আরেকটা ধাক্কা জাতিকে দিতে হবে: জামায়াত আমির
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৪০:২১ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে বাংলাদেশে। কিন্তু যেনো তেনো মার্কা নির্বাচন এই জাতি চায় না। জাতি নির্বাচনের মতো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
যেই নির্বাচনে পেশী শুক্তি, কালো টাকার খেলা চলবে না। এমন একটা নির্বাচন আমরা চাই। তাহলে বড় একটা লড়ায়ের জন্য প্রস্তুত থাকুন। এটা এতা সহজে আসবে না আমরা বুঝতে পারছি।
এক ধাক্কা ২৪ এর জুলাইয়ে দেওয়া হয়েছে, আরেকটা ধাক্কা এই জাতিকে দিতে হবে। সত্যিকারের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য।’
শুক্রবার বিকেলে নরসিংদীর সাটিরপাড়া কালিকুমার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নরসিংদী জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ভোটার তালিকা সংশোধন করতে হবে উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, ‘যারা ভুয়া ভোটার তাদের বাদ দিতে হবে। দুনিয়া থেকে যারা চলে গেছেন তাদের বাদ দিতে হবে। যে সমস্ত লোক ভোটার হয়েছে কিন্তু নাম তালিকাভুক্ত হয়নি তাদের তালিকাভুক্তি করতে হবে। প্রবাসীদেরও এই নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মাঠ প্রশাসনে যারা আছেন, তারা অতীতে দায়িত্বের পরিচয় দিতে পারেন নাই, দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। যাদের হাতে জনগণের পয়সায় কেনা বুলেট নিজেদের বুকে এসে বিঁধেছে, আগামী নির্বাচনে আমরা তাদের কোনো দায়িত্বে দেখতে চাই না। তিনি প্রশাসনের যে পর্যায়েই থাকুক না কেনো।’
দুঃশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে জামায়াত আমির বলেন, ‘যে বাংলাদেশে সবাই সবাইকে সম্মান করবে, নারী-পুরুষ যে যেখানেই থাকুক ঘরে-বাইরে, কর্মস্থলে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে দায়িত্ব পালন করবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যার যার ধর্ম পালন করবে। কেউ কারো ধর্মে-কর্মে হস্তক্ষেপ করবে না। মানবিক বাংলাদেশ গড়তে যুদ্ধ আমাদের শেষ হয়নি, যুদ্ধ আমাদের চলবে। মুক্তির পথে লড়াইয়ের ময়দানে আবারও দেখা হবে।’
জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মইন-ফখরুদ্দীনের দুঃশাসনের দুই বছর, পরবর্তী শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমের সাড়ে ১৫ বছর মোট এই সাড়ে ১৭ বছর ভীষণ কষ্ট ও যাতনার মধ্যে ছিল। এই সময়ের ভিতরে অসংখ্য আল্লাহর বান্দাবান্দি খুন হয়েছেন, গুম হয়েছেন, আয়নাঘরের বাসিন্দা হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, আহত হয়েছেন, মামলার আসামি হয়ে দফায় দফায় জেলে গিয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন, ব্যবসা হারিয়েছেন, তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপর বাড়তি জুলুম করা হয়েছে উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এক এক করে আমাদের ১১ জন শীর্ষ নেতাকে জেলের ভিতর হত্যা করা হয়েছে। বিচারের নামে তামশা করে কাউকে দেওয়া হয়েছে ফাঁসি, কাউকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুর দিকে। পুরোটা সময় জুড়ে জামায়াতে ইসলামী একমাত্র দল যেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু করে দেশের সব কয়টি কার্যালয় কার্যত সিলগালা করে রাখা হয়েছিল। একমাত্র দল যেই দলটির নিবন্ধন কেঁড়ে নেওয়া হয়েছে। দুঃখের বিষয়, ফ্যাসিবাদ আপতত বিদায় নিয়েছে নিবন্ধনটা আমরা এখনো ফিরে পাইনি। এখনো আমাদের নিবন্ধনটা ফিরে পাওয়ার জন্য আমাদের আদালতে লড়াই করতে হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য লজ্জার বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘যাদের অন্যায়ের কাছে, ফ্যাসিবাদের কাছে মাথা নত না করার কারণে নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হলো- নিবন্ধনটা সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথেই ফেরত দেওয়া উচিত ছিল। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে আমাদের পাওনা আমাদের কাছে ফেরত দিন। আমদের প্রতীকসহ ফেরত দিন। আমাদের উপর জুলুম করা হয়েছে। এই জুলুমের অবসান হোক।’
জামায়াত আমির বলেন, ‘মিথ্যা মামলায় যখন নেতৃবৃন্দকে আটক করা হয়েছিল, একে একে সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে; কিন্তু জামায়াতের কলিজার টুকরা তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো মুক্তি পাননি। কেন তিনি মুক্তি পাননি? জনতার দাবি তাকে এখনি মুক্তি দিতে হবে। তিনি মজলুমদের প্রতীক। সম্মানের সাথে তাকে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দিন। যদি গড়িমসি করা হয়, জামায়াতে ইসলামী ন্যায্য দাবিসহ আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে মাঠে নামতে বাধ্য হবে।’
তিনি বলেন, ‘এই মাসটি হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের মাস। বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনে যে জীবনগুলো ঝরে গিয়েছিল আজ আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে তাদের স্মরণ করছি। আল্লাহ তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করুক। কিন্তু আমরা কি দেখলাম? বায়ান্ন গেল, একাত্তর গেল, দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু আমরা দেখতে পাই, বরকতের জীবিত মা খুপড়ি ঘরে বসবাস করেন। বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি পড়ে- এটি জাতির জন্য লজ্জা। যারা ৫২-কে পুঁজি করে রাজনীতি করেন, তারাই তো দেশ চালিয়েছেন, তাহলে বরকতের মাকে এমন করুণ পরিবেশে ফেলে রাখা হলো কেন? এমন শত শত বরকতের মায়েরা উপেক্ষিত, কিন্তু যারা তাদের নামে রাজনীতি করেছে তারা জনগণের সম্পদ লুটে শুধুমাত্র সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এ দেশকে তারা তাদের দেশ মনে করে না। সবগুলোর খবর নিয়ে দেখেন, রাজনীতি করে বাংলাদেশে, বউ বাচ্চা পাঠিয়ে দিয়েছে বিদেশে। কানাডায় তারা বেগমপাড়া গড়ে তুলেছে। আমেরিকার বিশাল বিশাল এলাকায় তারা আশ্রয় নিয়েছে। লন্ডনের মতো সিটিতে এক চোরার ৩৪২টি বাড়ি, এ রকম চোরের খনি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আর বাংলাদেশের মানুষের সম্পদ তারা লুট করে নিয়ে গিয়েছিল। এরাই আবার অন্যদের চোর বলতো। এটাই হচ্ছে চোরের মায়ের বড় গলা। এখন মাও পালিয়েছে, চোরও পালিয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেক গণহত্যাকারীকে দেশে হোক বিদেশে হোক, পাকড়াও করে অপরাধ ট্রাইব্যুনালের হাতে তুলে দিতে হবে। এদের বিচার জাতি দেখতে চায়। এই মাফিয়া খুনিদের গডফাদার ছিলেন শেখ হাসিনা। তারই আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে, তারই নির্দেশে সমস্ত খুনিরা লালিত পালিত হয়েছে। গত পরশুদিন তাদের আমলনামা পুরো বিশ্বের কাছে উন্মোচিত হয়েছে। আমরা চাই তাদের বিচার হোক, আবার আমরা এটাও চাই তাদের প্রতি সুবিচার হোক। কাউকে যেন অবিচারের মাধ্যমে কিছু করা না হয়। আমাদের উপর জুলুম করা হয়েছে, জুলুমের কষ্ট আমরা বুঝি। আর কারো উপর জুলুম হোক সেটা আমরা চাই না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, তারা অপরাধের যে হিমালয় তৈরি করেছে সুবিচার হলে সেই হিমালয়ের নিচেই তারা চাপা পড়বে।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘২৫ লাখ জনগণের জেলা নরসিংদী। একটি ইন্ড্রাস্টিয়াল জোন। এখানকার মানুষ চুরি-ডাকাতি করে খায় না। কিন্তু এখানে কেউ একটু বেশি অসুস্থ হলে ভাল চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়। এখানে একটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নেই। আমি চাই এই সরকারের উন্নয়ন মিটিং একনেকে যদি আর একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অনুমোদন হয় সেটি যেন নরসিংদীতে হয়। এই সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ নয়। অতি অল্প সময়ে তাদের সব কাজ ঘুচাতে হবে। খুনিদের বিচার করতে হবে, প্রয়োজনে সংস্কারসাধন করতে হবে, তারপর একটা সুষ্ঠু নির্বাচনও দিতে হবে। এই তিনটা দাবি আমার নয়, জনগণের দাবি। আগস্টের ৩ ও ৪ তারিখ ইন্টারনেট বন্ধ করে সারা দেশে যাদের হত্যা করা হয়েছে সেই লাশগুলো গুম করে ফেলা হয়েছে। লাশ সারিবদ্ধভাবে রেখে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। এদের হদিস কে পাবে? আজ যেখানেই যাই কিছু সন্তান হারানো মা-বাপের কান্না শুনতে পাই।’
নরসিংদী জেলা আমির মো. মোছলেহুদ্দীনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য আ.ফ.ম আব্দুস সাত্তার ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর আমির আবদুল জব্বার। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আমজাদ হোসেন।