ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশ, চীন, ভারত, আওয়ামী লীগের লাভ ক্ষতি কি?
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২২:৩৮ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা বিশ্ব। এটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের নির্বাচনের মতো নয়, এর ওপর নির্ভর করে বিশ্বরাজনীতি। এ নির্বাচনের ফলে মোড় নেবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক।
ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের লাভ না ক্ষতি: ৫ আগস্টের পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। মব জাস্টিসের মাধ্যমেও তারা কয়েকজন নিহত হয়েছেন। গুঞ্জন আছে, নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে তার কাছে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনে সহায়তা চাওয়া হতে পারে। তবে এ স্বপ্ন পূরণ হবে না বলে মনে করেন দেশের কূটনীতিকরা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সফিউল্লাহ বলছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে যেহেতু ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়বে। তাই ভারত প্রভাব খাটিয়ে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে পারলেও ট্রাম্পের কাঁধে চড়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের সুযোগ নেই। অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলছেন, ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসা না আসাতে কিছুই পরিবর্তন হবে না। তবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়লে এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে। একই সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের মতো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা ঘামানো কমবে। আর সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি একই থাকে, যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন। তাই আলাদা করে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক খুব মধুর হওয়ার মতন কিছু দেখছি না।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনে ট্রাম্পের নিন্দা নতুন কৌশল: বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার এক্সে (টুইটার) পোস্ট করেন ট্রাম্প। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন যে, তিনি ক্ষমতায় থাকলেও এমনটা হতো না। এই সাবেক প্রেসিডেন্ট আরও লেখেন, ক্ষমতায় এলে নরেন্দ্র মোদির (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও বাড়বে। পরে সবাইকে হিন্দুদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দীপাবলির শুভেচ্ছাও জানান ট্রাম্প। তবে হঠাৎ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে ট্রাম্পের এত আগ্রহের কারণ অন্যভাবেই দেখছেন কূটনীতিকরা। সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সফিউল্লাহ মনে করেন, ৫ নভেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে আমেরিকান-ভারতীয় কমিউনিটির সমর্থন ও ভোটের জন্যই ট্রাম্প সংখ্যালঘুদের নির্যাতনে নিন্দা জানিয়ে নতুন কৌশল ব্যবহার করছেন। তবে অধ্যাপক ইমতিয়াজ বলছেন, বর্তমানে যেহেতু সমালোচনা আছে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে। তাই তিনি বিষয়টিতে আরও জোর দিয়েছেন। কারণ, এতে তিনি ভারতীয়দের সমর্থন পেতে পারেন।
ট্রাম্প না কমলা, কাকে ক্ষমতায় চায় বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো: বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী দেশ চীন। চীনের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়লে তা বাংলাদেশের জন্যও হুমকির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুল হক বলছেন, চীন চায় ট্রাম্প ক্ষমতায় আসুক। কারণ, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংকট দেখা দেয়। ফলে চীন শক্তিশালী বলয় তৈরি করতে পারে। এদিকে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলছেন, ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক কমলেও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ক্রমেই বাড়বে। আর সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির মনে করেন, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ট্রাম্প এলে বাড়বে; কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে কিছুটা সমস্যায় পড়বে ভারত। কারণ, ট্রাম্প আগেও ক্ষমতায় এসে নিজ দেশের অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ট্রাম্প জিতলে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করলে বৈশ্বিকভাবে এর প্রভাব পড়বে বলে জানান সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সফিউল্লাহ।
কমলা এলে কী সুবিধা বাংলাদেশের: ট্রাম্প না কমলা, বাংলাদেশের জন্য সুখকর হবে কে জিতলে! নির্বাচনের আগে এখন এমন প্রশ্নই ঘুরছে। তবে কূটনৈতিক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, কমলা ক্ষমতায় এলে লাভবান হবে বাংলাদেশ। সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলছেন, ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় বহাল থাকলে বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, সেভাবেই থাকবে; বরং কিছু ক্ষেত্রে হয়তো সহায়তা বা চুক্তি আরও বাড়বে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানেও তারা সহায়তা করবে। আর অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, কমলা ক্ষমতায় এলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সম্ভাবনা বাড়ানোতে জোর দিতে পারেন। এদিকে সাবেক আরেক রাষ্ট্রদূত এম সফিউল্লাহ বলছেন, ট্রাম্প মুসলিমবিদ্বেষী। তাই ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে মুসলিম দেশগুলো চাপে থাকবে। তবে ডেমোক্র্যাটরা মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যায়।