যুক্তরাষ্ট্রে আতঙ্কে মুসলিমরা!
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৪:০৫:৫০ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের নিউ অরলেন্স শহরে নববর্ষ উদযাপন করা মানুষের ভিড়ের মধ্যে গত বুধবার (১ জানুয়ারি) দ্রুতগতিতে গাড়ি তুলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩৫ জন।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানিয়েছে, ট্রাকটির চালক ছিলেন ৪২ বছর বয়সী সামসুদ্দিন জব্বার। যিনি একজন মার্কিন নাগরিক এবং টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা। তিনি মার্কিন সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য ছিলেন।
সিবিএস নিউজ একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জানায়, চালক ব্যারিকেড ভেঙে জনতার ভিড়ের মধ্যে প্রচণ্ড গতিতে পিকআপ তুলে দেয় এবং ট্রাক থেকে নেমে গুলি করা শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানকার পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি চলাকালে হামলাকারী জব্বার নিহত হন।
দেশটির পুলিশ এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছে।
পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকার ডনের আজকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সম্প্রদায় হতবাক হয়েছে, সেইসঙ্গে তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরইমধ্যে আমেরিকান-ইসলামিক সম্পর্ক কাউন্সিল (সিএআইআর) ও গ্রেটার নিউ অরলিন্সের ইসলামিক শুরা কাউন্সিলসহ মুসলিম সংস্থাগুলো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, এই সন্ত্রাসী হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক বিবৃতি ঘিরে। ট্রাম্প বিবৃতিতে এই হামলার সঙ্গে অভিবাসনের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করেছেন।
ট্রাম্প বলেছেন, যখন আমি বলেছিলাম যে ক্রিমিনালরা আমাদের দেশে আসা অপরাধীদের চেয়ে অনেক খারাপ, সেই বিবৃতি ডেমোক্র্যাট ও ফেইক নিউজ মিডিয়া ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করেছে কিন্তু এটি এখন সত্য হতে শুরু করেছে।
এর আগে এফবিআই’র পক্ষ থেকে বলা হয়, হামলায় জড়িত ওই পিকআপের ভেতর থেকে ইসলামিক স্টেটের পতাকা পাওয়া গেছে। জব্বারের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় মতবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে কিনা বা তিনি কোনো ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ সঙ্গে জড়িত কিনা, তা তদন্ত করা হচ্ছে।
নিউ অরলিন্স হামলায় জড়িত সামসুদ্দিন জব্বার টেক্সাসের হিউস্টনে বাস করতেন। তিনি জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন বলে জানা গেছেন।
মার্কিন সেনাবাহিনীতে ২০০৭ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত মানব সম্পদ ও আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন জব্বার। তিনি চাকরিচ্যুত হওয়ার আগে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১০ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত আফগানিস্তানে মোতায়েন ছিলেন।
জব্বার ২০২০ সালে আর্মি রিজার্ভ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি রিয়েল এস্টেটেও কাজ করেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা তার কাছ থেকে ২০২১ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া একটি রিয়েল এস্টেটের লাইসেন্স পাওয়া গেছে।
সামসুদ্দিন জব্বার এর আগে টেক্সাসে দুটি মামলায় গ্রেপ্তার হন বলে দাবি করেছে পুলিশ। ২০০২ সালে চুরি এবং ২০০৫ সালে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর জন্য তিনি জরিমানা ও প্রোবেশন পেয়েছিলেন।
সিবিএস জানিয়েছে যে জব্বার দুইবার বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম বিয়ে ২০১২ সালে বিচ্ছেদ হয় এবং দ্বিতীয় বিয়ে ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।