নির্বাচন বৈধ না হলে আয়োজনের কোনো মানে হয় না: ড. ইউনূস
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ৯:২৪:৫৩ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: নির্বাচন বৈধ না হলে আয়োজনের কোনো মানে হয় না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় সরকারি সফরে গিয়ে চ্যানেল নিউজ এশিয়াকে (সিএনএ) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমটিকে ড. ইউনূস বলেছেন, নির্বাচন যদি বৈধ না হয় তাহলে তা আয়োজনের কোনো মানে হয় না। এজন্য আমি নিশ্চিত করবো, সবার কাছে যেন গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন এবং উপভোগ্য একটি নির্বাচন হয়।
তিনি বলেন, আমার কাজ হলে গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন এবং উপভোগ্য নির্বাচন করা। আমরা আমাদের নির্ধারিত এসব লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি যাচ্ছি। আমাদের অনেক কিছু সংস্কার করতে হবে। কারণ আমাদের যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে সেটি কারচুপি এবং অপব্যবহার করা হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে কথা বলেছি। তাকে আহ্বান জানিয়েছি, যেন হাসিনাকে ভারতে চুপ রাখা হয়। মোদি আমাকে জানায়, সামাজিক মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ তারা করতে পারেন না। আমরা হাসিনাকে ভারত থেকে আনার জন্য যুদ্ধ করব না। আমি মোদিকে বলেছি, আপনি হাসিনাকে রাখতে পারেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আমাদের বিচার চলবে।
ড. ইউনূস বলেন, হাসিনাকে বাংলাদেশ অস্থিতিশীল করার সুযোগ দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশে এখনো তার অনেক সমর্থক রয়েছে।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অবশ্যই আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে। পাকিস্তান, চীন ও ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই। আমরা কখনও বলিনি, আমরা ভালো সম্পর্ক রাখতে চাই না। ভারত চাইলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। চাইলে যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারে। বিষয়টি হলো সুযোগের ব্যবহার। শুধু চীনকে যে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। নেপাল এবং ভুটানকেও অর্থনৈতিক অঞ্চলে আনতে পারি। ভারতের সেভেন সিস্টার্সও এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে থাকতে পারে। বঙ্গোপসাগরের মাধ্যমে আমরা একই সুবিধা ভাগ করে নিতে পারি।
কূটনৈতিক পরিবর্তন
হাসিনার আমলে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। কিন্তু নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ঢাকা তার আঞ্চলিক জোটগুলো পুনর্গঠন করছে এবং ভারতের ওপর নির্ভরতা কমাচ্ছে।
মার্চে ড. ইউনূস চীনে ঐতিহাসিক সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রবেশদ্বার হিসেবে তুলে ধরেন।
তিনি সরকারের এই পদক্ষেপের সাফাই দিয়ে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিকভাবে পরিচালিত এবং যে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী, বাংলাদেশ তাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আছে, ভারতের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক চাই। এটি বিনিয়োগের সুযোগের বিষয়, চীনের জন্য কোনো বিশেষ সুবিধা নয়। একই সুযোগ ভারত বা অন্য কেউও নিতে পারে। এটা শুধু ব্যবসায় ন্যায্য প্রতিযোগিতা।’
রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানো
নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. ইউনূস, যিনি বিপ্লবের পর এই ভূমিকায় আসেন, জানিয়েছেন যে তিনি প্রথমে কার্যত সরকারপ্রধান হওয়ার দায়িত্ব নিতে চাননি।
তিনি বলেন, ‘(ছাত্রনেতারা) আমাকে অনুরোধ করেছিল যে এত রক্ত ঝরেছে… সেটা আমাকে নাড়া দিয়েছিল… তারা এত ত্যাগ করেছে, আমাকেও কিছু করতে হবে। তাই আমি দায়িত্ব নিয়েছি।’
৮৫ বছর বয়সী এই নেতা জানিয়েছেন, নির্বাচনের পর তিনি সরকারে থাকার পরিকল্পনা করছেন না। রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের মধ্যে ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করেছেন যে তার নেতৃত্ব একটি স্থায়ী উত্তরাধিকার রেখে যাবে।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব, এখন থেকে বাংলাদেশ সঠিক পথে চলবে, আর বিপথগামী হবে না। আমাদের ভোটাররা গত ১৫ বছরে ভোট দিতে পারেনি। তরুণরা তাদের ভোট ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ব্যালট বাক্সে ঢালবে। আমি চাই একটি ভালো সরকার আসুক, যা গণতান্ত্রিক নীতিমালা মেনে চলবে।’




