মধ্যরাতে ঢাকায় ছাত্রদের সংঘর্ষ, নীলক্ষেত নিউমার্কেট এলাকা রণক্ষেত্র
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২:২৬:৩৬ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এতে মধ্যরাতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকা। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে দফায় দফায় সাউন্ড গ্রেন্ড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের সহায়তায় ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাত ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) বাসভবন ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়ে সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে মিছিল নিয়ে ঢাকা কলেজে প্রবেশ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের ফোকাল পারসন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম অনুযায়ী ঢাবির উপ-উপাচার্য শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাননি। আমরা সব শিক্ষার্থী মিলে উপ-উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করতে যাব।
এরপর ঢাকা কলেজের আবাসিক হল থেকে আরও শিক্ষার্থী নিয়ে রাত ১১টার দিকে ঢাকা কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বার মুক্তি ও গণতন্ত্রের তোরণের কাছে আসলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের বোঝানোর জন্য সাত কলেজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পুলিশ কথা বলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরও এসে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।তবে উপ-উপাচার্য ক্ষমা না চাইলে সেখান থেকে যাবেন না জানিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নেন।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা এএফ রহমান হলের সামনে অবস্থান নেন। অবস্থানের এ পর্যায়ে রাত পৌনে ১২টার দিকে ধাওয়া-পালটার ঘটনা ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেতের দিকে চলে যান। পরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পিছু হটে। পরবর্তীতে রাত ১২টা ১০ মিনিটের দিকে তারা আবার পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ফের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
পরে রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে উভয়পক্ষের শিক্ষার্থীদের থামাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ আসেন। তিনি ঢাকা নীলক্ষেত মোড় থেকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এরপর হাসনাত উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করলে নিজেই উভয়পক্ষের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। পরে তিনি সংঘর্ষ এলাকা ছেড়ে ক্যাম্পাসের দিকে চলে যান।
অন্যদিকে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে এসে অবস্থান নেন। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন করতে দেখা যায়।রাত ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলমান রয়েছে।
এর আগে সন্ধ্যায় প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী পাঁচ দফা দাবিতে সায়েন্স ল্যাব মোড় ও টেকনিক্যাল মোড় অবরোধ করেন। এতে সায়েন্স ল্যাব এলাকা, নীলক্ষেত মোড় ও এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন ঘরে ফেরা মানুষ।
জানা গেছে, সাত কলেজের ভর্তির আসন কমানোসহ ৫ দফা দাবি নিয়ে বিকেলে শতাধিক শিক্ষার্থী আলোচনা করতে ঢাবির প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের কার্যালয়ের সামনে যান। অধ্যাপক মামুন আহমেদ দুই-তিনজন প্রতিনিধিকে তার কার্যালয়ে এসে কথা বলতে অনুরোধ করেন। তবে সে অনুরোধ উপেক্ষা করে সবাই কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকেন। এসময় ‘মব’ সৃষ্টি অধ্যাপক মামুন তাদের সঙ্গে আর কথা বলেননি। পরে এর প্রতিক্রিয়ায় সেখান থেকে তারা বেরিয়ে অবরোধ শুরু করেন।
ডিএমপির রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার তারিক লতিফ বলেন, সাত কলেজে ভর্তির আসন কমানোসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসিসহ ইউনিটের দায়িত্বরত শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করেন। শিক্ষকেরা নাকি তাদের কথার কোনো গুরুত্ব দেননি। এরই প্রতিবাদে তারা সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন।