সংবিধান পুনর্লিখন: মূল ভিত্তি হতে পারে একাত্তরের তিন নীতি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১:৫৩:০৫ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে বিদ্যমান সংবিধান ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারী ব্যবস্থার পথ তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। ফলে সংবিধান সংস্কার কিংবা সংশোধন নয়, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রপন্থি বিষয়গুলো রেখে এখন সংবিধান পুনর্লিখন প্রয়োজন বলে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। এজন্য ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণার তিন নীতি মূল ভিত্তি হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে এক জনবক্তৃতায় ড. আলী রীয়াজ এ পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এই সংবিধানে স্বৈরাচারী ও সাংবিধানিক একনায়ক তৈরির পথ রয়েছে। ফলে কেবল কিছু কাটাছেঁড়া করে এর সমাধান সম্ভব নয়।
‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের সংবিধান : সংশোধন না পুনর্লিখন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ‘স্পিক বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন।
এতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও বলেন, যে কোনো সংবিধান জনগণের আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীকের একটি দলিল। ১৯৭৮ সালে স্পেনে এবং ১৯৮৮ সালে ব্রাজিলেও জন আকাঙ্ক্ষার ওপর সংবিধান পুনর্লিখন হয়েছে। ২০২৪ সালকে যদি সংবিধান ধারণ করতে না পারে, তাহলে আমরা কীভাবে বুঝব একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছে?
সংবিধান সংশোধন করে সমাধান কেন সম্ভব নয়, অধ্যাপক আলী রীয়াজ তার তিনটি কারণ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, প্রথমত– বিদ্যমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে অভাবনীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও তিনি দলের প্রধান, সংসদীয় দলের নেতাসহ মোট চারটি ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্রপতির হাতে ক্ষমতার পাহাড় তৈরি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতি থেকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থায় প্রবেশের সময় এসব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেওয়া হয়। সে ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেহেতু কোনো জবাবদিহিতা নেই, তাই অনিবার্যভাবেই তিনি স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠেন।
দ্বিতীয়ত– পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের তিন ভাগের এক ভাগকে দেখানো হয়েছে ‘বেসিক স্ট্রাকচার’ হিসেবে, যেগুলো কখনও পরিবর্তন করা যাবে না। এটাকে বলা হয় ‘ইটার্নিটি ক্লজ’ তথা চিরকালীন ধারা, যা করার অধিকার পৃথিবীর কোনো সংসদের নেই। কারণ সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে হলেও জনগণ তাদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচন করে।
তৃতীয় কারণ হিসেবে আলী রীয়াজ বলেন, সংবিধানে ক্ষমতাবিন্যাস যেভাবে করা হয়েছে, খুঁটিনাটি পরিবর্তন করে সেখানে ভারসাম্য তৈরি করা যাবে না। তবে বর্তমান সংবিধানের যেসব বিষয় মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পরিপন্থি নয়, সেগুলো রেখে বাকি বিষয়গুলো পুনর্লিখন করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, পুনর্লিখনের ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার ঘোষণায় যে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের’ কথা বলা হয়ছে, তা মূল ভিত্তি হতে পারে। কারণ সেখানেই এই রাজনৈতিক সমাধানটি রয়েছে।
ড. আলী রীয়াজ সংবিধানের পুনর্লিখনের ক্ষেত্রে জনগণের অংশগ্রহণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, বর্তমান সংবিধানে যে মানবাধিকারগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো পূরণের বাধ্যবাধকতা রাষ্ট্রের নেই। অথচ নাগরিক তখনই নাগরিক হয়ে উঠবেন, যখন তাঁর এই অধিকারগুলোর নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় আর সি মজুমদার মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানে কয়েকজন লেখক, অ্যাক্টিভিস্ট, আইনজীবী ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে নিয়ে ‘স্পিক বাংলাদেশ’ নামে অরাজনৈতিক সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ হয়।
সভার সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুহাম্মদ সজল জানান, স্পিক বাংলাদেশ এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যা নাগরিক অধিকার, আইনগত ও ধর্মীয় অধিকার এবং মানবাধিকারের ব্যাপারে কথা বলবে।