আন্দোলনে আহত ২৩ হাজারের মধ্যে ৪শ জনের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত, নিহত ৭৩৭: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ৯:২৮:১০ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে মারা গেছে ৭৩৭ জন। আর আহত হয়েছেন আরও ২৩ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে অন্তত ৪০০ জনের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাদের অনেকে দুই চোখেরই দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন।
আজ সোমবার, সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সহায়তা নেয়ার কথাও জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম । তিনি বলেন, নিহতে এই তথ্য যাচাই করা হয়েছে।
জুলাই-আগস্টের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে আহতদের এখনও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে যারা চোখ হারিয়েছেন তাদের চিকিৎসায় নেপাল, চীন ও ফ্রান্সের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। তাদের পরামর্শেই এই রোগীদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার কথা ভাবছে সরকার।
সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য উপদেষ্ট নুরজাহান বেগম বলেন, জুলাই-আগষ্টের গণঅভুত্থানে নিহত হয়েছেন ৭৩৭ জন। আর আহত হয়েছেন আরও ২৩ হাজার। গুরুতর আহত প্রায় ৭০০।
নুরজাহান বেগম বলেন, নিহতের যে তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে সেটি কিন্তু সর্বশেষ তালিকা না। কারণ তখন পর্যন্ত আহতদের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছিল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস সিস্টেমে আপডেট করা হচ্ছে। আজ পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, সেখানে ৭৩৭ জন নিহতের তথ্য আছে। এবং এগুলো আমাদের যাচাই করা। ছাত্রদেরও কিছু তথ্য আছে, দেড় হাজারের ওপরে, সেগুলো আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করছি। তাদের তালিকা আমাদের কাছে এলে আমরা দেখবো। কারণ কোনও কোনও ক্ষেত্রে ওভারল্যাপিং হতে পারে। সেগুলোকে বাদ দিলে আসল তালিকা পাওয়া যাবে।
আহতদের মধ্যে ছররা গুলিতে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০০ জনের। যাদের অনেকেই চিরতরে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য এরিমধ্যে চীন নেপাল ও ফ্রান্সের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাজ্য থেকে আসছে আরেক দল চিকিৎসক।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা বলেন, তালিকা করার সময় নিহতদের ক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হয়েছে। হাসপাতালে যারা ভর্তি হয়েছেন, অনেককেই তো মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছে। ওই সময় তাদের কারও কারও ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল, ‘ডেথ সার্টিফিকেট লাগলে পোস্টমর্টেম করতে হবে, পুলিশ কেস করা লাগবে’। এগুলো করার ভয়ে অনেকেই লাশ নিয়ে গেছে।
আবার কিছু কিছু এসেছে তাদের পরিবারের ঠিকানা ভুল লেখা ছিল। কারণ তারা ভয় পেয়েছে। কাজেই যেই ভুল ঠিকানা দেওয়া হয়েছে আমাদের সেটি নিয়েই কাজ শুরু করতে হয়েছে। আমাদের এগুলো প্রত্যেকটি ঠিকানা ভেরিফাই করতে হয়েছে। এগুলো এখন আমাদের হাতে রয়েছে, ভেরিফাইড করা।
তিনি আরও যোগ করেন, ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। তাদের তালিকাটি নিয়ে ডিসি এবং সিভিল সার্জন পর্যায়ে এগুলো পাঠিয়ে দেবো, সেখান থেকে তথ্য নিয়ে আমরা সেগুলো ভেরিফাই করবো এবং কনফার্ম করবো নিহতের সংখ্যা আসলে কত। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত ৭৩৭ জনের ভেরিফাই করা তথ্য আছে। আহতদের সংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার।
আহতদের বিষয়ে তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন চোখে আঘাতপ্রাপ্ত, তারা সবাই হাসপাতালে ভর্তি ছিল। আবার হাত-পা কাটা গেছে এমন অনেক আছে, তাদের আমাদের তালিকার মধ্যে আনা হয়েছে। যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল সেগুলো তথ্য সব যাচাই করা। এর মধ্যে ৩৫ জন দুইটি চোখ হারিয়েছে। ২২ জন কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের তালিকায় আছে। তবে এই সংখ্যা আরও কিছু বাড়তে পারে।
উপদেষ্টা জানান, গেলো বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। এই মৌসুমে মৃত্যের সংখ্যা এখনও দুশোর ঘর ছাড়ায়নি। হাসপাতালে যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে।
স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের একটা খসড়া করা হয়েছে। চিকিৎসকদের মতামতের পর সেটি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে জমা দেয়া হবে বলেও জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।