এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিলেটের ৫ নেতা মাঠে ব্যস্ত
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১:৩৫:০২ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি, সিলেট: দেশের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে সিলেট অঞ্চলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পেয়েছেন সিলেটের পাঁচজন। তারা হলেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশাম হক, অর্পিতা শ্যামা দেব, অনিক রায়, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ ও কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ।
জানা গেছে, দলটি গোছানোর দায়িত্ব পেয়েই পাঁচজনের মাধ্যমে মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও সিলেটে প্রথম কর্মসূচি ইফতার মাহফিল হয়েছে। এ কর্মসূচিকে মাঠে নামার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে সংগঠনটি। দায়িত্বপ্রাপ্ত পাঁচজন নিজেদের নেতা হিসেবে প্রচার না করে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সংগঠক হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, এনসিপির প্রতি কৌতূহলী দৃষ্টি রয়েছে অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও রাজনীতি সচেতন মানুষজনের। ঈদের পরেই রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার বিষয়টি জানান দিয়ে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা সামনে এসেছেন।
এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশাম হকের বাড়ি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ছিলেন টানা ২২ বছর। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে পড়েছেন।
ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনস্টার থেকে। আইন ও সামাজিক নেতৃত্ব বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেছেন সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে। ইংল্যান্ড লেবার পার্টি থেকে টাওয়ার হ্যামলেটসের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। নির্বাচিত লেবার গ্রুপের মিডিয়া ও কমিউনিকেশন অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে জুলাই-বিপ্লবে সহযাত্রী হন।
কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা অনিক রায়ের বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লায়। পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) থেকে। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের এক সময়ের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা অনিক জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীতে রাজনৈতিক কেন্দ্রস্থলে ছিলেন। বিগত সরকার আমলে তার বিরুদ্ধে সাতটি মামলা হয়েছে। দুইবার কারাগারে গেছেন। জুলাই-বিপ্লব চলাকালে ১০ বারের বেশি হামলার শিকার হয়েছেন।
কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেবের বাড়ি সিলেট শহরে। ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ের সময় যখন ঢাকার রাস্তায় শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল, অর্পিতা সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এরপর ডাকসু নির্বাচনে কবি সুফিয়া কামাল হলের পাঠকক্ষ সম্পাদক পদে অংশ নেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। আন্দোলনের পাশাপাশি অর্পিতা স্বেচ্ছায় রক্তদানের সংগঠন ‘বাঁধন’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশের বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। হাওর রক্ষা আন্দোলন, লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলন, আদিবাসীদের ভূমি রক্ষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সিলেট অঞ্চলে বিভিন্ন কারণে বন্ধ হওয়া চা-বাগান চালুর দাবিতেও আন্দোলন করেছেন।
২০২২ সালে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে সংহতি জানাতে গিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন। পরে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রমূলক ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মামলায় ১৩১ দিন কারাভোগ করেন। কারামুক্ত হয়ে ২০২৩ সালে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই সময় গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হন।
কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার নুরুল হুদা জুনেদ সিলেটের মোগলাবাজারের সন্তান। ২০১৮ সালে ‘রাতের ভোটের’ প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি তৎকালীন শাসক দলের হামলা ও মামলার মুখে পড়েন। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্য পাড়ি দিয়ে ব্যারিস্টার ডিগ্রি লাভ করেন। ইউকেতে কিছুদিন আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করছেন। ডেনিং চেম্বার নামে নিজস্ব মালিকানাধীন চেম্বার পরিচালনা করছেন। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে লন্ডনে থেকে সহায়তা করেছেন।
মাঠে করণীয় প্রশ্নে এহতেশাম হক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘মাঠে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চেয়ে নিজেদের ব্যতিক্রমী প্রমাণ করাই হবে প্রথম কৌশল। সিলেট অঞ্চলে বিগত দিনে যেসব মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে, সুষম উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে, সেসব দিক সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে।’
উদাহরণ হিসেবে তিনি সিলেটের যোগাযোগব্যবস্থায় ফোর ও সিক্স লেনের রাস্তা, রেলপথে বিড়ম্বনা, সিলেট-ছাতক রেলপথ চালু এবং স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশার বিষয়ে অবহিত হওয়ার কথা তুলে ধরেন। বলেন, ‘সিলেট বিভাগের প্রতিটি জেলায় মতবিনিময় করে এসব জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা চিহ্নিত করা হবে।’