সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পান্নার লাশ দেশে পাঠানো হয়েছে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১:৪৫:২৩ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ইসহাক আলী খান পান্নার লাশ হস্তান্তর করেছে ভারতের মেঘালয় পুলিশ।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেটের তামাবিল ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তার মরদেহ ফেরত পাঠানো হয়। নিহত পান্নার ভাতিজা নাবিল খান মৃতদেহ গ্রহণ করেন।
এর আগে স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইসহাকের লাশ বাংলাদেশে পাঠাতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়। নানা প্রক্রিয়া অনুসরণ শেষে আজ মেঘালয় পুলিশ ইসহাকের মরদেহ তামাবিল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। মরদেহ হস্তান্তরের সময় নিহত ইসহাকের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট রাতে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় প্রাণ হারান ইসহাক। ২৬ আগস্ট ভারতের অভ্যন্তরে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে উমকিয়াং থানা পুলিশ।
যেভাবে পাওয়া গেল পান্নার দেহ
মেঘালয় পুলিশ বলছে ২৬শে অগাস্ট বিকেলে বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা ইস্ট জয়ন্তিয়া হিলস জেলার ডোনা ভই এলাকার একটি সুপুরি বাগানে একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
স্থানীয় গ্রামবাসীরাই পচন ধরে যাওয়া দেহটি খুঁজে পান। পুলিশ সুপার বলছেন দেহের সঙ্গে তারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট পেয়েছেন। সেখান থেকেই তার নাম জানা যায়। তার সঙ্গে প্রায় তিন কোটি ভারতীয় টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার পাওয়া গিয়েছিল বলে শোনা গেলেও পুলিশ বলছে এই তথ্য সঠিক নয়।
গিরি প্রসাদ জানাচ্ছেন, “দেহের সঙ্গে পাসপোর্ট ছাড়াও একটি স্মার্টওয়াচ এবং তার পোষাক পাওয়া গিয়েছিল। গ্রামবাসীরাই দেহটি দেখতে পান”।
তিনি শুক্রবার রাতে জানিয়েছেন যে বাংলাদেশ থেকে পান্নার পরিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের কাছে দেহ ফিরে পাওয়ার যে আবেদন করেছিল, তা অনুমোদন পেয়েছে। শনিবার সকালে মরদেহ তার পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হবে।
বিএসএফ যা বলছে
সংবাদমাধ্যমের একাংশ জানিয়েছিল যে ইসহাক আলী খান পান্না সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে একটি পাহাড়ে চড়তে গিয়ে পড়ে যান। তখনই হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়।
সংবাদ মাধ্যমের একাংশে এরকমও বলা হচ্ছিল যে সীমান্ত পার হওয়ার সময় বিএসএফের তাড়া খেয়ে তিনি মারা গিয়ে থাকতে পারেন।
বিএসএফের মেঘালয় সীমান্ত অঞ্চলের এক কর্মকর্তা অবশ্য স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন যে ইসহাক আলী খান পান্নার দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় বিএসএফ জড়িত থাকতে পারে বলে যে খবর প্রচার করা হচ্ছে, তা সর্বৈব মিথ্যা।
ওই অঞ্চল দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে কোনও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ করেছেন, এমন তথ্যও তাদের কাছে নেই বলেই জানিয়েছেন বিএসএফের ওই কর্মকর্তা।
তাদের প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইসহাক আলী খান পান্নাকে হত্যা করে দেহটি ভারতে ফেলে দেয়া হয়ে থাকতে পারে। আবার মেঘালয় পুলিশের সূত্রগুলিও বলছে সম্ভবত বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই খুন করা হয় ইসহাক আলী খান পান্নাকে। যদিও নিশ্চিত হতে আরও তদন্ত চালাতে হবে তাদের।
রহস্য কী জানা যাবে?
এখানে প্রশ্ন হচ্ছে , একটি মরদেহ নিয়ে সীমান্ত রক্ষীদের নজর এড়িয়ে কীভাবে কেউ বা কারা ভারতে প্রবেশ করতে সক্ষম হলো? তার কোনও স্পষ্ট উত্তর এখনও পাওয়া যায় নি।
তবে এর আগে বিএনপির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন আহেমদকে চোখ বাঁধা অবস্থায় কেউ বা কারা বাংলাদেশ থেকে সড়ক পথে নিয়ে এসে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের রাস্তায় ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল।
যদিও তখন অভিযোগ উঠেছিল যে ভারতীয় সীমান্ত-রক্ষী বাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা কোন গোয়েন্দা সংস্থা কাজটি করেছিল। মেঘালয়ের রাজধানী শিলং শহরে গল্ফ কোর্সের কাছে ২০১৫ সালের ১১ মে খুব সকালের ঘটনা সেটা।
ওখানে কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মী সেই সময়ে বলেছিলেন যে ওই ব্যক্তি অচেনা জায়গায় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করছিলেন যে এটা কোন জায়গা। তারপরে তিনি নিজের পরিচয় দেন যে বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য। নিজের নামও বলেন তিনি।
তারপরে তাকে পুলিশ নিয়ে যায়। বেশ কিছুদিন তার চিকিৎসা চলে, অন্যদিকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে সালাউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তারও করা হয়। তার ঠিক দুমাস আগে ২০১৫ সালের ১০ মার্চ ঢাকায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেই সময়েও এই রহস্যের কিনারা হয় নি যে কারা সালাউদ্দিন আহমেদকে শিলংয়ে ফেলে রেখে গিয়েছিল।
তাই ইসহাক আলী খান পান্না কীভাবে ভারতে এসে খুন হলেন, নাকি তাকে বাংলাদেশে কেউ খুন করে ভারতে ফেলে রেখে গেল, এসব প্রশ্ন এখনো অমিমাংসিত রয়ে গেছে।