প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে নিসচা বড়লেখা শাখার স্মারকলিপি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩:১০:১৭ অপরাহ্ন
আশফাক আহমদ, বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের বড়লেখায় নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা’র) ইতিহাস বদলে ফেলার অপচেষ্টার প্রতিবাদে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজরাতুন নাঈন ও নবাগত (ইউএনও) তাহমিনা আক্তারের কাছে স্বারকলিপি প্রদান করে হয়েছে।
নিসচা বড়লেখা উপজেলা শাখার সভাপতি তাহমীদ ইশাদ রিপনের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার দুপুরে নিসচা চেয়ারম্যানের প্রতি বৈষম্যমুলক আচরণ ও নিসচার ইতিহাসকে বদলে ফেলার বিষয়গুলো ইউএনও সামনে উপস্থাপন করা হয় এবং স্বারকলিপিটি প্রধান উপদেষ্টার নিকট পৌছে দিয়ে এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানানো হয়।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন, বড়লেখা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও পৌর প্রশাসক মোহাম্মদ আসলাম সারওয়ার, নিসচার সিনিয়র সহ সভাপতি মার্জানুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আইনুল ইসলাম, মাসব্যাপী উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মো. জমির উদ্দিন, দপ্তর সম্পাদক এনাম উদ্দিন, কার্যকরী সদস্য অসিম কর।
উল্লেখ্য, এ বছরের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ সরকারের বিদায়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের ভুমিকা ছিল সর্বজনবিদিত। জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা স্বৈরশাসকের বিদায়ে মানুষ যখন হাফ ছেড়ে বেঁচেছিলো তখন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের আকাশে কালোমেঘের ঘনঘটা দেখা দিবে তা কখনোই সড়ক যোদ্ধা তথা নিসচা কর্মিরা কল্পনাও করতে পারেনি।
যার একটি জলজ্যান্তপ্রমাণ মিললো ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ২০২৪ এর সরকারি অনুষ্ঠানে। দিবসটির প্রস্তুতি সভায় সেখানে নিরাপদ সড়ক চাই-এর ভূমিকাকে গৌণ করে রেখেছিল। প্রস্তুতি সভাগুলোতে না পারার মতো আমন্ত্রণ এবং উপস্থিতি সদস্য সংখ্যা তালিকা ছোট করে নামকাওয়াস্তে আমন্ত্রণ জানিয়ে তারা খ্যান্ত থাকেননি গত সাত বছরের রীতি রেওয়াজ যেগুলো সাধারণত অতিত কর্মকান্ড পরিচালনায় কনভেনশন আকারে চিহ্নিত হয়ে থাকে সেটারও ব্যত্যয় ঘটানো হয়। বিশেষ করে বিশেষ দিনগুলোতে সেরকম কারো অবদানে প্রেক্ষাপট রচিত হলে তাঁকে নানা আয়োজনে সম্মান জানানো হয়, অবদানের কথা তুলে ধরা হয়। যেহেতু ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস ইলিয়াস কাঞ্চন এবং নিরাপদ সড়ক চাই-এর দাবি ও নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াসে এসেছিলো সেকারণে বিগত দিনে যে সরকারই ক্ষমতায় ছিলো এই দিবসে ইলিয়াস কাঞ্চনকে একটা সম্মান জানানো হতো। ইলিয়াস কাঞ্চন সেদিন রোড সেফটির উপরে এবং সড়ক নিরাপত্তায় বিষয়ে নানা তথ্য তুলে ধরতেন। কিন্তু ব্যাতিক্রম ঘটে এইবারের সরকারি অনুষ্ঠানে। ইলিয়াস কাঞ্চনকে অনুষ্ঠানের সম্মুখ সারিতে বসিয়ে রাখা ছাড়া আর কোন সম্মান দেয়া হয়নি। এবং অনুষ্ঠানে নিসচাকে খাটো করে কতিপয় শিক্ষার্থীদের সম্মুখসারিতে তুলে এনে সেখানে তারা নিয়ে আসে ২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলনের কথা। আমরা নিসচা কর্মিরা মনে করছি এই শিক্ষার্থীদেরকে সরকারের ভেতরে থাকা ফ্যাসিবাদ সরকারের দোসর ও পরিবহন সেক্টরকে যারা লুটেপুটে খেতে চায় তাদের একট পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। এবং তাদের চাপের মুখে ইলিয়াস কাঞ্চনকে সেখানে কোন বক্তব্য প্রদানের সুযোগ পর্যন্তদেয়া হয়নি। এতকিছুর পরও ইলিয়াস কাঞ্চনসহ সড়ক যোদ্ধারা কষ্ট হলেও মেনে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান করছিলো। কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে যখন নিরাপদ সড়ক চাই-এর অস্তিত্বের ওপর আঘাত হানে এই মর্মে যে, ২০১৮ সালের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সূচনা হয় এই কথা জোরালোভাবে তুলে ধরা হয় এই অনুষ্ঠানে। বলা হয় এদেশের মানুষের স্বপ্ন দেখা এবং সড়ক নিরাপদ করার পরিকল্পনার কথাগুলো উঠে আসে ২০১৮ সালের পর থেকে। তাহলে প্রশ্ন জাগে ১৯৯৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রয়াস এবং কোটি কোটি জনতার আবেগের প্রেক্ষাপট কোথায় হারিয়ে গেল? নাকি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক চাই ও ইলিয়াস কাঞ্চনকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চায় একটি স্বার্থন্বেসী মহল? আমরা মনে করি এই ইতিহাসকে তারা চাপা দিতে চেয়েছিলো। যার পরিপ্রেক্ষিতে ইলিয়াস কাঞ্চন তার সড়ক যোদ্ধাদের নিয়ে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
আমরা এই ঘটনার তীব্রনিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আপনার মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে জানাতে চাই নিরাপদ সড়ক চাই এই আন্দোলনটি ইলিয়াস কাঞ্চন- এর একার হলেও এটা এখন ১৮ কোটি মানুষের প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে। এখন এটা সর্বজনবিদিত।