নির্বাচনে কারা আসবে বা যোগ্য, সে সিদ্ধান্ত ইসির: বদিউল আলম মজুমদার
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১:০২:৫৬ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: কারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বা যোগ্য, তা নির্ধারণ করা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, এই কমিশনের কাজ কেবল নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া। আর এর মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রম উন্নত করাই মূল লক্ষ্য।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারবিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন চান উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা উপলব্ধি করেছি, মানুষের মধ্যে আগ্রহ, আবেগ ও উচ্ছ্বাস আছে। যেখানে আমাদের দেখে মানুষ দুটো কথা বলতে চায়। মনের আকুতি ব্যক্ত করতে চায়। তারা বিভিন্ন প্রস্তাব দিতে চায়। তাদের সবার আকুতি, একটা সুষ্ঠু–নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। যার মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে। এটা জন-আকাঙ্ক্ষা। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, আশা করছি যে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ ৩১ তারিখের আগেই আমরা আমাদের প্রস্তাবটা দেব। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন, নির্বাচনী ট্রেনটা যেন ট্র্যাকে উঠে। এজন্য প্রথম কাজ ছিল নির্বাচন কমিশন গঠন করা। ওনারা তাই করেছেন।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুরোনো আইনে পরিচালিত হলেও সংস্কার কমিশনের সঙ্গে তা সাংঘর্ষিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের কাজের সঙ্গে তাদের কোনোরকম সাংঘর্ষিক অবস্থান তৈরি করছে না। যাদেরকে নিয়ে অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়েছে তারা অত্যন্ত সম্মানিত এবং দলনিরপেক্ষ ব্যক্তি। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, তারা সঠিক ব্যক্তি এবং তারা আমাদের একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নাগরিক হিসেবে অনেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা আর ব্যবহৃত হতে চান না। তাঁরা চান সুষ্ঠু–নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাই সেভাবে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছি। আর হলফনামায় অনেক রকম ভুয়া, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়া হয়। তথ্য গোপন করা হয়। এগুলো যাতে যাচাই-বাছাই করা হয়, সে–সংক্রান্ত প্রস্তাব দেওয়ার কথা বিবেচনা করছি। আমাদের প্রস্তাবগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের ব্যাপারে সুপারিশ থাকবে। সংখ্যানুপাতিক আসনের পক্ষেও আছে, বিপক্ষেও প্রস্তাব আছে প্রবল। সব কটা বিবেচনায় নিচ্ছি। তবে এখানে আরেকটা জিনিস জানা দরকার, এসব সিদ্ধান্ত মূলত আমাদের নয়। এগুলোর জন্য সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। তো সংবিধান পরিবর্তনের জন্য যে কমিশন হয়েছে, তাদের এ বিষয়ে সুপারিশ করতে হবে।
আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের নির্বাচন সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, ইভিএম এর আর প্রশ্নই আসে না। ওটা হবে না। নির্বাচন কমিশনও বলেছে, আমরাও একই মত দিয়েছি।
হলফনামায় তথ্য গোপন প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রার্থীদের হলফনামায় অনেক রকম ভুয়া তথ্য থাকে, গোপনও করা হয়। আমরা এ বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়ারও পরিকল্পনা করছি। আমাদের প্রস্তাবনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এ সময় ছিলেন সংস্কার কমিশনের সদস্য স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আবদুল আলীম ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম প্রমুখ।
‘আমার বক্তব্য ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে’
এর আগে বৃহস্পতিবার আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে বলে দাবি করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘এটি কারো অজানা নয় যে, আইসিটি আইনে ইতোমধ্যেই অনেকগুলো মামলা রুজু হয়েছে, শেখ হাসিনাসহ অনেক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচন কার্যক্রম নির্ভর করবে এসব মামলা সুরাহার ওপর। কিন্তু কিছু গণমাধ্যম আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।’
বৃহস্পতিবার রাতে এক ফেসবুকে পোস্টে রংপুরে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি এ কথা বলেন।
ফেসবুকে এক পোস্টে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘রংপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনে’র উদ্যোগে অংশীজনের সঙ্গে এক সফল সংলাপের পর স্থানীয় কিছু সাংবাদিক ভবিষ্যতের নির্বাচন সম্পর্কে আমার কাছে জানতে চান। আমি বলেছি যে, আমাদের কমিশন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্বাচনী আইন-কানুন ও বিধি-বিধান সংস্কারের প্রস্তাব করবে। আমি আরও বলেছি, ভবিষ্যতে আইন-কানুন মেনে প্রস্তুত হয়ে নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করতে পারবে তাদের ব্যাপারে আমি কোনো বাধা দেখছি না। এছাড়াও এটি নির্বাচন কমিশনের বিষয়।’
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই যে, বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ও প্রাণহানির বিনিময়ে গত ৫ আগস্ট এক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিগত কয়েক বছর ধরে আমি নানানভাবে ভূমিকা রেখেছি এবং এ জন্য নানাভাবে হেনস্তার স্বীকার হয়েছি। কিন্তু আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা প্রচার আমাকে ব্যথিত ও মর্মাহত করেছে। আমি মনে করি, এ ধরনের অপপ্রচার শহীদ আবু সাঈদ ও শহিদ মুগ্ধের রক্তকে অস্বীকার করার শামিল।’




