তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি প্রত্যাহার
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৭:৪৬ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর ইস্যুতে আগামী সাত দিনের মধ্যে সরকার পদক্ষেপ নেবে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেছেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান ও সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রানী মণ্ডলের উপস্থিতিতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় অধ্যক্ষ অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস পান করান। এর পরই শিক্ষার্থীরা রেলপথ ও সড়ক ছেড়ে যান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত আমরা আন্দোলন স্থগিত করছি। এর মধ্যে যদি সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি না হয় তাহলে আবার আন্দোলনে নামব। সাত দিনের মধ্যে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা উপস্থাপন করতে হবে।’
উপস্থিত শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, আজকের (গতকাল সোমবার) আন্দোলনে অনেক পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।
আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) সাত কলেজের স্নাতক শ্রেণির একটি বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা আছে। সেটি স্থগিতের ঘোষণা দিতে হবে। তবে অধ্যক্ষ বিষয়টি তার এখতিয়ারে নয় বলে এ সময় শিক্ষার্থীদের জানান। তার পরও শিক্ষার্থীরা তা বিবেচনার অনুরোধ জানান।
এর আগে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনে অধ্যক্ষসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভায় বসেন শিক্ষার্থীরা। ১২ শিক্ষার্থীও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এরপর দুই ঘণ্টারও বেশি সময়ের আলোচনা শেষে সবাই মহাখালী রেলগেটে অবরোধস্থলে আসেন।
সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের যতটুকু দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব, তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মেনে নেওয়া হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, না তিতুমীর কলেজের জন্য বিশেষ কাঠামো না কি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হবে সেই ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষকমণ্ডলী ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
কলেজের আশপাশে জমি যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা যায়, তা করা হবে। যদি আবাসিক ভবন করা যায়, তা করা হবে। পরিবহন সংকট আগামী সাত দিনের মধ্যে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান আরো বলেন, ‘ছাত্রসংখ্যা যাতে ভবিষ্যতে কমানো যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে। শিক্ষা ক্যাডারে জার্নালিজম ও আইন বিষয়ের আলাদা শিক্ষক না থাকায় আপাতত এই দুটি বিভাগ খোলা যাচ্ছে না। কলেজে ১৫২টি পদ সৃষ্টির যে প্রক্রিয়া আছে, তা ত্বরান্বিত করা হবে।’
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনকারীরা কলেজের মূল ফটকের সামনে বাঁশ ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। সেখান থেকে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাখালী লেভেলক্রসিংয়ে যান। মিছিলের সামনে হুইলচেয়ারে করে অংশ নেন অনশনরত শিক্ষার্থীরা।
বিকেল পৌনে ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা মহাখালী রেললাইন অবরোধ করেন। এতে ঢাকার সঙ্গে অনেক জেলার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় জাহাঙ্গীর গেট থেকে মহাখালী হয়ে (উড়ালসড়কের নিচে) গুলশান-বনানী যাওয়ার রাস্তা এবং গুলশান-বনানী থেকে বিজয় সরণি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ভোগান্তিতে পড়ে পথচারীরা।
গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এক সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা (তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী) তো লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে। দিনের পর দিন তাদের এ দাবিদাওয়া বেড়েই চলেছে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই যে জনদুর্ভোগ হচ্ছে, এটা থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে তারা (তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী) রেললাইন ছেড়ে দিয়ে ক্যাম্পাসে গিয়ে তাদের কর্তৃপক্ষের কাছে দাবিদাওয়া পেশ করুক। তারা যাতে জনগণকে দুর্ভোগ না দেয়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের সরস্বতী পূজা পরিদর্শন শেষে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তাদের প্রতি সরকার আন্তরিক এবং দায়িত্বশীল। কিন্তু এই মুহূর্তে হয়তো অনেক কিছু করা সম্ভব না। তাই তারা যাতে জনভোগান্তি না করে সেই বিষয়টাও মাথায় রাখা উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার যেকোনো যৌক্তিক দাবির প্রতি ইতিবাচক এবং তা যতটুকু সম্ভব পূরণ করার চেষ্টা করা হয়।’
প্রসঙ্গত, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে বেশ কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। এই দাবিতে মিছিল, সড়ক-রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়।
পরে এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সাড়া না পেয়ে গত বুধবার থেকে দাবি আদায়ে আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। গত শুক্রবার থেকে ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু ঢাকা নর্থ সিটি’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।