যৌথ পরিবেশনায় ‘আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো’ গানটি পরিবেশিত হয়। তারা একক গানও গেয়ে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন। পরে বিশিষ্ট শিল্পী সহোদর সায়ীদ জোবায়ের ও সায়ীদ তারেক একের পর এক জনপ্রিয় গান পরিবেশন করে দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন। আরও গান পরিবেশন করেন কে জি বি কনক, নীলা নিকি খান ও সৈয়দা তামান্না। কে জি বি কনকের ‘তুমি যে আমার কবিতা, আমার বাঁশির রাগিনী’ ও ‘ওগো তোমার আকাশ দুটি চোখে, আমি হয়ে গেছি তারা’ গান দুটি শ্রোতাদের অতীত স্মৃতিতে ফিরিয়ে নেয়।
বিভিন্ন গানের সাথে মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করেন শিশু শিল্পী প্রাপ্তি দেব সরকার। আবৃত্তি করেন ড. হাসনিন চৌধুরী। বাদ্যযন্ত্রে সঙ্গ দেন তানিম, হাসান ও মিজান তিন সহোদর।
বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন উপলক্ষে একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়, যেখানে কমিটিতে ছিলেন প্রশান্ত দত্ত পুরকায়স্থ, মেসবাহ উদ্দীন ইকো, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, এম কিউ হাসান, সৈয়দ জাফর ও মোস্তফা কামাল। নবনির্বাচিত সভাপতি সিরাজুল বাসিত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এম কিউ হাসান তাঁদেরকে নির্বাচিত করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আগামী দুই বছর সবার সহযোগিতায় সংগঠনকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। উপস্থিত সকলে দিনব্যাপী আনন্দঘন অনুষ্ঠান শেষে এক মনোরম অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘরে ফেরেন।



