সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ: হয়রানিমূলক ধারা বাদ, গ্রেপ্তারের সুযোগ সীমিত
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১:৩২:২২ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: অবশেষে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের বিতর্কিত ৯টি ধারা রহিত করে বাদ দেওয়া হয়েছে সাইবার-বুলিং সংক্রান্ত অপরাধের ধারাটি। তা ছাড়া ২৫(৩) ধারায় নারী ও শিশু সাইবার অপরাধকে শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে। বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের সুযোগ সীমিত করা হয়েছে।
পাশাপাশি চারটি অপরাধকে অজামিনযোগ্য ও এক ডজনের বেশি নতুন সংজ্ঞা যুক্ত করে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ হালনাগাদ করা হয়েছে। এর বাইরেও নাগরিকের কোনো মতামত থাকলে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনলাইনে মতামত দেওয়া যাবে।
গতকাল বুধবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আইসিটি টাওয়ারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) নাগরিক সমাজের পরামর্শে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার পরপর এই অধ্যাদেশ হালনাগাদ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রস্তাবিত সাইবার আইনে শুধু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামোতে সাইবার হামলা ও হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে যেকোনো অপরাধের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই ক্ষমতা ছিল বলে জানান তথ্য-প্রযুক্তি নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব।
আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ ও আলোচনার ভিত্তিতে অধ্যাদেশটির খসড়া হয়। এরপর টিআইবি, বিভিন্ন গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের পর্যবেক্ষণের ফলে পুনরায় অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হয় এবং পরিবর্তন আনা হয়েছে।
সচিব জানান, আবারও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে উপদেষ্টা পরিষদে। তবে এর আগে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হবে এবং ওয়েবসাইটে মতামতের জন্য ইতিমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। অধ্যাদেশটি দ্বারা যেন মানুষ নিগ্রহের শিকার না হয় এবং নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে চেষ্টা করা হয়েছে। সচিব মনে করেন, অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত হতে অন্তত ছয় সপ্তাহ লাগতে পারে।
আইসিটি সচিব জানান, এরপরও যদি কারো কোনো অভিযোগ থাকে, তবে তা জানালে আইন পাসের আগে সংশোধন, পরিমার্জনের সুযোগ থাকছে।
দেশে সুপ্রশস্ত সাইবার স্পেসকে সুরক্ষার আইনটি যাতে নিবর্তনমূলক না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হয়েছে। তবে সংস্কারের মানসিকতায় এটি নিয়মিত হালনাগাদ করা যাবে। প্যানালকোডে যেসব বিষয় আছে তা এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, বিজিডি গভসার্ট প্রকল্পের অধীনে যে কাজ চলছে, তার বাইরে জন-প্রেক্ষিতে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সিকে আরো কার্যকর করতে অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের পর এর পরিধি আরো বাড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমেদ বলেন, এই অধ্যাদেশ পূর্ববর্তী নিপীড়নমূলক আইনের অপরাধবোধের দায়মুক্তি দিতে সক্ষম হবে। ভবিষ্যতে কোনো সরকার যাতে এই আইনকে কালাকানুন হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সে দিকটায় নজর দেওয়া হয়েছে। এটা যেন নিবর্তনমূলক না হয় সে জন্য সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাইবার সুরক্ষার সংজ্ঞায় ইন্টারনেটের সার্বক্ষণিক সংযুক্তি, জাতীয় সাইবার সুরক্ষা গঠন, ব্যক্তির পাশাপাশি ভবিষ্যতের সম্ভাব্য বিষয়কেও সংযুক্ত করা হয়েছে। এই আইনে সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে এআই, মেশিন লার্নিং, ম্যালওয়ার এজেন্সিকে সংযুক্ত করা হয়েছে, যাতে এটি প্রযুক্তিনিরপেক্ষ হয়। এই আইনে রিভেঞ্জ পর্নকে অপরাধ হিসেবে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান ফয়েজ আহমেদ। এ সময় সরকারের অনুরোধে কোনো কন্টেন্ট ব্লক করা হলে তার তথ্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। আইসিটি নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, এই আইন বাংলাদেশের সব পেশাজীবীকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। শব্দ চয়নে বিতর্কিত বিষয়গুলোকে সতর্কতার সঙ্গে সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে।