যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী পাশে থাকার পরও টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৭:৫৫ অপরাহ্ন
লন্ডন অফিস: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবকাঠামো প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তদন্তে নাম এসেছে শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকেরও।
আর এই ঘটনায় যুক্তরাজ্যে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ‘ন্যায় ও নৈতিকতা’ দল তাকে এই জিজ্ঞাসাবাদ করে। রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল ও সানডে টাইমস।
সানডে টাইমসকে উদ্ধৃতি করে ডেইলি মেইল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৩ সালে রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের একটি পারমাণবিক শক্তি প্রকল্পের চুক্তির সময় নিজের পরিবারকে প্রায় ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাৎ করতে সহায়তা করেন টিউলিপ। এই অভিযোগে মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ন্যায় ও নৈতিকতা দল মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য, তিনি ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার কাজ যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতি সামাল দেয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টিউলিপ সিদ্দিককে গত বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এই খবরটি সামনে আসে রোববার।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ সামনে আসার পর টিউলিপ সিদ্দিক দেশটির মন্ত্রিপরিষদ অফিসের ন্যায় এবং নৈতিকতা দলের (পিইটি) প্রতিনিধির সাথে বৈঠকে যোগ দিতে সম্মত হন। বৃহস্পতিবার পিইটি’র ওই কর্মকর্তা টিউলিপ সিদ্দিকের অফিসে যান। তিনি তাকে স্বাগত জানান। পরে ওই কর্মকর্তার কাছে ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের রূপপুর প্রকল্পের দুর্নীতির সাথে তার জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেন টিউলিপ।
তবে এই বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কিংবা পিইটি’র পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনোকিছু জানানো হয়নি।
প্রসঙ্গত, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (রূপপুর) নির্মাণে রাশিয়ার সাথে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন। যেখানে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল। মূলত টিউলিপ সিদ্দিকের খালা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুদক যে তদন্ত শুরু করেছে তারই আওতায় পড়েছেন টিউলিপ সিদ্দিকও।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার টিউলিপের পাশে
উল্লেখ্য, কিয়ার স্টারমার সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিককে, যিনি ট্রেজারি মন্ত্রী, যদিও বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির অংশ হিসাবে বিলিয়ন টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছে। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ান এ নিয়ে ‘‘Starmer backs minister accused of embezzling billions in Bangladesh’’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ১৯ ডিসেম্বর।
ট্রেজারির অর্থনৈতিক সচিব হিসেবে সিদ্দিকের দায়িত্বের মধ্যে আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত। তিনি এই অভিযোগের সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন।
ডাউনিং স্ট্রিট তাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করলেও, এটি স্টারমারের জন্য আরেকটি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তার জন্য একাধিক ঝামেলার মধ্যে এটি যুক্ত হলো, যার মধ্যে অন্যতম ছিল প্রাক্তন পরিবহন সচিব লুইস হেইগের আকস্মিক পদত্যাগ।
যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টি এই অভিযোগগুলোকে দ্রুতই কাজে লাগিয়েছে এবং বলেছে এটি “কিয়ার স্টারমারের বিচারের উপর সর্বশেষ কলঙ্ক।”
সিদ্দিক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি, যিনি ১৫ বছর দেশ শাসন করার পর আগস্টে একটি বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন।