সিলেট: কানাইঘাটের লোভাছড়া থেকে অবাধে পাথর লুট হচ্ছে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২:৫৮:৩৮ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি: সিলেটের কনাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া এলাকা থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন ও নৌযানে পরিবহন করা হচ্ছে।
নদীতে বড় বড় নৌযান সারিবদ্ধভাবে নোঙর করা থাকে, যা স্থানীয়ভাবে ‘বাল্কহেড’ নামে পরিচিত। শত শত শ্রমিক নদীর পাড়ে জমা করা পাথর টুকরিতে ভরে এই নৌযানে ওঠাচ্ছেন। নদীতে তখন খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) ব্যবহার করে পানির নিচ থেকে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছিল। পাথর ভাঙার কাজও চলছিল ক্রাশার মেশিনে, যেখানে ৩০ থেকে ৩৫টি মেশিনে পাথর টুকরা করা হচ্ছিল।
নদীর দুই পাড়ে অন্তত ১০০ বাল্কহেডে পাথর ওঠানো হচ্ছিল। লোভা নদীর বাংলাদেশ অংশের শুরুতে একটি পাথর কোয়ারি রয়েছে, যেখানে ২০২০ পর্যন্ত পাথর উত্তোলন করা যেত। এরপর সরকার কোয়ারি ইজারা বন্ধ করে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, নিলামে বিক্রি করা পাথরের সঙ্গে এখন অবৈধভাবে নতুন পাথর মেশানো হচ্ছে।
স্থানীয়রা দাবি করেছেন, লোভাছড়ার পাথর লুটে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদেরও জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকজন নেতা-কার্যকর্তা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। স্থানীয় ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা সরাসরি পাথর উত্তোলন দেখাশোনা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিলামে পাথর কেনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পিয়াস এন্টারপ্রাইজের মালিক কামরুল হাসান চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘নির্ধারিত ৪৫ দিনের মধ্যে এত বড় পরিমাণ পাথর সরানো সম্ভব হয়নি। তাই আদালতের অনুমতি অনুযায়ী কাজ চালানো হচ্ছে। তবে তিনি কোনো অন্যায্যভাবে পাথর স্থানান্তর করছেন না।’ তিনি আরও বলেন, পাথরের মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ অপসারণ সম্ভব হয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নিলামপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পাথর অপসারণে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে, তবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়নি।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগের সমন্বয়কারী শাহ সাহেদা আখতার বলেন, ‘নিলামের বৈধ কাগজটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একটি চক্র কোয়ারি ও আশপাশের এলাকায় নির্বিচার লুটপাট চালাচ্ছে। এতে নদীর পরিবেশও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতের অন্ধকারে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে পাথর সরানো হয়। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় প্রশাসনের সরাসরি উপস্থিতি কম থাকে। এছাড়া স্থানীয়দের মধ্যে অভিযোগ রয়েছে, নিলামের কাগজকে ঢাল করে কিছু নেতা-কর্মী রাজনৈতিক দিক থেকে পাথর লুটে আছেন।
সিলেট জেলা প্রশাসনের যৌথ বাহিনী ও টাস্কফোর্স অভিযান করছে। শুক্রবার পর্যন্ত সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট থেকে প্রায় ৩৯ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানের সময় দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে অভিযানের মধ্যেও স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই পাথর স্থানান্তর অব্যাহত রয়েছে।
এই ঘটনার ফলে নদীর পরিবেশ ও স্থানীয় জনজীবনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ছে। স্থানীয়দের উদ্বেগ, প্রশাসনের সীমিত উপস্থিতি এবং রাজনৈতিক নেতাদের যুক্তি এই সমস্যা আরও জটিল করে তুলেছে। (সূত্র: প্রথম আলো)




