পদত্যাগের চাপ, হেনস্থা, অপমান ও আতঙ্কে আছেন অনেক শিক্ষক: বিবিসির প্রতিবেদন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ৪:২২:৩৬ অপরাহ্ন
‘‘কিন্তু আমার বাসায় কেন আসবে? আমার পরিবার কেন টার্গেট হবে?”
বিবিসি: “আমি জানতাম যে আমাকে পদত্যাগ করতে হবে। এটাও জানতাম যে শিক্ষার্থীরা আমার অফিস ঘেরাও করবে এবং তারা আমাকে খোঁজাখুঁজি করছে। ফলে আমি পদত্যাগপত্র সাইন করে অফিসে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু ওরা এতে সন্তুষ্ট হয়নি। তারা চাচ্ছিলো আমি যেন তাদের সামনে গিয়ে পদত্যাগ করি।”
বিবিসি বাংলাকে কথাগুলো বলছিলেন একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। সম্প্রতি তিনি নিজ দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে এবং ‘আবারও হয়রানির ভয়ে’ তিনি নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।
ঐ শিক্ষক জানাচ্ছেন, ছাত্রদের হাতে ‘অপমানিত হওয়া’ ঠেকাতে তিনি বিভাগে যাওয়ার সাহস করেননি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাকে অফিসে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল।
“আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, তারা ভিডিও করবে এবং সেখানে গেলে যে কোনো একটা খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তাই শেষ পর্যন্ত আমি যেতে রাজি হইনি,” বলছিলেন সে শিক্ষক।
কিন্তু বিভাগে না গেলেও ঐ শিক্ষক খোঁজ পান যে ছাত্ররা ঠিকানা সংগ্রহ করে তার বাসভবনের দিকে আসছে।
“এটা ছিলো ভীতিকর। শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে আমার বাসার দিকে আসতে শুরু করে। আমি এবং আমার পরিবার খুবই ভয় পেয়ে যাই। পুরো ভবনেই আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আমি তখন পরিবারসহ আমার বাসা ছেড়ে অন্য স্থানে চলে যেতে বাধ্য হই।”
নাম-পরিচয় নপ্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ শিক্ষক জানাচ্ছেন, তিনি আওয়ামী লীগ পন্থী নীল দলের সদস্য এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নেননি এসব অভিযোগেই তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।
“আমি আমার পদত্যাগ মেনে নিয়েছি। তারা আমার অফিস পর্যন্ত গিয়েছে এতে সমস্যা নাই। কিন্তু আমার বাসায় কেন আসবে? আমার পরিবার কেন টার্গেট হবে?” প্রশ্ন করেন সে শিক্ষক।
বাংলাদেশে গত ৫ই অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি, প্রো-ভিসিসহ প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা একে একে পদত্যাগ করতে থাকেন।
এরমধ্যেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খবর আসতে থাকে যে, কোনও কোনও শিক্ষক হেনস্থার শিকার হচ্ছেন।
শিক্ষকদের ঘেরাও করে পদত্যাগে বাধ্য করা, অপমান-অপদস্থ করা এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেবার অভিযোগও আছে।
শিক্ষকদের মধ্যে কারা সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করেছেন এবং আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এমন অভিযোগে চাকরি ছাড়ার হুমকি এবং চাপপ্রয়োগ করা হচ্ছে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিস্থিতি আসলে কেমন? আর ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কই বা এখন কোন অবস্থায়?