ছাত্রদের বিরুদ্ধে হাইকমিশন কর্তৃক মামলা করার অভিযোগের সত্যতা পায়নি পুলিশ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪:১৮:৩৮ অপরাহ্ন
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মালয়েশিয়ায় ছাত্রদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃক মামলা করার অভিযোগের কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি মালয়েশিয়া পুলিশ।
ঘটনার বিবরণে জানাগেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন ‘ইউনিভার্সিটি কেবাংসাং মালয়েশিয়া’র বাংলাদেশি ছাত্র ও শিক্ষকদের দ্বারা অভিযোগ উঠে যে, কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন, মালয়েশিয়ার কাজাং থানায় (বালাই) রিপোর্ট করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা নানামুখি হেনস্তার শিকার হন সেদিন। আরো অভিযোগ উঠে যে, এই মামলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন ডেপুটি হাইকমিশনার, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর।
অভিযোগের সূত্র ধরে গত ৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে, ১৯.০১.৬০০১.০০১.০৪৬.০০৮.২৪ নং স্মারকে কুয়ালালামপুরের ওয়াংসা মাজুর পুলিশ প্রধান বরাবর এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পত্র লিখে মালেশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন। হাইকমিশনের পত্রের ভিত্তিতে গত ২৩ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে ওয়াংসা মাজু এরিয়ার পুলিশ প্রধান, শায়রুল আনোয়ার বিন আব্দুল ওয়াহাব স্বাক্ষরিত রিপোর্ট বলছে, গত ১ জুলাই, ২০২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হাইকমিশন কর্তৃক, কাজাং তথা মালয়েশিয়ার কোনো থানায় মামলা হয়নি।
এছাড়া তৎপরবর্তিতে ডেপুটি হাইকমিশনার, মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে নানা নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ও প্রবাসীদের জন্য জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা যেমন পোষ্ট মালয়েশিয়া কর্তৃক পাসপোর্ট বিতরণ, অবৈধ বাংলাদেশিদের মালয়েশিয়ার সরকারের বৈধকরণের নিমিত্ত অনলাইন প্লটফর্ম চালু করাসহ আরো কিছু সংস্কার কর্মসূচী ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগদানের পরপরই উদ্যোগ নেই, যা একটি স্বার্থানেষী মহলের অনৈতিক সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে এবং এ কারণেই এ সংঘবদ্ধ চক্র আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আরো পড়ুন ➡️ মালয়েশিয়ায় ৭৭ বাংলাদেশি গ্রেফতার
অনুসন্ধানে জানা যায় , ২০০৯-২০১০ সমযয়কালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে কর্মরত থাকা অবস্থায় বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ এর লক্ষ্যে নিয়োজিত ওয়াশিংটন ডিসির ল’ফার্ম এর কাজ তদারকি করতে যেয়ে এক পর্যায়ে ল’ ফার্ম এর অযাচিত বিল অধিকতর পরীক্ষা /নিরীক্ষা করার কারণে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা: দিপু মনি মি: খাস্তগীরকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায় যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রীর স্বামীর কয়েকজন বন্ধু ল’ফার্ম এর কাজে জড়িত ছিলেন।
উল্লেখ্য যে, খাস্তগীর কানাডার সরকারের বৃত্তির আওতায় ২০০৪-২০০৫ সালে ডালহৌসী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমূদ্র আইন বিষয়ক মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের পর দুই বার (২০০৬ এবং ২০০৮) যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হামশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের সমূদ্র সীমা নির্ধারণ করার জন্য দুইটি ডেস্কটপ সমীক্ষার নেতৃত্ব দেন। এ কারণে নিউ ইয়র্কে অবস্থিত বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে, তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েই তাকে পোস্টিং দেওয়া হয়। বর্তমান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তখন পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন।
এছাড়া তিনি যখন ওমানে কর্মরত ছিলেন তখন আওয়ামীলীপন্থী প্রবাসী বাংলাদেশীদের একটি স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক সামাজিকভাবে মিথ্যা প্রোপাগান্ডার শিকার হন।
অনুসন্ধানে জানা যায় যে তৎকালীন (২০১৩-২০১৪) বাংলাদেশ সোসাল ক্লাব ওমান এর সভাপতি শফিকুল ইসলাম ভূইয়া, যিনি কমিউনিটিতে বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তার আইনগত ন্যায্য দাবীর প্রতি খাস্তগীর অবস্থান নিলে ক্লাব এর আওয়ামী লীগ পন্থী নেতাদের সাথে তদানীন্তন দূতাবাসের প্রধান (রাষ্ট্রদূত) এর আশীর্বাদপুষ্ট একটি দূর্নীতিবাজ চক্র এর সহায়তায় তার নামে মিথ্যা অভিযোগ করার মাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন করার অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করে।
পরবর্তীতে খাস্তগীর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করে প্রথম এক বছর পরিচালক (মার্চ ২০১৫ – মে ২০১৬) এবং পরে (জুন ২০১৬ – আগষ্ট ২০১৯) মহাপরিচালক (ইউরোপ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন/আন্তর্জাতিক সংস্থা) হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
ডেপুটি হাইকমিশনার জানান, ২০২০ এর নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রবাসীদের জন্য নিজ নিজ কর্মস্থলে থেকে পাসপোর্ট সার্ভিস প্রাপ্তি সহজ করার লক্ষ্যে পোস্ট মালয়েশিয়ার সাথে স্বল্প খরচে বিতরণ করার নিমিত্তে চুক্তি স্বাক্ষর করার পুরো বিষয়টি নেতৃত্ব প্রদান করেন। মার্চ ২০২১ হতে অদ্যাবধি ৭ লক্ষাধিক পাসপোর্ট এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বিতরণ করা হয়েছে, যা মালয়েশিয়ার প্রবাসীদের আনুমানিক বাংলাদেশী টাকায় পাঁচশত কোটির উপরে সাশ্রয় করেছে বলে খাস্তগীর মনে করেন।
খাস্তগীর বলেন, ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে শুরু হওয়া থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় চার লক্ষ অনিয়মিত (আনডকুমেন্টেড) বাংলাদেশী শ্রমিকদের নিয়মিত করার লক্ষ্যে কৌশলগত ও পরিচালনা সংশ্লিষ্ট কার্যাবলী তদারকি করি। এ লক্ষ্যে চাকরির খোজ নামে একটি অনলাইন পোর্টাল তৈরি ও চালানোর ব্যবস্থা করা হয় (যা তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর অনলাইন উপস্থিতিতে ২০২১ এর শুরুতে লঞ্চ করা হয়েছিল, যা অনিয়মিত বাংলাদেশিদের বিনা খরচে বৈধ করার জন্য কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ তৈরি করেছিল, কিন্তু মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার সংশ্লিষ্ট বিশেষ করে সিন্ডিকেটের চাপে পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।
অপরদিকে, ডিসেম্বর ২০২১ এ বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত শ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক এর আওতায় প্রায় পাঁচ লক্ষ বাংলাদেশী শ্রমিক এর মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থান এর বিষয়ে কৌশলগত ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করি আমি। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় যে, ২০২৪ এর ৩১শে মে’র মধ্যে মালয়েশিয়াতে আসতে না পারা ১৮ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের বিষয়টি। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের ২০২৪ এর অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সফর এর সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতাধীন কৌশলগত বিষয়ে মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত মাদানী রিসার্চ সেন্টার (এমআরসি) এর সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক ও সহযোগিতার মাধ্যমে একটি নীতি কৌশলপত্র প্রণয়ন এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশে আগমণের প্রাক্কালে প্রণয়ন করার ব্যবস্থা করার সাথে যুক্ত ছিলেন খাস্তগীর।
এছাড়া দুই দেশের শীর্ষ চেম্বার এর মধ্যে যৌথ বিজনেস কাউন্সিল গঠন করার জন্য মালয়েশিয়ার জাতীয় চেম্বার এর নেতৃবৃন্দকে উৎসাহিত করতে তিনি মূখ্য ভূমিকা পালন করেন বলে জানা যায়।
মালয়েশিয়ার সাথে সেমি কন্ডাকটর ও হালাল সেক্টর-সংশ্লিষ্ট যৌথ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে আলোচিত অভিযোগ যা পররাষ্ট্র ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএসএ) হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ফাঁস হওয়া চ্যাটের মাধ্যমে জানাযায়; বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান এবং মালয়েশিয়া প্রবাসী যারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন তাদের পাসপোর্ট বাতিলের সুপারিশ করার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি বলেন; ‘ফরেন সার্ভিস এসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের হোয়াটস আ্যপ গ্রুপে আমার যেসব পোস্ট বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে তা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এখানে আমি আন্দোলনকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলছি মর্মে বলা হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা। এ ক্ষেত্রে যে মেসেজ/টেক্সট এর কথা বলা হচ্ছে এই মেসেজ/টক্সটি আমার নয়। আমাদের সার্ভিসের অন্য একজন কর্মকর্তার মেসেজ/টেক্সটি এমন একটি শব্দ রয়েছে । আমি পেশাদারিত্ব এবং সৌজন্যতার খাতিরে এই সহকর্মীর নাম উল্লেখ করলাম না। আমি অনুরোধ করবো এই স্ক্রীণ শর্টটি ভালভাবে দেখার জন্য। এভাবে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে যা অনভিপ্রেত এবং সাংবাদিকতার নীতির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করেন তিনি।’
ডেপুটি হাইকমিশনার খাস্তগীরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের আরো কারণসমূহ:
মালয়েশিয়া বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাসপোর্ট অনুবিভাগসহ প্রবাসীদের জন্য প্রদেয় বিভিন্ন কন্স্যুলার ও অন্যান্য সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি-দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব ক্ষেত্রে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের অপসারণসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এসব সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা প্রবাসীকর্মীদের চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় । সময় মতো পাসপোর্ট না পাওয়ার কারণে তাদেরকে আর্থিক জরিমানাসহ চাকুরিচ্যুতির মুখোমুখি হতে হয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে হাইকমিশন ২০২৩ সালে আউটসোর্সিং কোম্পনির মাধ্যমে পাসপোর্ট সেবাসহ অন্যান্য কন্স্যুলার সেবা প্রদানের লক্ষ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। হাইকশিনের পক্ষে পাসপোর্ট অনুবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। মধ্যসত্বভোগী তথা দালালমুক্ত করার জন্য পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ, ব্যাংকে টাকা জমাকরণ, ডকুমেন্ট স্ক্যানিংসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ এই কোম্পনির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি ট্রাভেল পারমিটসহ আরো কিছু কন্স্যুলার কাজ আউটসোর্সিং কোম্পানিকে দেওয়া হয়। টিপি ইস্যুতে অনয়িম-সিন্ডিকেটসহ বিভিন্ন নেতিবাচক সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে নিয়মিত প্রচার হতো । ইতোপূর্বে হাইকমিশন ট্রাভেল পারমটি ইস্যু সংক্রান্ত বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে একটি অভিযোগ তদন্ত করে। এই তদন্ত কমিটিতে আমাকে প্রধান করা হয়। এই তদন্ত টিম পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে কতিপয় সুপারিশ করে যা বাস্তবায়ন করা হলে টিপি ইস্যু এবং এখানকার বিমান টিকেটের সিন্ডিকেট নিশ্চিত বন্ধ করা যাবে। এ সংস্কারের জন্য হাইকমিশনে কর্মরত নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে আহ্বায়ক করে একটি টিম গঠন করে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে মর্মে হাইকমিশনের সিদ্ধান্ত রয়েছে । শুধুমাত্র কতিপয় কর্মকর্তার বিরোধিতার কারণে প্রজ্ঞাপণটি ইস্যু করা হয়নি। ইতোমধ্যেই বিমান টিকেট সিন্ডিকেট ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। টিপি ইস্যুর ক্ষেত্রে অনিয়ম-দীর্ঘসূত্রতাও হ্রাস পেয়েছে। এসব ক্ষেত্রে হাইকমিশনের কতিপয় কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং তাদের বহিরাগত দালাল চক্র আমার প্রতি এবং তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। তারাই নিয়মিত মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে।
পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রের বর্ণিত দীর্ঘসূত্রতা, অনয়িম-দুর্নীতি তথা সিন্ডিকেটের সাথে হাইকমিশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত এমন সংবাদ প্রায়শই মূল ধারার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। এছাড়া হাইকমিশনের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে সাধারণ প্রবাসীরা অভিযোগ জানাচ্ছেন। বহিরাগত এক বা একাধিক প্রতারক চক্রের সাথে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ তথা সিন্ডিকেটের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে । এসব বিষয়ে হাইকমিশনও একাধিক অভিযোগ পেয়েছে যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে, একজন কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে । তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এমনকি পাসপোর্ট অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ হাইকমিশন প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই শেষে তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। তারা নোটিশের জবাব দিয়েছেন যা বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমার এবং আমার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছুসংখ্যক সহকর্মীদের বিরুদ্ধে বর্ণিত সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য যে, পাসপোর্ট অনুবিভাগ এবং শ্রম অনুবিভাগের অপারেশনাল কার্যক্রমে আমার বা কূটনৈতিক অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা নেই। তারপরও এসব কার্যক্রমে আমাদেরকে সংশ্লিষ্ট করে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
এমনি প্রেক্ষাপটে, যখন এসব অনৈতিক কার্যক্রম নিবৃত্ত করার জন্য হাইকমিশন কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের কারণে প্রতারক বা সিন্ডিকেটের অনৈতিক আর্থিক সুবিধা গ্রহণের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, তখনই হাইকমিশনের কতিপয় কর্মকর্তা/কর্মচারী যারা অনৈতিকতার সাথে জড়িত মর্মে প্রতীয়মান, এই সিন্ডিকেটের সদস্য সংঘবদ্ধভাবে আমাকে এবং আমার সহকর্মীদের জড়িয়ে মিথ্যা-বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার শুরু করে। ভয়ঙ্কর রকমের এক অনাকাঙ্ক্ষিত তথ্য সন্ত্রাসের শিকার হই আমি এবং আমার সহকর্মীরা ।
এ চক্র আমাদের বিরুদ্ধে এ জাতীয় কার্যক্রম শুরু করে পূর্ববর্তী সরকারের শাসনামল থেকেই। এমনকি পূর্ববর্তী সরকারের রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দও আউটসোর্সিং কোম্পানির মাধ্যমে দালালমুক্ত পরিবেশে সেবা প্রদানের বিরোধিতা করে হাইকমিশনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রচারণা চালায়। তাদের একটি অংশ এবং মিশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রত্যক্ষ/ পরোক্ষ সহযোগিতায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ব্যাপকভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অব্যাহত প্রচারণা চালাচ্ছে। এসব ব্যক্তিরা প্রতিদিনই মিথ্যা কন্টেন্ট তৈরি করে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করছে। প্রবাসীদের হয়রানিমুক্ত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে যেয়ে আমি গুজব তথা অপপ্রচারের শিকার হচ্ছি। আমি এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে সুবিবেচনা আশা করছি। সরকারি দায়িত্ব পালনে এ জাতীয় প্রচারণা আমাকে এবং আমার পরিবারকে চরম বিব্রত ও হতবাক করছে বলেও জানান খাস্তগীর।


