‘প্রতিষ্ঠিত বৃটিশ-বাংলাদেশিরা বাংলাদেশ থেকে কিছু নেওয়ার না থাকলেও দেওয়ার অনেক আছে’
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২:১৬:৪২ অপরাহ্ন
লন্ডন অফিস: বৃটেনের প্রতিথযশা আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও লন্ডনের নিউহ্যাম বারার টানা তিনবারের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বৃটেনপ্রবাসীদের অবদান ছিল অপরিসীম। দেশ স্বাধীনের পর যখন সরকারি কোষাগার একেবারে খালি ছিল ঐ সময় বৃটেন প্রবাসীরা অর্ধ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়েছেন যা এখনকার মূল্যে বিশাল অংকের টাকা। বৃটেনের প্রবীণ প্রবাসীরা অতীতে রুজি-রোজগার করে সব টাকা দেশে পাঠিয়ে সম্পত্তি করেছেন, বাড়ি-ঘর বানিয়েছেন ও বিনিয়োগ করেছেন বিভিন্ন খাতে। আজ এগুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে। পাওয়ার অব এটর্নির জটিলতার কারণে তাদের বংশধররা সম্পত্তির আইনগত উত্তরাধিকার হতে পারছেন না। এমতাবস্থায় বাংলাদেশে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের সম্পদ সুরক্ষায় অন্তবর্তীকালিন সরকার জরুরি পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
ব্যারিস্টার নাজির আহমদ আরও বলেন, প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশের বাহিরে বসবাস করছেন। সবাইকে এক পাল্লায় রেখে একভাবে দেখা উচিৎ নয়। মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের তেমন কোন অবস্থান বা অধিকার না থাকলেও বৃটেনে বৃটিশ-বাংলাদেশিরা সুপ্রতিষ্ঠিত। এখানে শত শত দক্ষ প্রফেশনাল আছেন যারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলছেন। হাজার হাজার অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ ও লন্ডন গ্রেজ্যুয়েট আছেন যারা বাংলাদেশ পূনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আধুনিক মালয়েশিয়া নির্মাণে ড. মাহাথির মুহাম্মদ বৃটেনে এসে বৃটিশ- মালয়েশিয়ানদের মধ্যে টেলেন্ট হান্ট করতেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এমনটি করা উচিৎ বলে মনে করে ব্যারিস্টার নাজির বলেন, সুপ্রতিষ্ঠিত বৃটিশ বাংলাদেশিরা বাংলাদেশ থেকে তেমন কিছু নেয়ার না থাকলেও দেয়ার অনেক কিছু আছে।
১১ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় লন্ডন মুসলিম সেন্টারে সেন্টার ফর বৃটিশ বাংলাদেশি (সিএফবিবি)-এর উদ্যোগে “বাংলাদেশে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের সম্পদ সুরক্ষায় করণীয়” শীর্ষক এক সেমিনারে অন্যতম প্রধান আলোচক হিসেবে ব্যারিস্টার নাজির উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। সেমিনারে অপর আলোচক ছিলেন বৃটিশ-বাংলাদেশী ট্রাইবুনাল জাজ ব্যারিস্টার নজরুল খসরু।
সিএফবিবি’র সভাপতি কাউন্সিলর ড. জামাল উদ্দীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সিএফবিবি’র জেনারেল সেক্রেটারি দেলোয়ার খাঁন, ট্রেজারার বাবলুল হক বাবুল, সাংবাদিক আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, মোসাদ্দিক আহমদ ও আইয়ুব খাঁন। প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য রাখেন ইস্ট লন্ডন মস্ক ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের সিনিয়র কর্মকর্তা আসাদ জামান, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারি ও সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, মাওলানা আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে বৃটিশ-বাংলাদেশীদের সম্পদ অরক্ষিত। একশ্রেণীর সুযোগ সন্ধানী মানুষ সবসময় ওঁৎপেতে বসে থাকে, সুযোগ পেলেই সেই সম্পদ নিজেদের দখলে নিয়ে নেবে। ইতিমধ্যে অনেক বৃটিশ-বাংলাদেশীর সম্পদ দখল হয়ে গেছে। নিজের সম্পদ দখলমুক্ত করতে তারা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, কিন্তু প্রকৃত সহযোগিতা পাচ্ছেন না। প্রশাসন অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রবাসীদের পক্ষ না নিয়ে দখলকারির পক্ষ নিয়ে থাকে। ফলে দখলকারিরা বহাল তবিয়তে রয়েছে। বক্তারা বলেন, একটি অরাজনৈতিক সরকার বর্তমানে দেশ পরিচালনা করছে। এটা একটি উপযুক্ত সময়, দেশের সম্পদ নিয়ে আমাদের আশংকার বিষয়টি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে তুলে ধরা । নতুবা আমাদের আমাদের অবর্তমানে একসময় সেই সহায় সম্পদ বেদখল হয়ে যাবে। তারা বলেন, বাংলাদেশের মন্ত্রী এমপিরা লন্ডনে এলে তাদেরকে কাছে আমরা দাবী দাওয়া পেশ করি। কিন্তু বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার পর তাদের আর সেই দাবীর কথা মনে থাকে না। তাই এখন থেকে তাদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
ব্যারিস্টার নজরুল খসরু তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি দ্বৈত নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং উত্তরাধিকার আইনের সহজীকরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মূল বক্তব্যে ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ বৃটিশ-বাংলাদেশীদের ভোটাধিকারের দাবি বাস্তবায়ন, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি ও পাওয়ার এটর্নি প্রদান সহজীকরণ, পাসপোর্টের জন্য আবেদনের পর পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে ঘুষবাণিজ্য বন্ধকরণসহ বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানী বন্ধের দাবী জানান। তিনি বলেন, এগুলো করতে পারলে আরো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আকারে প্রবাসীরা দেশে পাঠাবে, বিনিয়োগ দ্বিগুন থেকে তিনগুন বৃদ্ধি পাবে এবং ট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। ফলে দেশের অর্থনীতির চাকা চাঙ্গা হবে, দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাবে।