জাফলংয়ে ও কুড়িগ্রামে হঠাৎ পাহাড়ি ঢল, তলিয়ে গেছে বহু এলাকা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মে ২০২৫, ১:৫০:১১ অপরাহ্ন
সিলেট অফিস: সিলেটের জাফলংয়ে হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল নেমে পিয়াইন নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা ঢলটি পিয়াইন নদী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা দ্রুত প্লাবিত হয়।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে লালকুড়া কাঠের সেতুটি। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ১১ গ্রামের ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
জাফলংয়ে পিয়াইন নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ায় শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এতে আশপাশের বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের বরাতে জানা গেছে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
জাফলংয়ের অধিকাংশ পর্যটন এলাকা ইতোমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাফলং ছাড়াও গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং কানাইঘাট উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতেও পানির প্রবল গতি ও ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় বহু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিলেট ও ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নদীর পানি আরও বাড়তে পারে এবং বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে আকস্মিক বন্যা সতর্কতা জারি করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, সেনাবাহিনী ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে, সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এসব নদীর পানি উপচে পড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে।সিলেট ভ্রমণ প্যাকেজ
জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসরণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। উদ্ধার কাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌকা ও অন্যান্য সরঞ্জাম।
কুড়িগ্রামের রৌমারিতে ১১ গ্রাম প্লাবিত
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় হঠাৎ পাহাড়ি ঢলে পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে লালকুড়া কাঠের সেতুটি। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ১১ গ্রামের ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। শনিবার (১৭ মে) দুপুরে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের লালকুড়া এলাকার জিঞ্জিরাম নদীর ওপরে কাঠের সেতুটি ভারত থেকে পাহাড়ি ঢলে আসা পানির স্রোতে ভেঙে যায় বলে জানায় স্থানীয়রা। ফলে হাট-বাজার ও উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওই এলাকার মানুষ।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে ২০২৪ সালে জিঞ্জিরাম নদীর ওপরে কাঠ-বাঁশ দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ওই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করত ১১টি গ্রামের বাসিন্দা। আবারও সেতুটি ভেঙে পড়ায় যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
ওই এলাকার বাসিন্দা আবু সাঈদ জানান, আগেও যাতায়াতে কষ্ট ছিল। সেতুটি হওয়ার পর কোন মতে আসা যাওয়া করা গেছে। এখন আবার বন্ধ হয়ে গেল। করিম মোল্লা, আব্দুস সালাম, জহিরুল ইসলামসহ অনেকে জানান, তাদের চলাচলের একমাত্র পথে সেতুটি ভেঙে পড়ায় যাতায়াত করতে বিপাকে পড়ে গেছেন। দ্রুত মেরামত করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তারা।
উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সরবেশ আলী জানান, শনিবার দুপুরে পাহাড়ি ঢলে কাঠের সেতুটি ভেঙে পড়েছে। কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছে। প্রশাসনকে জানিয়েছি। দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল কুমার হালদার জানান, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে। এরকম ক্ষতি হলে প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করা হবে।




