আলতাব আলী পার্কে ‘বিজয়ফুল ২০২৪’ কর্মসূচীর উদ্বোধন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯:১৩:৫৫ অপরাহ্ন
নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, লন্ডন: বিশ্বব্যাপী শুরু হয়েছে বিজয়ফুল এর কর্মসূচী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই বেগবান করার অঙ্গিকার নেয়ার মধ্য দিয়ে লন্ডনে বিজয়ফুল কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। এর প্রতিপাদ্য ‘আসুন ১ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ফুল কর্মসূচি পালন করি, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে সমুন্নত রাখি’।
পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনারের পাদদেশে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় ৩০শে নভেম্বর সন্ধ্যা ৬ টায় ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ দেশাত্ববোধক গানের মাধ্যমে একে অপরকে বিজয়ফুল পরানোর মধ্য দিয়ে, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে স্যালুট দেওয়ার মাধ্যমে এবং প্রদীপ জ্বেলে ও মিনারে বিজয়ফুল স্থাপন করে ‘বিজয়ফুল ২০২৪’ এর কর্মসূচীর উদ্বোধন করা হযয়েছে।
‘ডিসেম্বর মাস, বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। বিশ্বের যেখানেই থাকুন বিজয়ের মাসে প্রতিদিন বিজয়ফুল পরুন, বিজয়ের গৌরবে সমুন্নত থাকুন এবং ‘৭১ এর শহীদদের স্মরণ করুন আর বাংলাদেশের বিজয়কে বুকে ধারণ করুন’ শ্লোগান এর মাধ্যমে ডিসেম্বর মাসের ১ থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত বিশ্বের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের গল্পবলা এবং প্রতিদিন বিজয়ফুল পরার আহবান জানিয়ে প্রতি বছরের মত এবারও শুরু হয়েছে বিজয়ফুল কার্যক্রম।
বিজয়ফুলের উজ্জীবক কবি মিল্টন রহমানের সঞ্চালনায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসাইন, বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌস সুলতান, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাহার সৈয়দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ গোলাম আলী।
আরও পড়ুন—গ্রেটার যশোর এসোসিয়েশন ইউকের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
সভায় বক্তারা বলেন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে লুপ্ত চেতনা পুনরুদ্ধার করার জন্য এবং চিন্তা-চেতনার অবক্ষয় দূর করার জন্য বিজয়ফুল কর্মসূচির গুরুত্ব অপরিসীম। নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বার্তা পৌঁছে দিব এটাই আমাদের অঙ্গীকার। দেশ -বিদেশে সর্বস্তরের মানুষকে, বিশেষ করে নব প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করে এই কর্মসূচি পালন করা প্রয়োজন । নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা-চেতনা, বাংলাদেশের যে গৌরবময় ঐতিহ্য সেটাকে তুলে ধরা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, এবছর অক্সফোর্ড, এলএসই ও ইউসিএল বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ছাত্র সংগঠন ও গবেষণা বিভাগ বিজয়ফুল নিয়ে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বিজয়ফুল আর উজ্জীবক শামীম আজাদ, ঊর্মি মাজহার, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, অপু ইসলাম, রেজাউল করিম, স্মৃতি আজাদ, সিনথিয়া আশরাফ, শামীমা মিতা, ফিরোজ আহমেদ বিপুল, সেলিনা হায়দার, মোশতাক আহমেদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রবাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাসকে তুলে ধরার জন্য বিজয়ফুল কর্মসূচি গত ১৮ বছর যাবৎ পালিত হয়ে আসছে। কবি শামীম আজাদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি ও ক্যম্পেইন শুরু করেন এবং এরই ধারাবাহিকতায় বিজয়ফুল এর সৃষ্টি। বহির্বিশ্বে বসবাসরত বাংলাদেশীদের কাছে বিজয়ফুল হয়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক।
বিজয়ফুল তৈরীর সময়ে একটি ক্রিয়েটিভ কর্মকান্ডের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের কাছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার সুযোগটা পাওয়া যায়। বিজয়ফুল একটা উপলক্ষ্য। বাচ্চারা বিজয়ফুল তৈরী করার সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা পাশে বসে মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ জয়ের গল্প শোনান। এতে নতুন প্রজন্মের কাছে একাত্তরের বার্তা পৌঁছে যায়। ছেলেমেয়েরা যখন নিজ হাতে পাঁচটি সবুজ পাপড়ি ও একটি লাল গোলকের সম্মিলনে ফুল তৈরী করে, তখন তাদের শেখানো হয় মাঝখানের বৃত্ত আমাদের বিজয়ের লাল সূর্য, আর পাঁচটি পাপড়ির মাধ্যমে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা-নানা ধর্মের মানুষের সহমর্মিতা, আমাদের মৌলিক অধিকার, দেশের নদী, সবুজ প্রকৃতি ইত্যাদি। তাই বিজয়ফুল বানানোর সময় নতুন প্রজন্মের সামনে গোটা বাংলাদেশের চিত্র ফুটে ওঠে। বিজয়ফুল শুধু লন্ডনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি ডিসেম্বরে বহু বাঙালী বুকে বিজয়ফুল পরেন, হৃদয়ে বিজয়ের চেতনা ধারণ করেন।
বিজয়ফুল এর আন্তর্জাতিক শুভেচ্ছা দূত হলেন ডঃ সেলিম জাহান এবং বিজয়ফুল এর লন্ডনে অপর দুজন শুভেচ্ছা দূত হলেন গৌরী চৌধুরী এবং ঊর্মি মাযহার।