জামায়াত এখনও অফিশিয়ালি প্রার্থী ঘোষণা করেনি, সিলেটের ১৯ আসনে প্রাথমিক সিলেকশনে যারা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৪২:৩৬ অপরাহ্ন
সিলেট অফিস: মৌলিক কিছু সংস্কার করা না গেলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। এই অবস্থায় নির্বাচন দেওয়া হলে এটা হবে নির্বাচনের জেনোসাইড বা নির্বাচন গণহত্যা। আমরা এটা চাই না। আমরা চাই সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির পর নির্বাচন।’
জামায়াত এখনো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেনি উল্লেখ করে দলটির আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘জামায়াত এখনো অফিশিয়ালি প্রার্থী ঘোষণা করেনি, এটা প্রাথমিক সিলেকশন। ইলেকশন এখনো অনেক দূর। ইলেকশন কাছে এলে দল ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবে। তখন যাঁদের নমিনেশন দেবে, তাঁরাই প্রার্থী হবেন।’
গতকাল রোববার বিকেলে সিলেট নগরের দরগাগেট এলাকার কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সুলেমান হলে আয়োজিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের আমির এ কথাগুলো বলেন। সিলেট মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে এই শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হয়।
অপারেশন ডেভিল হান্ট প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, ‘ডেভিল আছে এই সমাজে। সেই ডেভিল হান্ট যদি হয়, তবে দেশের ১৮ কোটি মানুষ যৌথ বাহিনীর যাঁরা অভিযান পরিচালনা করবেন, তাঁদের জন্য দোয়া করবেন এবং তাঁদের সঙ্গে থাকবেন।
শফিকুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেশ স্বাধীনের পর থেকে কখনো একটু ভালো হয়েছে, কখনো খারাপ হয়েছে; কিন্তু খুব ভালো কখনো ছিল না। খুব ভালো কখনো হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত সঠিক না হবে। ওই সিদ্ধান্ত যখন সঠিক হবে, সততা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে হবে, তখন শুধু আইনশৃঙ্খলা নয়, সবকিছুর উন্নতি সাধিত হবে।
নির্বাচিত সরকার সব সময় ভালো হয় না বলে মন্তব্য করেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার দাবি করে ১৫ বছর ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতা আঁকড়ে ছিল। তারাই তো দেশের এই অবস্থা করে গেছে। সরকার নির্বাচিত হলেই যে ভালো হবে, তা বলা যাবে না। ভালো সরকার হতে হলে ভালো মানুষের দ্বারা সরকার গঠিত হবে। যাঁদের অতীত ভালো, বর্তমান ভালো, তাঁদের দিয়েই ভবিষ্যৎ ভালো হবে, এটা আশা করা যায়।’
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের আগে সিলেটের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৮০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপকরণ ও নগদ অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুকতাবিস-উন-নূর, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলতান আহমদ ও জামায়াতের সিলেট অঞ্চলের টিম সদস্য আবদুল হাই হারুন।
অনুষ্ঠানে মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির নুরুল ইসলাম (বাবুল), সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ আবদুর রব, জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও ইসলাম উদ্দিন, শিক্ষাবিদ আবদুস সালাম আল মাদানী, জামায়াত নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদার, এ এইচ এম সোলায়মান, মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি শাহীন আহমদ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার বক্তব্য দেন। এ ছাড়া ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মাজেদ মাহফুজ ও রাশেদুল হাসান।
এর আগে দুপুরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সোনারগাঁওয়ে জেলা জামায়াতের রুকন সম্মেলনে জামায়াতের আমির প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। জেলা জামায়াতের আমির হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মো. জয়নাল আবেদীনের সঞ্চালনায় এ সম্মেলন হয়।
রুকন সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ফজলুর রহমান। অন্যদের মধ্যে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল হান্নান ও আনওয়ার হোসাইন খান, মহানগরের সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী, জেলার সাবেক নায়েবে আমির মতিউর রহমান, জেলার সহকারী সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ হবে বৈষম্যমুক্ত, ন্যায় ও ইনসাফের। যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে তার মতপ্রকাশের অধিকার পাবে। শহীদদের রক্তের ফোঁটা ও মজলুমের চোখের জলের বিনিময়ে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারমুক্ত হয়ে আমরা এক নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই দেশকে এখন সবাই মিলে গড়তে হবে। কোনো বিভেদ-বিভাজন তৈরি করে এই অগ্রযাত্রাকে থামতে দেওয়া যাবে না।’
সিলেটের ১৯ আসনে প্রাথমিক সিলেকশনে যারা
সিলেট বিভাগের সবগুলো নির্বাচনী আসনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিলেট বিভাগের সর্বস্তরের দায়িত্বশীলদের নিয়ে আয়োজিত অনলাইন বৈঠকে ১৯টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে ওই অনলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভাগের ১৯ আসনে আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সিলেট অঞ্চলের পরিচালক এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
বিষয়টি নিশ্চিত করে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানান, সিলেটের ১৯টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। প্রত্যেক জেলার নেতৃবৃন্দের কাছে তালিকা আছে। নেতাকর্মীরা জনগণের আরও বেশি কাছে থেকে কাজ করছেন।
জামায়াতের নেতৃবৃন্দ জানান, ৫ আগস্টের পর জামায়াত বাধাহীনভাবে মাঠে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারছে। দলীয় কার্যক্রম বেগবান করার পাশাপাশি দলটি নিচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। সেই সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে জামায়াতে ইসলামীর দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘোষিত তালিকা সূত্রে জানা যায়- সিলেট সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন এহসানুল মাহবুব জুবায়ের নিজেই। অন্য আসনগুলোর প্রার্থী হচ্ছেন, প্রফেসার এম এ হান্নান (সিলেট-২), মাওলানা লোকমান আহমদ (সিলেট-৩), জয়নাল আবেদীন (সিলেট-৪), হাফেজ আনোয়ার হোসেন খান (সিলেট-৫) ও সেলিম উদ্দিন (সিলেট-৬)।
সুনামগঞ্জের প্রার্থীরা হলেন, মাওলানা তোফায়েল আহমেদ খান (সুনামগঞ্জ-১), এডভোকেট মুহাম্মদ শিশির মনির (সুনামগঞ্জ-২), এডভোকেট ইয়াছিন খান (সুনামগঞ্জ-৩), এডভোকেট মুহাম্মদ শামসউদদীন (সুনামগঞ্জ-৪), মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী (সুনামগঞ্জ-৫)।
মৌলভীবাজারের প্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম (মৌলভীবাজার-১), মো. শাহেদ আলী (মৌলভীবাজার-২), মো. আব্দুল মান্নান (মৌলভীবাজার-৩), মো. আব্দুর রব (মৌলভীবাজার-৪)।
হবিগঞ্জের ৪টি আসনের প্রার্থীরা হচ্ছেন, মো. শাহজাহান আলী (হবিগঞ্জ-১), শেখ জিল্লুর রহমান আজমী (হবিগঞ্জ-২), অধ্যক্ষ কাজী মহসিন আহমেদ (হবিগঞ্জ-৩), কাজী মাওলানা মুখলিছুর রহমান (হবিগঞ্জ-৪)।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি ও জামায়াতসহ অনেক রাজনৈতিক দল। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের ২২ জন প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। এর আগে ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটের অংশ ছিলো বিএনপি। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়ে ওই জোট তখন ক্ষমতায় গিয়েছিলো। তবে এককভাবে জামায়াত সবচেয়ে ভালো ফল করেছিলো ১৯৯১ সালের নির্বাচনে। সেই নির্বাচনে ১৮টি আসন পেয়েছিলো দলটি। তখন জামায়াতের সমর্থন নিয়েই সরকার গঠন করেছিলো বিএনপি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেছে জামায়াতে ইসলামী। আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে নয়- এককভাবে লড়াই করতে চায় জামায়াত। এ লক্ষ্যে তারা সারা দেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই করছে।