যেসব কারণে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিয়ে থাকে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ৬:৪১:০২ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক: একটি দেশের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার দায়িত্বে থাকে সেনাবাহিনী। কিন্তু কিছু পরিস্থিতিতে তারা মনে করে যে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা সরকার এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতা বা সংকট সেনাবাহিনীকে ক্যু করার জন্য প্ররোচিত করতে পারে। সেনাবাহিনী ক্যু করার প্রধান কারণগুলো এ রকম—
সরকার অকার্যকর ও দুর্নীতি
যদি সরকার দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, এবং জনস্বার্থ উপেক্ষা করে কাজ করে, সেনাবাহিনী নিজেদেরকে দেশের “রক্ষক” হিসেবে দাবী করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, দুর্নীতি বা অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জনগণের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি হলে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা
যখন দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব বা সংঘাত থাকে, এবং প্রশাসন এই অস্থিরতা মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়, তখন সেনাবাহিনী ক্যু করতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী দাবি করতে পারে যে তারা “শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে” হস্তক্ষেপ করছে।
নিরাপত্তার অভাব
যদি সরকার সন্ত্রাসবাদ, অভ্যন্তরীণ সংঘাত, বা সীমান্ত সমস্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়, সেনাবাহিনী ক্যু করতে পারে।
সেনাবাহিনী এ ক্ষেত্রে “জাতীয় নিরাপত্তা” নিশ্চিত করার যুক্তি উপস্থাপন করে।
অধিকার এবং কর্তৃত্বের লোভ
কিছু ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ক্ষমতার লোভে ক্যু করেন। তারা রাজনৈতিক শাসনের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান।
এ ধরনের ক্যু প্রায়ই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের কারণে ঘটে।
জনগণের সমর্থন ও চাহিদা
যখন জনগণের বড় একটি অংশ সরকারের প্রতি আস্থা হারায় এবং সেনাবাহিনীকে তাদের রক্ষাকর্তা মনে করে, তখন সেনাবাহিনী এই সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে ক্যু করে।
এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী দাবি করে যে তারা জনগণের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করছে।
আন্তর্জাতিক প্রভাব
কোনো বিদেশি শক্তি যদি কোনো দেশের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে বা সেনাবাহিনীকে উসকে দেয়, তাহলে ক্যু ঘটতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়ে কিছু ক্যু আন্তর্জাতিক শক্তির মদদে সংঘটিত হয়েছিল।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ব্যর্থতা
যদি নির্বাচিত সরকার জনগণের সমস্যাগুলো সমাধানে ব্যর্থ হয় বা স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ শুরু করে, তখন সেনাবাহিনী নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে ক্যু করতে পারে।
সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ক্যুর কারণ যতই যৌক্তিক হোক না কেন, এটি প্রায়ই ব্যক্তিগত স্বার্থ, স্বৈরতন্ত্র এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের দিকে নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালের ২৩ মার্চ দিবাগত রাতে সেনাসদস্যরা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বাইরে চলে আসেন। সংঘটিত হয় অভ্যুত্থান। ২৪ মার্চ ভোরে সামরিক শাসন জারি করেন জেনারেল এরশাদ।
সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার টেলিভিশনে প্রচারিত এক ভাষণ দেন। তিনি বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যে জাতীয় স্বার্থে সারা দেশে সামরিক আইন জারি করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের সেই ভাষণের পরপরই ভাষণ দিয়েছিলেন জেনারেল এরশাদ।
সামরিক আইন জারি করার ১০ ঘণ্টা পর সেই ভাষণে জেনারেল এরশাদ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে শিগগিরই সাধারণ নির্বাচন করার কথা বলেছিলেন।
তারপর দেখা গেল, টানা ৯ বছর দেশ শাসন করেছেন জেনারেল এরশাদ। তাঁর স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব দলকে আন্দোলন করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। শেষ পর্যন্ত ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর গণ–আন্দোলনের মুখে পতন হয় জেনারেল এরশাদের শাসনের।