রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করার পরামর্শ জাতিসংঘের
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩০:৫৪ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: দেশের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা, ভোটারদের একটি অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করাসহ গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে- এমন সিদ্ধান্ত এড়িয়ে চলতে বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর।
২০২৪ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণ-আন্দোলনের বিষয়ে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে জাতিসংঘ বলেছে, রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা ‘সত্যিকারের বহুদলীয় গণতন্ত্র’ পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে ক্ষুণ্ন করবে এবং বাংলাদেশের ভোটারদের একটি বড় অংশকে কার্যকরভাবে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করবে।
এ ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে নির্বাচনের আগে বিশেষ ব্যবস্থাসহ অবাধ ও প্রকৃত নির্বাচনের জন্য নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতের সুপারিশও করা হয় প্রতিবেদনে।
সাংবাদিক, আওয়ামী লীগ সমর্থক, সংখ্যালঘু নেতা, মানবাধিকারকর্মী এবং নাগরিক বা রাজনৈতিক ভিন্নমত প্রকাশকারী অন্যরা যাতে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অপ্রমাণিত ফৌজদারি মামলা বা অন্য ধরনের ভীতি প্রদর্শনের শিকার না হন- তা নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেছে জাতিসংঘ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রতিশোধমূলক সহিংসতা থেকে তাদের কার্যকরভাবে রক্ষা করতে পদক্ষেপ নিন এবং এই ধরনের হামলায় জড়িত অপরাধীদের বিষয়ে তদন্ত ও বিচার করুন। পাশাপাশি ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে হামলাসহ নাগরিকদের ক্ষতিপূরণের দাবিও সহজতর করুন।’
শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করারও সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।
দেশের নাগরিকদের নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের (নাগরিক) সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা যাতে মানবাধিকারের নীতির প্রতি সম্মান দেখায়- তা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিস্তৃত আলোচনা শুরুরও সুপারিশও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত ক্ষেত্রে অস্থায়ী বিশেষ ব্যবস্থাসহ রাজনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে প্রকৃত সমতা নিশ্চিতে আইন ও বিধি-বিধান কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে গুরুতর লঙ্ঘন এবং প্রতিশোধমূলক সহিংসতার জন্য ন্যায্য এবং কার্যকর ফৌজদারি বিচারের সুপারিশ করেছিল।
ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আওয়ামী লীগ নৃশংস পদক্ষেপ নিয়েছিল
প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের বিরোধিতার মুখেও ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল সাবেক সরকার। আর সে লক্ষ্য পূরণে বিক্ষোভ দমন করার কৌশল নিয়েছিল তারা। এর অংশ হিসেবে শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচার গ্রেপ্তার-আটক ও নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের সময় আওয়ামী লীগের সহিংস কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাবেক সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত ছিল। ক্ষমতায় থাকার জন্য সাবেক সরকার ক্রমাগত সহিংস পথ ব্যবহার করে পদ্ধতিগতভাবে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছিল।
টুর্ক আরও বলেন, ‘আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং নিশানা করে হত্যার এক উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরে। যা সবচেয়ে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার মধ্যে পড়ে এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধের শামিল বলেও বিবেচিত হতে পারে।’
পুলিশের বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার আবু সাঈদ
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার (ওএইচসিএইচআর) তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। তাকে পুলিশ বেপরোয়াভাবে গুলি করেছে।
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন ও সরকারের বলপ্রয়োগের ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণ করে এ কথা বলা হয়েছে এইচসিএইচআর-এর তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। ২৩ বছর বয়সি আবু সাঈদ শুরু থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন।