আবিস্কার: কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশনে সক্ষম সুপারকম্পিউটার তৈরি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২:৩২:১৯ অপরাহ্ন
অনুপম বিজ্ঞান ডেস্ক: কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জিত হয়েছে, কারণ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশনের সক্ষমতা সম্পন্ন একটি স্কেলযোগ্য কোয়ান্টাম সুপারকম্পিউটার তৈরি করেছেন।
এই সাফল্যের মূল বিষয় হলো কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের তথাকথিত স্কেলযোগ্যতা সমস্যা, যেখানে গবেষকরা দাবি করছেন যে এটি পরবর্তী প্রজন্মের এই প্রযুক্তিকে শিল্প-বিপ্লব সৃষ্টিকারী পর্যায়ে নিয়ে যাবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ক্ষেত্রটি কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতেই একে বাস্তবিকভাবে ব্যবহারযোগ্য করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।
কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে এই পরবর্তী প্রজন্মের মেশিনগুলো প্রচলিত বিটের পরিবর্তে কোয়ান্টাম বিট (কিউবিট) ব্যবহার করে। প্রচলিত বিটগুলো ‘এক’ ও ‘শূন্য’ হিসেবে ডিজিটাল তথ্য সংরক্ষণ ও স্থানান্তর করে, কিন্তু কিউবিট সুপারপজিশন নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একসঙ্গে ‘এক’ ও ‘শূন্য’ উভয় অবস্থায় থাকতে পারে।
এর ফলে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলোর সম্ভাবনা রয়েছে বর্তমানের অত্যাধুনিক সুপারকম্পিউটারগুলোর তুলনায় অনেক গুণ বেশি শক্তিশালী হবে। কারণ তারা প্রচলিত কম্পিউটিং প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে সক্ষম।
কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন ইন্টারনেট কেবলে যুক্ত
কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন ধারণাটি এখন আর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মাঝে সীমাবদ্ধ না। ইন্টারনেট কেবলের সাহায্যে এই টেলিপোর্টেশনের সফল সম্প্রচার সম্পন্ন হয়েছে। এই পরীক্ষণে ১৮ মাইল লম্বা ফাইবার অপটিকে ফোটন কণার সাহায্যে অন্য প্রান্তে টেলিপোর্টেশন করা হয়।
উল্লেখ্য, কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন প্রটোকল দুটি দূরবর্তী ব্যবহারকারীর মধ্যে একটি কোয়ান্টাম অবস্থার অজানা তথ্য স্থানান্তর করতে ব্যবহৃত হয়।
হাইপারন্ট্যাঙ্গলমেন্টের সঙ্গে একটি ফোটন টেলিপোর্ট করে দুই-কিউবিট অজানা তথ্য স্থানান্তর করা যেতে পারে।
হাইজেনবার্গ নীতি লঙ্ঘন না করে একটি ফোটন টেলিপোর্ট করার জন্য ক্যালটেক পদার্থবিদরা এনট্যাঙ্গলমেন্ট নামে পরিচিত একটি ঘটনা ব্যবহার করেছিলেন। এনট্যাঙ্গলমেন্টে কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন অর্জনের জন্য কমপক্ষে তিনটি ফোটনের প্রয়োজন। টেলিপোর্টেশনের স্ক্যান এবং পুনরায় একত্রিত করা আসলে সম্ভব হয়েছে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি বৈশিষ্ট্যের কারণে, যার নাম ‘কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গলমেন্ট’।
এই এনট্যাঙ্গলমেন্ট ঘটে যখন দুই বা ততধিক কণাকে পারস্পরিক একচেটিয়া অবস্থা ধরে রাখতে বাধ্য করা হয়, তাই একই সঙ্গে একটি ‘নির্ধারণ করা’ অন্যটিকে ‘নির্ধারণ করে’। সামগ্রিকভাবে কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন আলোর গতির চেয়ে দ্রুত ভ্রমণ করে না বরং এর পরিবর্তে এনট্যাঙ্গলমেন্টের মাধ্যমে তথ্যের তাৎক্ষণিক স্থানান্তরের ওপর নির্ভর করে। সোজা কথায়, এনট্যাঙ্গলমেন্ট বলতে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ বোঝায়।
আমেরিকার নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা সাধারণ অপটিক কেবলে ইন্টারনেট ট্রাফিকের মাঝেই কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন করতে সক্ষম হয়েছেন।
তাঁরা দাবি করেছেন, তাঁদের এই সাফল্যের অর্থ হচ্ছে বৈশ্বিক অবকাঠামো ব্যবহার করেই কোয়ান্টাম সেন্সিং ও কম্পিউটিং অ্যাপ্লিকেশনের প্রয়োগ সম্ভব। এটার জন্য আলাদা মাধ্যম লাগবে না।
তাঁরা বলেছেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এই বিশ্বটাকে নাটকীয়ভাবে পাল্টে দেবে। কারণ যেসব কাজ সম্পন্ন করতে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম সুপারকম্পিউটারের কয়েক যুগ লেগে যাবে, একই কাজ কোয়ান্টাম কম্পিউটিং মাত্র কয়েক ঘণ্টায় সুচারুরূপে সম্পাদন করতে পারবে। এই প্রযুক্তির সহায়তায় যেসব কাজে অকল্পনীয় অগ্রগতি অর্জন সম্ভব, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ওষুধ গবেষণা, অর্থনৈতিক মডেল তৈরি, সিস্টেম অপটিমাইজেশন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই।
তাঁরা আরো বলেন, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোয়ান্টাম ডাটাও মুহূর্তে স্থানান্তর করা যাবে, যেমন করে বর্তমানে আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাইনারি ডাটা স্থানান্তর করে থাকি।
সূত্র : খালিজ টাইমস