প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩৯%, রিজার্ভ নামবে না এবং দ্রব্যমূল্য কমবে যে কারণে জানালেন গভর্নর
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১:১১:৫৯ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: দেশে গত আগস্ট মাসে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি মার্কিন ডলার (২ দশমিক ২২ বিলিয়ন)। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ (প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে) ২৬ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। রোববার এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডলারের দর একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। এই অবস্থা থাকলে আগামী ৬-৭ মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। বন্যা যদিও একটু দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে। তবে আশা করা যায় এটাও দ্রুত ঠিক হয়ে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বুধবার (২৮ আগস্ট) গভর্নর এসব কথা বলেছেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘রিজার্ভ থেকে এখন কোনো ডলার বিক্রি করা হচ্ছে না। তাই রিজার্ভ কমার আশঙ্কা নেই। সরকারের চাহিদা আন্তব্যাংক বাজার থেকে ডলার নিয়ে মেটানো হচ্ছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ডলার। মাস হিসেবে আগস্টে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬২ কোটি ডলার বা প্রায় ৩৯ শতাংশ। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬০ কোটি ডলার। এছাড়া প্রবাসী আয় আগের মাসের চেয়ে ৩০ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার বেশি এসেছে। গত জুলাই মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
আগস্টে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৮ কোটি ৩৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৭ কোটি ৮১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১৭৫ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
এদিকে রেমিট্যান্স বাড়ায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভে। ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে আগস্ট মাসের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে।
প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৬৫ কোটি মার্কিন ডলার (২৫ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন)। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২ হাজার ৬০ কোটি ডলার ( ২০ দশমিক ৬০ বিলিয়ন)।
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে। এরপর থেকেই বেড়ে চলেছে রেমিট্যান্সের গতি।
উল্লেখ্য, সেদিন এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘মাস খানেকের মধ্যে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে এবং কমিশনে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত থাকবে। বিদেশি এক্সপার্ট নেওয়া হবে। শ্রীলঙ্কা কীভাবে করেছে সেটাও দেখা হবে। আমরা ছাপিয়ে আর কোনো টাকা দেব না। সেটা জাতির জন্য ভালো হবে না। তখন মূল্যস্ফীতি শতভাগ বেড়ে যেতে পারে।’
ব্যাংকের আমানতকারীদের উদ্দেশে গভর্নর বলেন, ‘যেটুকু টাকা না তুললে নয়, সেটা তোলেন। আগামী ৫-৬ মাসের মধ্যে অবস্থা পরিবর্তন হবে। বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত কোনো আমানতকারীর টাকা খোয়া যায়নি। গ্রাহকদের বলব, ধৈর্য ধরেন। একবারে সবাই টাকা তুলতে যাবেন না। তা হলে ব্যাংক টাকা দিতে পারবে না। অনেকে অতিরিক্ত সুদের লোভে টাকা ব্যাংকে রেখেছেন। এখন অধৈর্য হলে হবে না। আমানতের টাকা লস হবে, এটা আমরা চাই না।’
গভর্নর বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদকে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ম পরিকল্পনা দিতে বলা হয়েছে। কাজ করতে হবে, বসে থাকার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সব ধরনের সহায়তা করবে। তারা সহায়ক ভূমিকা পালন না করলে পর্ষদ আবার পরিবর্তন করা হবে। সবাইকে নজরদারি করা হচ্ছে। অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের ব্যাংকে বন্ধকীর বাইরে থাকা সম্পত্তি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘এটা আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করতে হবে। সম্পদ বিক্রি যেন করতে না পারে সেজন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলব। এ মুহূর্তে তাদের সম্পদ যেন কেউ না কেনে। এ সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।’
ব্যাংক খাতে যেসব মাফিয়া রয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে গভর্নর বলেন, ‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। একটা ব্যবসায়ীর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবারই খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
ব্যাংক খাতের বর্তমান অবস্থার দায় নিয়ে সাবেক দুই গভর্নরের বিষয়ে ড. আহসান বলেন, ‘এখানে সুশাসনের অভাব ছিল। সামনে যে হবে না, তেমন নয়। তবে আমার হাত দিয়ে খারাপ কিছু হবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও সংস্কার করতে হবে। কারণ তারাও দায় এড়াতে পারে না।’