লন্ডনে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের সংবাদ সম্মেলনে শাহরিয়ার কবিরের মুক্তি দাবি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:২৭:৪৯ অপরাহ্ন
এ রহমান অলি, লন্ডন: ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরামের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিক মানবাধিকার কর্মী শাহরিয়ার কবিরের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এমনেষ্ট্রি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক সিনিয়র রিসার্চার ও এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচ্যারার ইরানিয়ান বংশদ্ভূত আব্বাস ফায়েজ, বিবিসি‘র সাবেক ডিপ্লমেটিক সংবাদদাতা সিনিয়র সাংবাদিক ডানকান বারলেট, রেডব্রিজ কাউন্সিলের সাবেক মেয়র রয় ইম্মেট, আমরা যুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড এর কেন্দ্রীয় নেত্রী ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিস্টার তানিয়া আমির, স্যাকুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট (এসবিএম) এর প্রেসিডেন্ট ক্যাম্পেইন ফর মাইনরিটি রাইট -পুষ্পিতা গুপ্তা, মুক্তিযোদ্ধা ও আহমদিয়া এ্যাসোসিয়েশন ইউকের বাংলা শাখার ইনচার্জ এম.এ. হাদি সহ আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার লন্ডন সময় সন্ধ্যা ৬টায় ইষ্ট লন্ডনের ২৪ ওজবর্ন ষ্ট্রীটের একটি রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত উক্ত সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ অসুস্থ শাহরিয়ার কবিরকে চিকিৎসার প্রয়োজনে মুক্তি দিতে বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানান।
এমনেষ্ট্রি ইন্টারন্যাশনালের আব্বাস ফায়েজ বলেন শাহরিয়ার কবিরকে আমি অনেক বছর যাবত চিনি এবং জানি। তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার উপর যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তিনি শারিরিকভাবে অসুস্থ তার চিকিৎসার প্রয়োজন। তিনি তার সমগ্র জীবন ব্যায় করেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের জন্য। আব্বাস ফায়েজ আরো বলেন বাংলাদেশের ক্ষমতায় কে এলো কে গেল এটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা চাই মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র ও আইনের শাসন। বাংলাদেশে এখন মানবাধিকার বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। এমন অনেক বিষয় আমরা জানি। শাহরিয়ার কবিরকে বাংলাদেশের চারদলীয় জোট সরকারের সময়ও গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমরা তার জন্য কাজ করেছি। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো একজন মানমাধিকার নেতা এবং সাংবাদিককে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে। আমরা তার মুক্তি চাই। এই সরকারের সাথেও আমার যোগাযোগ হয়েছে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি সেমিনারে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেছি।
বিবিসি‘র সাংবাদিক ডানকান ভারলেট বলেন শাহরিয়ার কবির একজন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ এবং সাংবাদিক, তাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় আটক করা হয়েছে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা ভয়ে কথা বলতে পারে না, লিখতে পারে না। এটি কোন ধরনের মানবতা। বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখন একটি বিশেষ মহলের দখলে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ব্যারিষ্টার তানিয়া আমির বলেন, এই সরকারের কাঁধে অদৃশ্য শক্তি ভর করেছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ভূয়া মামলা দায়ের হচ্ছে এবং হয়েছে। এমন অসংখ্য প্রমাণ আমাদের কাছে আছে মামলার বাদীরা আসামীদের চেনেন না। অনেক বাদী স্বীকার করেছেন তারা ৫/৬ জনের নামে মামলা করেছেন, পরবর্তীতে জানতে পারছেন অনেককে এসব মামলায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ বা আইনজীবির সাথে মামলার বাদীরা যোগাযোগ করলে বলা হচ্ছে এটি আপনার বিষয় নয়, এটি আমরা দেখবো। সরকারের একজন উপদেষ্টা বলেছেন স্নাইপার রাইফেল বাংলাদেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করেনা। তাহলে যারা গুলিতে মারা গেছে বা আহত হয়েছে। তাদের কে বা কারা গুলি চালিয়েছে এটি কি খতিয়ে দেখার বিষয় নয়? শত শত পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের কথা কেউ বলছেনা। চার শতাধিক থানা লুট করা হয়েছে, অস্ত্র লুট হয়েছে। এসব কে করেছে ? এসবের সঠিক তদন্ত হলেই বোঝা যাবে এর পেছনে কাদের হাত রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর একটি মহল চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের কারাগার থেকে ছেড়ে দিয়েছে। অন্যদিকে স্বাধীনচেতা, দেশপ্রেমিক ও মুক্তমনাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
পুস্পিতা গুপ্তা বলেন বাংলাদেশে চলছে হিন্দু নিধন। শুধু হিন্দু নয় অন্যান্য সংখ্যালঘুরাও হয়রানির শিকার। অসংখ্য হিন্দু বাড়ীঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করা হয়েছে। এখনও হচ্ছে। হিন্দুরা কথা বললেই তাদের ভারতীয় দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করে চালানো হয় অত্যাচার। এমন হাজার হাজার হিন্দু প্রতিদিন অত্যাচারিত হচ্ছে। এটা কি হিন্দুদের দেশ নয়? হিন্দু মুসলিম সকলে মিলে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। হিন্দুদের জোর করে দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। চিম্ময় বাবু একজন সাধু মানুষ তাকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে। তিনি একজন নিরামিশভোজি। আদালত থেকে তাকে সুযোগ সুবিধার দেওয়ার কথা বলা হলেও কারাগারে তিনি সেসব সুযোগ পাচ্ছেন না। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের সাথে তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে। তার জীবন হুমকীর সম্মুখীন।
মুক্তিযোদ্ধা এম. এ, হাদি দেশের বিভিন্ন স্থানে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরে বলেন আহমদিয়ারা কি বাংলাদেশের নাগরিক নয়? দেশের বিভিন্ন স্থানে আহমদিয়া মসজিদ ভাঙচুর সহ অসংখ্য ঘটনার বিবরন দেন। তিনি বলেন শুধু আহমদিয়া বা শিয়া সম্প্রদায় নয় বাংলাদেশের পীর আউলিয়া সুফি দরবেশরাও অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা। প্রতিদিনই ভাঙ্গা হচ্ছে মাজার ও পীর আউলিয়াদের আস্তানা।
রেডব্রিজ কাউন্সিলের সাবেক মেয়র রয় ইম্মেট বলেন বাংলাদেশ এখন উগ্রবাদিদের দখলে। নেই আইনের শাসন, নেই মানবাধিকার। আমরা বাংলাদেশ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন, এতে বিপুল সংখ্যক ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।