গণভোট হবে সংসদ নির্বাচনের দিন, সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫৩:৩০ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: দেশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের ব্যাপারে ঐকমত্য হলেও এই ভোটের সময় নিয়ে ঐকমত্যে আসতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। কোনো কোনো দল জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিন আয়োজনের পক্ষে। আবার কোনো কোনো দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই এই ভোট আয়োজনের পক্ষে রয়েছে।
দলগুলোর বিপরীতমুখী এমন অবস্থানে বিশেষজ্ঞ মতামত অনুযায়ী গণভোটের সময় নির্ধারণে সরকারের ওপর ক্ষমতা ছেড়ে দিচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বিশেষত, আর্থিক এবং প্রস্তুতির কথা বিবেচনায় নিয়ে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর এ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার করা হবে। সরকারের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র এমন আভাস দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণভোট একটি জাতীয় বিষয়। এ ভোট আয়োজনে খরচও অনেক। এ ছাড়া এ ভোটের প্রশ্ন এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের পুরো মনোযোগ ও প্রস্তুতি জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরেই। তার আগে জাতীয় নির্বাচনের মতো আরেকটি ভোট আয়োজন করতে গেলে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনও ঘোষিত রোডম্যাপ থেকে পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া একই দিনে ভোট হলে দুটি পৃথক নির্বাচনের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা এড়ানো সম্ভব হবে। সেজন্য ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব করা ক্ষমতাবলে একই দিনে জাতীয় ও গণভোটের আয়োজন করতে চায় সরকার। সেজন্য প্রস্তাবনাও তৈরি করা হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত জানানোর পর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে এ ব্যাপারে পরামর্শ দেবে অন্তর্বর্তী সরকার।
সূত্র আরও জানায়, একই দিনে গণভোট করার ব্যাপারে এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে সবুজ সংকেত পেয়েছে সরকার। নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং খরচের বিষয়টি মাথায় রেখেই সরকারকে এমন সংকেত দিয়েছে কমিশন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের পরিকল্পনাটি একদিকে যেমন সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের সুযোগ দেবে, তেমনি নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের ওপর বিপুল চাপ তৈরি করবে। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে তার সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং দুটি ভোট আয়োজন সম্পর্কে ভোটারদের বিভ্রান্তি দূর করতে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। সামগ্রিকভাবে এই দ্বৈত ভোট আয়োজন সরকারের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা হতে পারে, যার সফল বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও জনগণের পূর্ণ সহযোগিতা প্রয়োজন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পক্ষের ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি হয়েছে, তাতে সংবিধান ও রাষ্ট্র সংস্কারের একাধিক প্রস্তাব রয়েছে। এই প্রস্তাবগুলো কার্যকর করার আগে জনগণের সরাসরি মতামত নেওয়ার জন্য গণভোটের আয়োজন করা অপরিহার্য বলে মনে করা হচ্ছে। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী,
গণভোটের মূল প্রশ্নটি হবে জুলাই সনদ গ্রহণ করা বা না করার বিষয়ে, যার উত্তর জনগণ ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-এর মাধ্যমে দেবে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে অন্যতম আলোচিত এই গণভোট জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একই দিনে নাকি তার আগেই করা হবে, তা নিয়ে দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি রয়েছে।
বিএনপিসহ বেশ কটি রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের পক্ষে রয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি জাতীয় নির্বাচনের আগেই এই ভোট আয়োজনের ব্যাপারে অনড়। গত বুধবার দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বশেষ সম্মিলিত বৈঠকেও এ বিষয়ে সুরাহা না হওয়ায় বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে গণভোটের দিনক্ষণ ঠিক করতে সরকারের ওপর ক্ষমতা অর্পণ করার কথা জানায় ঐকমত্য কমিশন। এর পরও অনানুষ্ঠানিকভাবে দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সমঝোতার চেষ্টা অব্যাহত রাখে কমিশন।

আরও পড়ুন—
১৮৫ পোশাক কারখানা বন্ধ, বেকার হাজারো শ্রমিক
কমিশনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশনের কার্যালয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদের সঙ্গে এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। পরে বিকেলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাজিনের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দুই দলের নেতারাই জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের পক্ষে নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। বৈঠকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, গণভোটের বিষয়ে দলের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। দিনক্ষণ নিয়ে নতুন কোনো ভাবনা তাদের নেই।
অন্যদিকে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাজিন বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে জুলাই সনদ গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্বাচনের আগেই গণভোট হওয়া উচিত।
সূত্র আরও জানায়, দুই দলের সঙ্গে বৈঠকের পর ওই দিন সন্ধ্যায়ই প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সেখানে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট আয়োজনের সময়সূচি নিয়েও আলোচনা হয়। সেখানে দলগুলোর বিভক্তির মধ্যেই সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে করার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান, অর্থাৎ বাহাত্তরের সংবিধানে গণভোটের বিধান ছিল না। ১৯৭৯ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে গণভোটের বিধান যুক্ত করেন। যদিও আওয়ামী লীগ আমলে ২০১১ সালে সংবিধান থেকে গণভোটের বিধান বাতিল করে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ পতনের পর পঞ্চদশ সংশোধনী মামলার পরে আদালত পুনরায় গণভোটের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে আনেন। এ পর্যন্ত দেশে মোট তিনটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।




