প্রিয় কেউ পাশে নেই, জাপানে একা ঘরে মৃত্যুর মহামারী, ছয় মাসে ৪০ হাজার!
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১২:৫৬:১৬ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক: বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে উন্নত দেশ জাপানে নিঃসঙ্গতার হৃদয়বিদারক অবস্থার খবর প্রকাশ হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলোতে। পরিস্থিতি এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, মৃত্যুর সময়ও কেউ পাশে নেই দেশটির হাজার হাজার নাগরিকের!
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশটিতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিজ বাড়িতে একা-একা মারা গেছেন। এর মধ্যে প্রায় চার হাজার মানুষকে মৃত্যুর এক মাসের বেশি সময় পর উদ্ধার করা হয়েছে।
জাপানের বিখ্যাত কথাশিল্পী হারুকি মুরাকামির সাহিত্যে শিল্পসমৃদ্ধ দেশটির মানুষের নিঃসঙ্গতার বিস্তর বয়ান এসেছে। তিনি দেখিয়েছেন তার সৃষ্ট চরিত্রে ভালবাসার জন্যে পাগলপারা মানুষটি এক সময় বেপরোয়া নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে কীভাবে। বিস্তারিত ন্যারেটিভে দেখিয়েছেন কেন সেখানে মানুষ বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে শীর্ষে থেকেও নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করে। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস Kafka on the Shore-এ খুঁজেছেন মানুষের জীবনে কাফকায়েস্ক কেন আসে। দেখিয়েছেন বিশ্বাস-আস্থা-ভরসার বিপরীতে থাকে নিঃসঙ্গতা (When Trust Erodes, An Island Remains)।
আরও পড়ুন—
বাড়তে পারে বৃষ্টি সোম-মঙ্গলবার
জাপান পুলিশের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। পুলিশের ওই প্রতিবেদনে প্রত্যাশা করা হয়, এর মধ্য দিয়ে জাপানের বিপুলসংখ্যক প্রবীণ জনসংখ্যার একাকী জীবনযাপন ও মৃত্যুর বিষয়টি ফুটে উঠবে।
জাতীয় পুলিশ সংস্থার সংগৃহীত এ বছরের প্রথম ছয় মাসের তথ্যানুযায়ী, একাকী জীবনযাপন করা মোট ৩৭ হাজার ২২৭ মানুষকে তাদের নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশের বয়স ৬৫ বা তার বেশি।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নিজ বাড়িতে একাকী মারা মানুষদের মধ্যে আনুমানিক ৪০ শতাংশ মানুষকে মৃত্যুর একদিনের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া গেছে। প্রায় ৩ হাজার ৯৩৯টি মরদেহ মিলেছে মৃত্যুর এক মাসেরও বেশি সময় পরে। এছাড়া ১৩০টি মরদেহ পাওয়া গেছে মৃত্যুর অন্তত এক বছর পর।
আরও পড়ুন—
ধানমন্ডিতে হামলায় আহত আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু
একাকী মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৭ হাজার ৪৯৮ জনের বয়স ৮৫ বছর বা তারও বেশি। এছাড়া ৫ হাজার ৯২০ জনের বয়স ৭৫ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে এবং ৫ হাজার ৬৩৫ জনের বয়স ৭০ থেকে ৭৪ বছরের মধ্যে।
শিল্পোন্নত দেশটিতে ভয়াবহ নিঃসঙ্গতা
জাপানের সরকারি টিভি নেটওয়ার্ক এনএইচ জানায়, যে মরদেহগুলোর খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি, সেগুলো খুঁজে বের করতে পুলিশ সংস্থাটি তাদের অনুসন্ধানের তথ্য সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চ এ বছরের এপ্রিলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, জাপানে একাকী বসবাসকারী প্রবীণ নাগরিকদের সংখ্যা আগামী ২৫ বছরের মধ্যে অনেক বৃদ্ধি পাবে। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটির প্রতি পাঁচটি পরিবারের মধ্যে একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে একা একা জীবন কাটাতে হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে জাপানে ১ কোটি ৮ লাখ বয়স্ক মানুষ নিঃসঙ্গভাবে একা বসবাস করবেন, যা দেশটির সব পরিবারের ২০ দশমিক ৬ শতাংশ।

‘দুঃখের দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে তার ক্ষয়’
পুলিশের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জাপানি তরুণ-তরুণীদের দেরিতে বিয়ে করার প্রবণতা বা অনেকের সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
এদিকে প্রবীণদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ায় জনসংখ্যাসংকটের মুখে পড়েছে জাপান। সেখানে চিকিৎসা ও কল্যাণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বিপরীতে কমছে শ্রমশক্তি।
আরও পড়ুন—
‘আমাকে ডিজিএফআই দিয়ে তুলে নিয়ে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই নেয়’
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রবীণ জনসংখ্যার পূর্ব এশিয়ার দেশ জাপান। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, জাপান টাইমস