ভিটামিন ডি খাচ্ছেন তবু ঘাটতি পূরণ না হওয়ার কারণ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ নভেম্বর ২০২৫, ২:৩৯:৩৫ অপরাহ্ন
অনুপম স্বাস্থ্য ডেস্ক: ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মেটাতে ওষুধ খাচ্ছেন, দিনের নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যালোকের সংস্পর্শেও যাচ্ছেন, তবু এ ভিটামিনের অভাব মিটছে না।
এই সমস্যা এখন উপমহাদেশের প্রায় ঘরে ঘরে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-এর (আইসিএমআর) তরফে ২০২৪-এ এক সমীক্ষা প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা গিয়েছে, ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭৬ শতাংশই ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভোগেন। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকই নীচে। পুরুষদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ এবং মহিলাদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশের শরীরে এই সমস্যা রয়েছে। কিন্তু কারণ বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না অনেক ক্ষেত্রে। সূর্যালোক পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়ার পরেও, সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পরেও, ভিটামিন ডি-এর মাত্রা হ্রাস পাওয়ার আরও বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে। এমন কয়েকটি কারণ রয়েছে, যা নিয়ে সচরাচর কথা হয় না খুব বেশি।
অন্ত্রের (নাড়িভুঁড়ি) সমস্যা থাকলে যা হয়
ভিটামিন ডি চর্বিতে দ্রবণীয়। অর্থাৎ ভিটামিন ডি শোষণের জন্য সঠিক ভাবে চর্বি হজম করা এবং সুস্থ অন্ত্রের প্রয়োজন। সিলিয়াক ডিজ়িজ়, ক্রোন’স ডিজ়িজ়, এমনকি আইবিএসের মতো অবস্থার ক্ষেত্রে অন্ত্রে ঠিক ভাবে শোষিত হয় না ভিটামিন ডি। ‘পাবমেড’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দেখা গিয়েছে, পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার খেলেও অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগের কারণে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম হতে পারে। এমনকি সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবারও যদি অন্ত্র ভাল ভাবে হজম না করতে পারে, তা হলে এই ভিটামিনের মাত্রা বাড়ে না। কোন খাবার খাচ্ছেন, তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল, সেই খাবার ঠিক ভাবে শরীরে শোষিত হচ্ছে কি না।
নির্দিষ্ট ওষুধ ভিটামিন ডি-র কার্যকলাপ ব্যাহত করতে পারে
কর্টিকোস্টেরয়েড (অ্যাজ়মা বা আর্থ্রাইটিসে ব্যবহৃত) ক্যালসিয়াম শোষণ কমাতে পারে এবং ভিটামিন ডি-র কার্যকলাপকে ব্যাহত করতে পারে। ফেনাইটোইন বা ফেনোবারবিটালের মতো মৃগীর ওষুধ লিভারে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। ওজন কমানোর ওষুধ, যা চর্বির শোষণ কমায়, তা-ও ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। গবেষণায় জানা যায়, এই ওষুধগুলির দীর্ঘ ব্যবহার ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির কারণ হতে পারে।
ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট কাজ না করার আরও কারণ
ডোজ ভুল হলে উপকার মিলবে না
অনেকেই মনে করেন যেকোনো মাত্রায় ভিটামিন ডি খেলেই হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বয়স, ওজন, অবস্থান ও স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে ডোজ পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারাণভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৬০০ থেকে ৮০০ আইইউ যথেষ্ট বলা হলেও অনেক সময় ১০০০ থেকে ২০০০ আইইউ প্রয়োজন হয়। রক্তে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা না দেখে কেবল খাওয়া যথেষ্ট নয়।
জিনগত কারণ
কখনো কখনো জেনেটিক কারণেও ভিটামিন ডি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
আমাদের শরীর কিভাবে ভিটামিন ডি ব্যবহার করবে তা নির্ধারণ করে ভিডিআর নামক একটি জিন। কিছু মানুষ এই জিনের পরিবর্তনের কারণে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট বা রোদ পেলেও উপকার পান না।
এ ছাড়া CYP2R1 ও CYP24A1 নামক জিনে ভিন্নতা থাকলে ভিটামিন ডি শরীরে সক্রিয় রূপে রূপান্তরিত হতে পারে না।
পর্যাপ্ত রোদ না পাওয়া
ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস সূর্যের আলো। গবেষণায় দেখা গেছে, রোদের মাধ্যমে উৎপন্ন ভিটামিন ডি শরীরের জন্য বেশি সহজলভ্য এবং কার্যকর। তাই সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পাশাপাশি রোদে কিছুটা সময় কাটানো জরুরি।
পূর্বের স্বাস্থ্যগত সমস্যা
কিডনি বা লিভারের রোগ থাকলে শরীর ভিটামিন ডি-কে সক্রিয় রূপে রূপান্তর করতে পারে না। তাই দৈনিক সাপ্লিমেন্ট নেওয়া সত্ত্বেও রক্তে পর্যাপ্ত মাত্রায় ভিটামিন ডি পাওয়া যায় না।
অতিরিক্ত ওজনও ভিটামিন ডি সঠিকভাবে কাজ করতে বাধা দেয়। কারণ এই ভিটামিন চর্বিতে জমে থাকে এবং শরীর তা ব্যবহার করতে পারে না। ফলে মোটা ব্যক্তিদের বেশি ডোজ দরকার হয়।
ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অবাস্তব প্রত্যাশা
অনেকে ভিটামিন ডি-কে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার অলৌকিক ওষুধ মনে করেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটি হাড় ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য কার্যকর। তবে ক্যানসার, হৃদরোগ বা মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। অনেকে অবৈজ্ঞানিক কিছু ভিত্তির ওপর ধারণা করে এই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন। কিন্তু যখন তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয় না তখন তারা হতাশ হয়ে পড়েন।
অনেক সময় ক্লান্তি, পেশি দুর্বলতা বা ব্যথা ভিটামিন ডি-র ঘাটতির কারণে হয়েছে মনে করে সাপ্লিমেন্ট খাওয়া শুরু করেন, কিন্তু সমস্যাগুলো অন্য কারণে হতে পারে। তাই এগুলোর দিকে মন না দিয়ে মূল বিষয়ের দিকে ফোকাস করা উচিত।
সূত্র: ম্যাক্স হেলথকেয়ার, আনন্দবাজারপত্রিকা, মেডিকভার হসপিটাল, কেয়ার হসপিটাল




