ট্রাম্পের ‘গাজা পরিকল্পনা’ যেসব কারণে ব্যর্থ হবে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১:২৯:১৯ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ‘গাজা পরিকল্পনা’ নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি, পুনর্গঠন ও একটি অস্থায়ী প্রশাসন গঠনের মাধ্যমে অঞ্চলটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশ্লেষক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
নিচে বিশ্লেষকরা যে প্রধান কারণগুলোকে ব্যর্থতার সম্ভাব্য উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তা তুলে ধরা হলো—
পারস্পরিক অবিশ্বাস
গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস এখনো গভীর। অতীতে বেশ কয়েকটি শান্তিচুক্তি ব্যর্থ হয়েছে পারস্পরিক আস্থার ঘাটতির কারণে। ট্রাম্পের পরিকল্পনাও সেই পুরোনো সমস্যার বাইরে কিছু দেখাতে পারেনি।
একপাক্ষিক শর্ত
পরিকল্পনায় হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ ও রাজনৈতিক প্রভাব ত্যাগের আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু গাজার জনগণ বা রাজনৈতিক দলগুলোর অধিকার ও ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট রূপরেখা নেই। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইসরায়েলকেন্দ্রিক একটি প্রস্তাব, যা ফিলিস্তিনিদের আস্থাভাজন হতে পারবে না।
স্পষ্ট রোডম্যাপের অভাব
কোন দেশ বা সংস্থা গাজায় ‘অস্থায়ী প্রশাসন’ পরিচালনা করবে, নিরাপত্তা বজায় রাখবে, কিংবা পুনর্গঠন কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করবে— এসব বিষয়ে পরিকল্পনায় কোনো স্পষ্টতা নেই। সময়সীমা ও বাস্তবায়ন কাঠামোও অনির্দিষ্ট।
হামাসের অংশগ্রহণহীনতা
হামাসকে পুরো প্রক্রিয়া থেকে কার্যত বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গাজায় হামাসের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব গভীর। তাদের বাদ রেখে কোনো রাজনৈতিক সমাধান দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা আনতে পারবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা
ইজিপ্ট, জর্ডান ও সৌদি আরবসহ অনেক আঞ্চলিক দেশ এখনো এই পরিকল্পনার প্রতি ইতিবাচক অবস্থান নেয়নি। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও পরিকল্পনাটির মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনভিত্তিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট
ইসরায়েলের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই পরিকল্পনা নিয়ে গভীর মতভেদ রয়েছে। অনেক রক্ষণশীল রাজনীতিক গাজায় সম্পূর্ণ সামরিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চান, যা ট্রাম্পের শান্তি-চেষ্টার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে ইসরায়েলি অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই এই পরিকল্পনার বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা
গাজা পুনর্গঠনের জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু কোন দেশ বা সংস্থা এই অর্থায়নের দায়িত্ব নেবে, তা এখনো অনির্ধারিত। দাতা দেশগুলোর রাজনৈতিক শর্ত ও মতবিরোধও পরিকল্পনাটিকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
পরিকল্পনার কাঠামোগত ফাঁকফোকর
‘শান্তি পরিকল্পনা’ নামে প্রকাশিত এই দলিল আশ্চর্যজনকভাবে অস্পষ্ট ও অসম্পূর্ণ।কোন কর্তৃপক্ষ কীভাবে ও কখন কোন ধাপ বাস্তবায়ন করবে—এর কোনো সুস্পষ্ট সময়সীমা নেই।
‘বোর্ড অব পিস’ নামের যে কর্তৃপক্ষের কথা বলা হয়েছে, সেটি ট্রাম্পের নেতৃত্বে চলবে কি? নাকি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে?
জাতিসংঘ তো গাজায় ইসরাইলি হামলাকে গণহত্যা ঘোষণা করেছে—যা ট্রাম্প প্রশাসন কখনোই স্বীকার করেনি।
তাহলে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী (আইএসএফ) কাকে রিপোর্ট করবে—ট্রাম্পকে নাকি জাতিসংঘকে?
এটি শুধুই প্রশাসনিক প্রশ্ন নয়, বরং ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ সম্পর্কিত মৌলিক ইস্যু।
এই দলিলের ভাষাগত অস্পষ্টতা এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে ইসরাইল একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, যুদ্ধবিরতির শর্ত পূরণ হয়েছে কি না। ফলে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো বা বাতিল করা তাদের একার হাতে থাকবে।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো— গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের পরিবর্তে দলিলে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী সেখানে দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা বজায় রাখবে—অর্থাৎ এক দখলদারিত্বের পরিবর্তে আরেক দখলদারিত্ব।
এমনকি গালফ দেশগুলোকে এই বাহিনীর অর্থায়নের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে—যা ইসরাইলকে পরোক্ষভাবে দায়মুক্ত করবে। যদিও বাস্তবে গাজার নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলই ধরে রাখবে।
একটি রাজনৈতিক প্রদর্শনীর বেশি কিছু নয়
সব মিলিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের ‘গাজা পরিকল্পনা’ মূলত একটি রাজনৈতিক প্রদর্শনীর বেশি কিছু নয়। এতে যুদ্ধবিরতি ও শান্তির আহ্বান থাকলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে মৌলিক আস্থা, ভারসাম্য ও কাঠামোগত স্পষ্টতা প্রয়োজন— তা অনুপস্থিত।
হামাসকে বাদ দিয়ে, আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সমর্থন ছাড়া এবং ইসরায়েলি রাজনীতির অন্তর্দ্বন্দ্বের মধ্যে এই পরিকল্পনা টেকসই হওয়া কঠিন বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
আপনি কি চান আমি এই প্রতিবেদনটির জন্য একটি শিরোনাম ও উপশিরোনামসহ SEO-ফ্রেন্ডলি নিউজ ভার্সন (ওয়েবপোর্টালের জন্য উপযুক্ত মেটা টাইটেল + কীওয়ার্ডসহ) তৈরি করে দিই? এতে সার্চ র্যাংকিং ও পাঠক আকর্ষণ বাড়বে।




