নিয়মিত চিপস খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে: গবেষণা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ৭:৪৫:২৪ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: আলুপ্রেমীদের জন্য সুখবর ও দুঃসংবাদ—দুটোই রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ভাজা আলু জাতীয় খাবার, বিশেষ করে চিপস বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাওয়ার অভ্যাস টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে পারে। তবে সেদ্ধ, বেক বা ম্যাশ করে খাওয়া আলু তুলনামূলকভাবে অনেক নিরাপদ।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, সপ্তাহে তিনবার ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। আর যদি কেউ সপ্তাহে পাঁচবার এই খাবার গ্রহণ করেন, তাহলে ঝুঁকি বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ শতাংশে।
এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. সৈয়দ মোহাম্মদ মুসাভী-র নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল। ১৯৮৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২,০৫,০০০ মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মীর খাদ্যাভ্যাস পর্যবেক্ষণ করে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিশ্বব্যাপী চাল ও গমের পর আলু তৃতীয় সর্বাধিক খাওয়া খাদ্যশস্য। যুক্তরাজ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রায় ৫.৮ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশ টাইপ ২ ডায়াবেটিসে ভুগছেন, যা প্রধানত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।
গবেষণার তথ্য বলছে, বেক, সেদ্ধ বা ম্যাশ করা আলু খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে মাত্র ৫ শতাংশ। গবেষকেরা জানান, আলুর উচ্চ স্টার্চ উপাদান, উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, এবং ভাজার সময় পুষ্টিগুণ হ্রাস পাওয়া এসব কারণে ভাজা আলু স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছে, আলুর পরিবর্তে সাদা চাল বেছে নেওয়াও বুদ্ধিমানের কাজ নয়, কারণ সেটিও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
অন্যদিকে, আলুর বদলে যদি সম্পূর্ণ শস্য (whole grains) খাওয়া হয়, তবে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৮ শতাংশ কমে আসে। আর চিপসের পরিবর্তে যদি এসব শস্য জাতীয় খাবার খাওয়া হয়, তবে ঝুঁকি কমে যায় ১৯ শতাংশ পর্যন্ত।
কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ ড. কাঊথার হাশেম বলেন,
“আলু একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হতে পারে, তবে রান্নার পদ্ধতিই এর স্বাস্থ্যগুণ নির্ধারণ করে। সেদ্ধ, বেক বা ম্যাশ করা আলু প্রাকৃতিকভাবে কম চর্বিযুক্ত এবং এতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন সি ও পটাসিয়াম। তবে যখন আলু ভেজে চিপস বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানানো হয়, বিশেষ করে লবণ ও অতিরিক্ত চর্বি যোগ করে, তখন তা ওজন বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।”
তবে গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছে, আলুর পরিবর্তে সাদা চাল বেছে নেওয়াও বুদ্ধিমানের কাজ নয়, কারণ সেটিও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
ড. হাশেম আরও বলেন,
“এই গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়: আলু খান, তবে চিপসকে যেন দৈনন্দিন খাদ্যের অংশ করা না হয়। সম্ভব হলে ব্রাউন রাইস, বালগার গম, হোলমিল পাস্তা বা খোসাসহ মিষ্টি আলু খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, যা দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক।”
তবে গবেষকরা এও জানান যে, এটি একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা, অর্থাৎ এটি চিপস খাওয়া ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মধ্যে সরাসরি কারণ ও ফলাফলের সম্পর্ক প্রমাণ করে না।
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে ফুড স্ট্যান্ডার্ডস এজেন্সি এবং স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা বিভাগ কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।




