বাংলাদেশ সেন্টার লন্ডনের জরুরি সংবাদ সম্মেলন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৩:০৯ অপরাহ্ন
ফজলুল হক লন্ডনঃ বাংলাদেশ সেন্টার লন্ডনের কাউন্সিল অফ ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষ থেকে সেন্টারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সর্বশেষ আপডেট জানাতে সোমবার ৭ অক্টোবর পূর্ব লন্ডনের লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সেন্টার লন্ডনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেন্টার শুধু একটি ভবন নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন, যা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রচারণার প্রধান ভিত্তি হিসাবে কাজ করেছিল এবং যুক্তরাজ্যে প্রথম বাংলাদেশী মিশন ছিল। বাংলাদেশ সেন্টার এই যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি কমিউনিটির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশ সেন্টার একটি নিবন্ধিত দাতব্য সংস্থা হিসেবে এর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ সেন্টারের কাউন্সিল অফ ম্যানেজমেন্ট কমিটি বিগত সময়ে কোন প্রতিদ্বন্দ্বীতা পূর্ণ নির্বাচন ছাড়াই নিয়মতান্ত্রিক ধারা অনুসরণ করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত হতো এবং ওই ঐকমত্যের কমিটি সেন্টারের কার্যক্রম পরিচালনা করতো।
সেন্টারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর রোববার ইমপ্রেশন ইভেন্ট ভেন্যুতে বাংলাদেশ সেন্টারের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই ঐতিহাসিক নির্বাচনে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যালায়েন্স, রেড অ্যালায়েন্স এবং গ্রিন অ্যালায়েন্স একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। রেড অ্যালায়েন্স সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। উক্ত নির্বাচনে কাউন্সিল অফ ম্যানেজমেন্ট কমিটির শূন্য পদ পূরণের জন্য ১৭ জন ‘সাধারণ ও জীবন সদস্য’ এবং ১৮ জন স্থায়ী সদস্য সফলভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেন্টারের সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সভাপতি ব্যতীত কাউন্সিল অফ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সকল পদ নির্বাচিত সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এজিএম ও নির্বাচন শেষে সেন্টারের ঐতিহ্য অনুযায়ী মোঃ দেলোয়ার হোসেনকে সর্বসম্মতিক্রমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর পরবর্তী কাউন্সিল অব ম্যানেজমেন্টের সভায় অবশিষ্ট পদগুলো পূরণ করা হয়।
২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর মান্যবর হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম কাউন্সিল অফ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সকল সদস্য, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, স্থায়ী সদস্য, কর্পোরেট সদস্য, সাধারণ ও আজীবন সদস্যসহ সকল সদস্যকে একটি সভায় আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করেন। তাঁর আহবানে ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে সভা হওয়ার কথা ছিলো। অযাচিত উক্ত সভা আহ্বান বাংলাদেশ সেন্টার নিয়ে চরম উদ্বেগ ও বিতর্কের জন্ম দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, রেড অ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ছাড় দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। অপর পক্ষ গ্রিন অ্যালায়েন্সের এক গুয়েমী মনোভাবের জন্য কোন সমঝোতা ছাড়া বৈঠক সমাপ্ত হয়।
তাদের কর্মকাণ্ড কাউন্সিল অফ ম্যানেজমেন্ট কমিটির অতীতে দায়িত্বে ছিলেন এমন কতিপয় সদস্যদের কূট কৌশলকে উৎসাহিত করছে; যারা কমিউনিটির মধ্যে অপ্রয়োজনীয় বিভাজন তৈরি করতে ব্যস্ত। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী জনাব মুহিবুর রহমান মুহিবের নেতৃত্বাধীন গ্রিন অ্যালায়েন্স হাইকমিশনারের অন্যায় সমর্থন নিয়ে একটি পৃথক কমিটি গঠন করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, কমিটি গঠনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে গ্রিন অ্যালায়েন্স পাল্টা কমিটি গঠন করে। ১১ জানুয়ারি ২০২৪ সালে একটি সভা করে। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব মুহিবুর রহমান মুহিব। অবৈধ এ সভায় বাংলাদেশ সেন্টারের পুরো ব্যাংক অ্যাকাউন্টটি ছিনিয়ে নেয়ার সিন্ধান্ত নেন এবং ব্যাংকে তিনজনকে অন্তর্ভুক্ত করে অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেসের জন্য ভূয়া কাগজপত্র ও ম্যান্ডেট ফর্ম প্রদান করেন। বাংলাদেশ সেন্টারের নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস পরিবর্তন করার অপচেষ্টা করা হলে ব্যাংক থেকে তাৎক্ষনিক ভাবে অনুমোদিত অন্যতম স্বাক্ষরকারী হিসেবে সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনকে ব্যাংক ম্যানেজার ইমেইলে যোগাযোগ করেন।এরকম জালিয়াতির ইমেইল পেয়ে সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন সরাসরি ব্যাংকে যান। ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে মিটিং করেন।
যারা এ জালিয়াতির সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন, তারা হচ্ছেন ফায়জুল হক, নাসিম আহমেদ ও সেন্টারের প্রধান নির্বাহী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান।এই ম্যান্ডেট ফর্মে সত্যায়িত করেন জনাব মুহিবুর রহমান।যেহেতু এই কাজটি জালিয়াতি ও অসাংবাধানিক আমরা বাধ্য হয়ে পুলিশ এবং চ্যারিটি কমিশনকে ঘটনাটি রিপোর্ট করা সহ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি।
৮ আগস্ট ২০২৪ কাউন্সিল অফ ম্যানেজমেন্টের কমিটির সভায় জনাব মুহিবুর রহমান মুহিবের ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসাংগঠনিক আচরণ অব্যাহত ছিল, বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে যেখানে তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিলেন, যার জন্য পুলিশের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়েছিল। সাংগঠনিক আচরণবিধি লঙ্ঘন , ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জালিয়াতি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য কাউন্সিল অফ ম্যানেজমেন্টের ২৮ আগস্ট / ২০২৪ সালের সভায় জনাব মুহিবুর রহমানকে সর্বসম্মত ভাবে সেন্টারের সদস্যপদ আজীবনের জন্য বাতিল করা হয়।এছাড়া সভায় ফায়জুল হক ও নাসিম আহমেদের বিরুদ্ধে সতর্কতা নোটিশ প্রদান করা হয় এবং তাদেরকে কাউন্সিল অফ ম্যানেজমেন্টের পরবর্তী একটি সভার জন্য বরখাস্ত করা হয়।
এছাড়া সেন্টারের প্রধান নির্বাহী এস এম মোস্তাফিজুর রহমান স্ব উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে ব্যাংকের একাউন্টের ম্যান্ডেট ফর্মে আইন লঙ্ঘন করে স্বাক্ষর করেছেন। সাংবিধানিক ভাবে সেন্টারের প্রধান নির্বাহীর ব্যাংকের একাউন্টের স্বাক্ষরকারী হওয়ার কোন বিধান নেই। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান এ কাজ করা কোন ভাবেই উচিত হয়নি।প্রকাশ্যে তিনি জালিয়াতিতে অংশগ্রহণ করেছেন। এটা একটি বড় ধরণের অপরাধ।
সেন্টারের শৃংখলা, আচরণবিধি লঙ্ঘন ও একাউন্টের ম্যান্ডেট ফর্মে স্বাক্ষরকারী হিসেবে অবৈধ ভাবে স্বাক্ষর প্রদান করায় প্রধান নির্বাহী এস এম মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ, আপনাদের উপস্থিতির জন্য আবারও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ সেন্টার লন্ডনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনাদের যেকোন প্রশ্ন বা উদ্বেগের সমাধান করার জন্য আমরা প্রস্তুত।
এ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ভাইস চেয়ারম্যান তফজ্জল মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী বেবুল।
এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান গুলনাহার খান, ভাইস চেয়ারম্যান মামুন রশীদ , চীফ ট্রেজারার শিব্বীর আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক জিলু, ফাইনান্স এন্ড ফান্ড রাইজিং উপ কমিটির আহবায়ক মোহাম্মদ ময়নুল হক, পার্মানেন্ট মেম্বার শাহানুর খান, পার্মানেন্ট মেম্বার মানিক মিয়া, পার্মানেন্ট মেম্বার জাকির হোসেন।