যুক্তরাজ্য: মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ৯:১৭:২৫ অপরাহ্ন
লন্ডন অফিস: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে দ্বিচারতার (হিপোক্রিসি) অভিযোগে সমালোচনার মুখে ব্রিটেনের গৃহায়ণ, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারির (উপমন্ত্রী) পদ ছাড়লেন। শুক্রবার ৮ আগস্ট নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পদত্যাগপত্রের একটি ছবি প্রকাশ করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। যুক্তরাজ্যের গৃহায়ণ, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারির (উপমন্ত্রী) ছিলেন তিনি। ডাউনিং স্ট্রিটও তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
তিনি লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন। ২০১০ সালে রুশনারা ছিলেন প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি। বাংলাদেশে রুশনারার পৈতৃক নিবাস সিলেটের বিশ্বনাথের বুরকি গ্রামে। রাজনীতি, অর্থনীতি ও দর্শন পড়েছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে। তিনি পরামর্শক সংস্থা ইয়ং ফাউন্ডেশনের সহযোগী পরিচালক। রুশনারার জন্ম ১৯৭৫ সালে সিলেটে। মাত্র সাত বছর বয়সে মা-বাবার সঙ্গে চলে যান লন্ডনে।
পূর্ব লন্ডনে নিজের মালিকানাধীন একটি বাড়ির ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেন রুশনারা সম্প্রতি। তিনি বলেছিলেন, বাড়িটি তিনি বিক্রি করতে চান। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে তিনি ৭০০ পাউন্ড ভাড়া বাড়িয়ে আবারও বাড়িটি ভাড়া দেওয়ার উদ্যোগ নেন।
অথচ বর্তমানে পার্লামেন্টের বিবেচনাধীন ‘ভাড়াটিয়াদের অধিকার বিল’-এ তিনিই বাড়িওয়ালাদের এ ধরনের আচরণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রেখেছেন।
ফলে বিষয়টি নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয় এবং তার বিরুদ্ধে ভণ্ডামির অভিযোগ ওঠে। গৃহহীনদের সহায়তাকারী বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা ও বিরোধী দলের রাজনীতিকরা তার পদত্যাগের দাবি তোলে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে রুশনারা লিখেছেন, “আমি সবসময় আইন মেনেই চলেছি। তবে এখন আমি পদে থাকলে সরকারের উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরে যেতে পারে।”
রুশনারার বাড়ি নিয়ে ওই ঘটনা প্রথম প্রকাশ করে আইপেপার। বাড়িটির এক সাবেক ভাড়াটিয়ার বরাতে পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত নভেম্বরে চুক্তি নবায়ন করা হবে না জানিয়ে তাদের চার মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।এরপর চারজন ভাড়াটিয়া বাড়িটি ছেড়ে দিলে সেটি আগের চেয়ে ৭০০ পাউন্ড বেশি ভাড়ায় পুনরায় তালিকাভুক্ত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো পদত্যাগপত্রে রুশনারা লিখেছেন, “ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমি পদত্যাগ করছি। আমি দায়িত্ব পালনে আন্তরিক থেকেছি এবং আমার কাজের নথিই তার প্রমাণ।
“তবে এখন এটা স্পষ্ট যে, মন্ত্রিত্বে থাকলে তা সরকারের কাজের প্রতি মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিচ্ছি।” রুশনারার পদত্যাগের পর প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এক বিবৃতিতে তার কাজের প্রশংসা করে বলেন, “তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।”
স্টারমার বলেন, গৃহহীনদের নিয়ে পুরনো আইন বাতিল করার ক্ষেত্রে রুশনারার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পার্লামেন্টে থেকে রুশনারা তার নির্বাচনি এলাকা বেথনাল গ্রিন ও স্টেপনির মানুষের কল্যাণে কাজ চালিয়ে যাবেন।
রুশনারার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বিবিসিকে বলেছেন, ওই বাড়ির ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে রুশনারার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। বিক্রি হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা চাইলে থাকতে পারতেন, কিন্তু নিজেরাই চলে যান। বাড়িটির দাম ২০২৪ সালের নভেম্বরে ৯ লাখ ১৪ হাজার ৯৯৫ পাউন্ড চাওয়া হয়েছিল, কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে তা ২০ হাজার পাউন্ড কমিয়ে দেওয়া হয়। বিক্রি না হওয়ায় পরে তা আবারও ভাড়ার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়।
বিবিসি লিখেছে, ‘ভাড়াটিয়াদের অধিকার বিল’ এখন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এ আইনে বাড়ি বিক্রির কথা বলে ভাড়াটিয়াকে সরানোর পর ছয় মাসের মধ্যে সেই বাড়ি আবার ভাড়া দেওয়া নিষিদ্ধ করা হবে। (The government’s Renters’ Rights Bill is in its final stages in Parliament, and will ban landlords re-listing a property for rent, if they have ended a tenancy in order to sell, for six months.)
আইনটি পাস হলে ভাড়াটিয়াদের অন্তত চার মাস আগে নোটিস দিতে হবে বাড়িওয়ালাদের। তবে এই নিয়ম আগামী বছরের আগে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। লন্ডন রেন্টারস ইউনিয়নের মুখপাত্র সিয়ান স্মিথ বলেন, “রুশনারার কার্যকলাপ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। তিনি যে প্রস্তাবিত আইনের সঙ্গে সরাসরি স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন, তা স্পষ্ট। তাকে পদত্যাগ করতেই হত।”
কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান কেভিন হলিনরেক বলেন, “রুশনারা আলী যে মাত্রার দ্বিমুখিতা দেখিয়েছেন, তা অভাবনীয়। তার পদত্যাগই যুক্তিযুক্ত।” তিনি আরও বলেন, “কিয়ার স্টারমার সরকারের স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা দেখছি এক স্বার্থপর, দ্বিমুখী সরকার।”
লিবারেল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “যখন রাজনীতিবিদদের নিয়ে সাধারণ মানুষের হতাশা দিন দিন বাড়ছে, তখন তার এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ আরও হতাশাজনক।”
২০১০ সালে লেবার পার্টির মনোনয়নে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি হওয়ার গৌরব অর্জন করেন রুশনারা। গতবছরের নির্বাচনে তিনি টানা পঞ্চমবারের মত পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।




