ড. মোহাম্মদ ইউনূস, কঠিন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সাহস যার আছে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুন ২০২৫, ১:১৭:২০ অপরাহ্ন

শফিকুল হক
সাবেক মেয়র ও কাউন্সিলর, লন্ডন বরো অব টাওয়ার হ্যামলেটস, ইউকে
ড. মোহাম্মদ ইউনুস, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, আজ ১০ জুন ২০২৫ তারিখে যুক্তরাজ্যে আগমন করেছেন। তিনি সম্মানজনক “কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড” গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।
এটি প্রবাসী বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। শত শত মানুষ তাকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন, যদিও কিছু সংখ্যক পূর্বতন সরকারের সমর্থকেরা এর বিরোধিতা করছে।
ড. মোহাম্মদ ইউনুস একজন ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তিত্ব, যিনি একটি কঠিন ও চ্যালেঞ্জপূর্ণ সময়ে দেশের নেতৃত্ব নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন। অফিসে তিনি এক বছরেরও কম সময় আছেন, কিন্তু ইতিমধ্যে তার দূরদর্শী, গতিশীল ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে যাচ্ছে — যা স্বাধীনতার পর কোনো সরকার পুরোপুরি করতে পারেনি বলে অনেকেই একমত হবেন।
প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নানা বিরোধিতা ও চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও তিনি নিরলসভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক অস্থিরতা ও রক্তক্ষয়ের পর এই নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার জনগণ ও দেশের কল্যাণে প্রকৃত পরিবর্তন আনার সক্ষমতা রাখে। এটি বাংলাদেশের জন্য একবারের একটি সুবর্ণ সুযোগ, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক স্থায়ী উত্তরাধিকার রেখে যেতে পারে।
যেসব মৌলিক পরিবর্তন দরকার, তার মধ্যে দুর্নীতি ও ঘুষের সম্পূর্ণ নির্মূল অন্যতম — বিশেষ করে সমাজের সকল স্তর থেকে। তার বক্তৃতায় শুনে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ তার অগ্রাধিকার তালিকার শীর্ষে, এবং তিনি এ বিষয়ে পরামর্শ ও মতামত পেতে আগ্রহী। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জনগণের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এবং জরুরি ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপের দাবি রাখে।
আমার কিছু পরামর্শ রয়েছে দেশের পুনর্গঠন নিয়ে
একজন রাজনীতিবিদ ও স্থানীয় কাউন্সিলর হিসেবে সরকারি নীতি/কৌশল তৈরির অভিজ্ঞতা এবং তা বাস্তবায়নের দক্ষতা আছে আমার, যা একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহায়ক হতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, সুসংগঠিত কর্মপরিকল্পনা ও সংস্কারের মাধ্যমে আমরা পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগসহ মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি বিভাগ থেকে দুর্নীতি দূর করতে পারি।
এর জন্য প্রয়োজন একটি জাতীয় দুর্নীতি দমন টাস্কফোর্স গঠন, যারা সমস্ত সরকারী প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন ও সংস্কারের মাধ্যমে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা করবে।
অবিশ্বাস্য গতিতে বিভিন্ন স্তরে যে পরিবর্তন হয়েছে তা প্রমাণ করে, অধ্যাপক ড. ইউনুসের নেতৃত্ব কতটা কার্যকর ও ঐতিহাসিক
বাংলাদেশ কখনোই প্রতিবেশী দেশের প্রভাবমুক্ত ছিল না, কিন্তু ড. ইউনুস একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যিনি দেশের স্বার্থে সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের পরে যখন দেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত, তখন ছাত্রনেতাদের অনুরোধে ড. ইউনুস নেতৃত্বে এগিয়ে আসেন। তিনি একটি ভাঙা জাতিকে সুস্থ, ন্যায়ভিত্তিক ও আশাবাদী পথে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অভাবনীয় রূপান্তর দেখছে। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এবং নতুন কৌশল, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, গ্রামীণ উন্নয়ন ও বৈদেশিক অংশীদারিত্ব দেশকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনআস্থা ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। দীর্ঘদিনের বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে ভেঙে জনগণের মধ্যে ন্যায় ও জবাবদিহিতার চেতনা গড়ে তুলছেন।
আন্তর্জাতিকভাবেও ড. ইউনুস বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। চীন ও জাপান সফর ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ফলে হাজার হাজার বাংলাদেশি চাকরি ও প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন, যা তার নেতৃত্বের দূরদর্শিতা ও প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
তাঁর সাহসী পদক্ষেপ ও ভবিষ্যতদ্রষ্টা নেতৃত্ব নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে তরুণদের অনুপ্রাণিত করছে। তিনি আজ একটি প্রজন্মের জন্য আশার প্রতীক, যারা একটি প্রগতিশীল ও স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
‘কিংস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরার এক শক্তিশালী স্বীকৃতি।
ব্রিটিশ সরকার ও প্রবাসীরা এই সুযোগে বাংলাদেশের প্রতীক হিসেবে তাকে সম্মান জানাতে উদগ্রীব।
এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি প্রমাণ করেছেন — বাংলাদেশ পারবে, যদি নেতৃত্ব সৎ ও দেশপ্রেমিক হয়। প্রতিদিন তাকে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, এমনকি নিজের প্রশাসনের মধ্য থেকেও, তবুও তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি নিশ্চিত করেছেন যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যদিও রাজনৈতিক দলগুলো ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়। এপ্রিল ২০২৫-এর নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন, যা সঠিক সংস্কারপূর্বক নির্বাচনের জন্য সহায়ক।
অবিশ্বাস্য গতিতে বিভিন্ন স্তরে যে পরিবর্তন হয়েছে তা প্রমাণ করে, অধ্যাপক ড. ইউনুসের নেতৃত্ব কতটা কার্যকর ও ঐতিহাসিক।
এই সফর শুধুমাত্র একটি সম্মাননা গ্রহণ নয় — এটি আমাদের প্রবাসীদের জন্য এক স্মরণীয় মুহূর্ত। তিনি আমাদের গর্বিত করেছেন।
মাত্র এক বছরেরও কম সময়ে দেশের পুনর্গঠনে তার নিষ্ঠা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। যদি জনগণের সরকার হয়, দুর্নীতিমুক্ত ও দেশপ্রেমিক হয়, তাহলে বাংলাদেশও পারে।
আমরা আশাবাদী, ড. ইউনুসের শুরু করা যাত্রা চলবে এবং বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথে আরও দূর এগিয়ে যাবে।
এই পরিবর্তনের সময়ে তার অবদানের জন্য আমরা তাকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এক নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
এই সফরের সময় তিনি যেসব কাজ করতে পারেন বলে আশা করা হচ্ছে
রাজা ও প্রধানমন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, একটি নাগরিক সংবর্ধনা ও প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময়।
আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিরা আশা করছি এবং দাবি জানাই যে এই সফরের সময় তিনি নিচের বিষয়গুলো বাস্তবায়নের নির্দেশ দেবেন:
১. সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সব এয়ারলাইন্সের জন্য অবিলম্বে চালু করা হোক। বাকি কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেওয়া হোক।
২. প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হোক, যেটা আগের সরকারগুলো প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি।
৩. No Visa Required স্ট্যাম্পের জন্য কোন ফি না নেওয়া হোক। প্রবাসীদের জন্য এটি বিনামূল্যে দিতে হবে।
৪. অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক এয়ারফেয়ার নির্ধারণ করা হোক।
আমরা বাংলাদেশ হাইকমিশন, যুক্তরাজ্য এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনুরোধ করছি এই দাবিগুলো আমাদের গর্ব, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসের কাছে তুলে ধরার জন্য।
আমরা তার সফলতা কামনা করি।




