এআইয়ের পর এজিআই: নির্ভুল রোগনির্ণয় সম্ভব হবে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ৯:৫১:৩৬ অপরাহ্ন
সারওয়ার চৌধুরী
এআই ও এজিআই নিয়ে মানুষের কল্পনা শুরু হয়েছিল আসলে বিজ্ঞানের আগে, সাহিত্যেই। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে আইজ্যাক আসিমভ তাঁর বিখ্যাত “I, Robot” গল্পমালায় প্রথম রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিকতা নিয়ে আলোচনা তোলেন। তারও আগে, উনিশ শতকের শুরুতে মেরি শেলি তাঁর উপন্যাস “Frankenstein”-এ এক বিজ্ঞানীর হাতে সৃষ্ট কৃত্রিম জীবের মাধ্যমে “মানুষ-নির্মিত বুদ্ধি”র ভয়াবহ সম্ভাবনা দেখিয়েছিলেন। এরপর আর্থার সি. ক্লার্কের “2001: A Space Odyssey”-এর HAL 9000 কম্পিউটার, ফিলিপ কে. ডিক-এর “Do Androids Dream of Electric Sheep?” (যা পরবর্তীতে Blade Runner নামে চলচ্চিত্র হয়), এমনকি স্ট্যানিস্লাভ লেম-এর “Solaris”—সবই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ, আত্মসচেতনতা ও নৈতিক সীমানা নিয়ে গভীর দার্শনিক প্রশ্ন তোলে। এই লেখকরা তাঁদের সময়ের বহু আগে কল্পনায় যে এআই বা এজিআই-র ভবিষ্যৎ এঁকেছিলেন, আজ প্রযুক্তি সেই স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে শুরু করেছে।
বিশ্বজুড়ে এখন যে প্রযুক্তি বিপ্লবের ঢেউ চলছে, তার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই (Artificial Intelligence)। লেখালেখি থেকে শুরু করে ছবি আঁকা, কোডিং থেকে তথ্য বিশ্লেষণ—সব ক্ষেত্রেই এআই আজ অভাবনীয় সাফল্য দেখাচ্ছে। কিন্তু প্রযুক্তিবিদদের মতে, এটি কেবল শুরু। কারণ এর পর আসছে আরও বৃহৎ ও বিস্ময়কর এক অধ্যায়—এজিআই (Artificial General Intelligence)।
এআই বনাম এজিআই
বর্তমানের এআই আসলে “ন্যারো এআই” বা সীমিত ক্ষমতার বুদ্ধিমত্তা। এটি নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে পারে—যেমন ভাষা অনুবাদ, ছবি শনাক্তকরণ, বা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। কিন্তু এটি নিজের চিন্তাভাবনা বা বোধশক্তি দিয়ে নতুন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে পারে না।
অন্যদিকে, এজিআই হবে এমন এক প্রযুক্তি, যা মানুষের মতোই চিন্তা, শেখা, যুক্তি বিশ্লেষণ ও সৃজনশীল সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এটি কোনো নির্দিষ্ট কাজেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং মানুষের বুদ্ধিমত্তার পূর্ণ অনুকরণ করতে পারবে।
আরও পড়ুন—
♦ ভবিষ্যতের চাকরিতে উচ্চ ডিগ্রি গুরুত্ব পাবে না
♦ ই=এমসি স্কয়ার কী বোঝায়? কেন এটি অসম্পূর্ণ বলছেন বিজ্ঞানীরা
সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত
বিশেষজ্ঞদের মতে, এজিআই বাস্তবে এলে মানবসভ্যতা প্রবেশ করবে এক অমিত সম্ভাবনার যুগে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন আবিষ্কার ও নির্ভুল রোগনির্ণয় সম্ভব হবে।
শিক্ষায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য ব্যক্তিগতভাবে তৈরি হবে পাঠ্যপদ্ধতি।
কৃষি ও শিল্প উৎপাদনে বাড়বে দক্ষতা ও টেকসইতা।
বিজ্ঞান, সাহিত্য ও কলা—সব ক্ষেত্রেই উন্মুক্ত হবে নতুন সৃষ্টির দিগন্ত।
এক কথায়, এজিআই হতে পারে মানব মস্তিষ্কের ডিজিটাল সম্প্রসারণ।
সতর্কতার প্রয়োজন
তবে এর বিপরীত দিকও আছে। যদি এজিআই ভুল হাতে পড়ে বা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিকশিত হয়, তাহলে তা চাকরির বাজারে বড় ধাক্কা দিতে পারে, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার হুমকি তৈরি করতে পারে, এমনকি মানব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই বিজ্ঞানীরা এখনই জোর দিচ্ছেন নৈতিক, নিরাপদ ও মানবকেন্দ্রিক এজিআই বিকাশের ওপর।
সারকথা
এজিআই কেবল প্রযুক্তির আরেকটি ধাপ নয়; এটি মানব সভ্যতার এক নতুন অধ্যায়। একদিকে এর সম্ভাবনা সীমাহীন, অন্যদিকে এর ঝুঁকিও অস্বীকার করা যায় না। তাই এজিআই যেন মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
সারওয়ার চৌধুরী:কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, নির্বাহী সম্পাদক—অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর




