জুলাই-আগস্টে পতনশীল শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান হয়েছে: প্রধান বিচারপতি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মে ২০২৫, ১২:২১:৩৬ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনকে স্মরণ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘যখন অনাচার-অরাজকতা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল, যখন বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল করা হয়েছিল মুষ্টিমেয় লোককে সেবা করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, বিচার বিভাগের আপসকামী করে যে শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল, সেই পতনশীল শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে এই অভ্যুত্থান হয়েছে।’
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন বিচার বিভাগের প্রধান।
আইন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার রক্ষায় অনন্য অবদানের জন্য যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াডাম কলেজ গত ২৬ মার্চ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে ‘অনারারি ফেলোশিপ’ দেয়।
এ উপলক্ষে সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়াজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিজের নিয়োগ নিয়ে বিচার বিভাগের প্রধান বলেন, ‘আমাকে দুর্ঘটনাক্রমে নির্বাচিত বা নিযুক্ত করা হয়নি। আমাকে জনগণের এমন একটি নৈতিক দাবি থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা বিচার বিভাগকে সাহস, সত্য এবং জবাবদিহিমূলক করে পুনর্গঠন করার দাবি জানিয়েছিল।’
বিচার বিভাগ সংস্কারে ঘোষিত রোডম্যাপ তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা তখন থেকে সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছি।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের নিয়োগ এবং অপসারণের পূর্ণ ক্ষমতা দিয়ে দুটি সাংবিধানিক সংস্থা—বিচার বিভাগীয় নিয়োগ কাউন্সিল ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে কার্যকর করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের একটি খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।’
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, সাধারণ মানুষের কাছে ন্যায়বিচার এখনো দূরবর্তী। তারা বিচার বিভাগকে এখনো গতিশীল এবং নৈতিক মনে করে না।
তারা এখনো বিলম্ব বিচার, দুর্নীতির মুখোমুখি হচ্ছে। এর পরিবর্তনের জন্য আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ১২ দফা নির্দেশনা জারি করেছি। সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ নিষ্পত্তি জন্য দুটি হেল্পলাইন চালু করেছি। মামলা ট্র্যাকিংয়ের ওপর জোর দিয়েছি।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ন্যায়বিচার কোনো গন্তব্য নয়, এটি একটি শৃঙ্খলা।
এমন একটি শৃঙ্খলা যা আমাদের প্রতিদিন প্রতিফলন ঘটাতে হবে বিবেক দিয়ে, ত্যাগ এবং নমনীয়তার সঙ্গে। আমরা কতটা বিশ্বস্ততার সঙ্গে জনগণকে সেবা দিতে পারছি বা পারব তার ওপর বিচার বিভাগ, দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে।’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ রেফাত আহমেদ জানান, আগামী ২২ জুন বিচার বিভাগের সংস্কার নিয়ে একটি অধিবেশনের আয়োজন করা হয়েছে। সেই অধিবেশনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস থাকবেন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। (কালের কণ্ঠ)




