দেশেই মরব, পালাব কোথায়: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৭:৪০ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: নৌপরিবহণ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘আমি কোথায় যাব। আমি এখানেই আছি, আমার পুরো ফ্যামিলি এখানে আছে। মরে গেলে এখানেই মরে যাব। পালাব কোথায়।’
চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার পর ‘জবাবদিহিতাবিহীন’ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা দেশ থেকে পালিয়ে যাবেন- আন্দোলনকারীদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নৌপরিবহণ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যাদের বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তারা আমার চাচাও না মামাও না। দেশ এগিয়ে যাক সেটাই আমি চাই। বিদেশিদের সঙ্গে চুক্তি, উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণসহ যা কিছু করা হচ্ছে তা দেশের স্বার্থেই করা হচ্ছে।
সোমবার চট্টগ্রাম বন্দরের বাস্তবায়নাধীন তিনটি প্রকল্পে টার্মিনাল ও ইয়ার্ডের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহণ উপদেষ্টা। পরিদর্শন করেন বন্দরের কয়েকটি শেড।
উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের অবস্থান ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন।
বর্তমানে সবচে আলোচিত বিষয় বর্ধিত ট্যারিফের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, যেহেতু বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে সেহেতু এখন এটা নিয়ে কথা বলতে চান না। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সেবাখাতে ৪১ শতাংশ বর্ধিত ট্যারিফ কার্যকর করেছে। ব্যবসায়ীদের দাবি ও আন্দোলনের মুখেও কোন কর্ণপাত না করায় ব্যবহারকারীরা উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। রোববার উচ্চ আদালত এক মাসের জন্য বর্ধিত মাশুল স্থগিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বাস্তবায়নাধীন পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে কনটেইনার ইয়ার্ডের নির্মাণকাজ, বঙ্গোপসাগরের উপকূলে হালিশহরে বে-টার্মিনাল এলাকায় নির্মিত পরিবহণ টার্মিনাল এবং তালতলায় নির্মিত কনটেইনার ইয়ার্ডের উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা। তিনি বন্দরের এক্স-ওয়াই শেড এবং কাস্টমস অকশন শেডও পরিদর্শন করেন।
এ সময় তার সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান ও সচিব মো. ওমর ফারুকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), লালদিয়ার চর এবং বে-টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব ইজারার ভিত্তিতে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এর প্রতিবাদে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন ও বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো।
দলের নেতারা অভিযোগ করছেন, বন্দরের স্থাপনা বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। বর্ধিত ট্যাক্স চাপিয়ে দিয়ে, বন্দরের স্থাপনা বিদেশীদের হাতে তুলে দিয়ে জবাবদিহিতাবিহীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা হয়তো পালিয়ে যাবেন। এর খেসারত দিতে হবে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে। এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা কথা বলেন।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, কিছু করলেই বলা হচ্ছে খালি চলে গেল, চলে গেল, আরে কী চলে গেল ভাই! গত ১৭ বছর যখন লুটপাট চলেছে তখন তো কথা বলেননি তারা। এখন সেটা বললে হয়তো আমার ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ হবে; যা করা হচ্ছে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো, দেশের উন্নয়নের জন্যই করা হচ্ছে। এক সময় আমরা হয়তো থাকব না। সরকারি সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে দেখা যাবে চট্টগ্রাম বন্দরের চেহারায় বদলে গেছে।
উপদেষ্টা সাখাওয়াত আরও বলেন, আমাদের একবিংশ শতাব্দীতে থাকতে হবে, আবার একবিংশ শতাব্দী থেকে বেরও হয়ে যেতে হবে। একসময় তো আমরা মোবাইল-টেলিফোন দেখিনি। এখন মোবাইল টেলিফোন আছে। আজকাল আবার মোবাইল টেলিফোনের বাইরে গিয়ে দেখছি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই)। চীনে আমি একটা পোর্ট দেখে আসছি, যেখানে পাঁচজন লোক পোর্ট চালাচ্ছে। আমি ওখানে ঢুকে মনে হলো যে আমি একটা ‘ঘোস্ট ’ ছবি দেখছি। কোনো মানুষ নেই, জন নেই তৈরি হচ্ছে-যাচ্ছে আর বের হয়ে যাচ্ছে। আবার সামনে বাধা পাচ্ছে, সরে যাচ্ছে। আমরা এই প্রযুক্তির মধ্যে থাকব নাকি এই প্রযুক্তির মধ্যে থাকব না?




