সেই ‘জান্নাতি প্যালেস’ এখন ভূতুড়ে জ্বলা ঘর
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ আগস্ট ২০২৪, ৯:৪৩:০৪ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: নাটোর শহরের কান্দিভিটা মহল্লার আলোচিত বিলাসবহুল ‘জান্নাতি প্যালেস’ এখন ভূতুড়ে জ্বলা ঘর। রাত হলেই তা ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়। অথচ সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত বাড়িটি ছিল সরগরম।
এই জান্নাতি প্যালেসের প্রচার ছিল লোকের মুখে মুখে। তিনতলা বাড়িটির মালিক নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। এই আসন থেকে তিনি পরপর তিনবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। সুদূর কানাডার বেগমপাড়ায়ও রয়েছে ‘জান্নাতি প্যালেস’ নামে এমন একটি বাড়ি। সেখানে বাস করেন শিমুলের স্ত্রী-সন্তানরা। এই বাড়ি নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে সমালোচনামূলক বিস্তর খবর প্রকাশিত হয়েছে।
কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নাটোরের জান্নাতি প্যালেস জনরোষের কবলে পড়ে নিমিষেই পোড়ো বাড়িতে পরিণত হয়। প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা শিমুলের আলোচিত বাড়িতে সোমবার বিকেলে শত শত বিক্ষুব্ধ মানুষ চড়াও হয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কয়েক কোটি টাকা দামের তিনটি গাড়িসহ বাড়ির আসবাব। এ ছাড়া এ বাড়িতে বিতরণের জন্য মজুদ রাখা কয়েক লাখ টাকার ক্রীড়াসামগ্রী, হাজারো কম্বল লুট করা হয়। এ ছাড়া আসবাব, ফ্রিজ, এসি, ওভেনসহ নানা ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীর পাশাপাশি লুট করা হয় বাড়ির প্রবেশপথে লাগানো বিশাল আকারের স্টিলের একটি গেট। সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ তাণ্ডব। মঙ্গলবার সকালে শত শত মানুষ জান্নাতি প্যালেসের জ্বলা ঘর দেখতে এসে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়া ৪টি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তিনজনকে শনাক্ত করেন। নিহত সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে জান্নাতি প্যালেসের সামনে গিয়ে দেখা যায়, শত শত উৎসুক মানুষ ভেতরে ঢুকে বাড়ির অবস্থা দেখছেন। ঘটনার সময় বাড়িতে সংসদ সদস্য শিমুলের পরিবারের কেউ ছিলেন না। কর্মচারীরা আগেই এ বাড়ি ছেড়ে চলে যান। গত ১৬ বছর নাটোরের ঠিকদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ, চাকরিতে নিয়োগ ও বদলি, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রীড়াঙ্গনসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হতো এই বাড়ি থেকে। দলের মধ্যে বিভেদ থাকায় এমপি শিমুলের সমর্থক আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলো এমনকি পেশাজীবী সংগঠনগুলো চলত এই ‘বাড়ির’ নির্দেশনায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেশী কয়েকজন জানান, পরিবারের সদস্যরা কানাডার বেগমপাড়ার জান্নাতি প্যালেসে থাকেন। শিমুল নাটোরে থাকলে এই বাড়িতেই থাকতেন। স্বজনরা তাঁর দেখাশোনা বা খোঁজখবর নিতেন। তিনি যখন নাটোরের এই বাড়িতে থাকতেন, তখন গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ি থাকত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকে লোকারণ্য। সেই বাড়ি এখন পুরোপুরি জ্বলা ভূতুড়ে বাড়ি।
এটি দেখতে আসা এক ব্যক্তি জানান, এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় বাড়ির ভেতর ও বাইরে অনেক লোক দেখতেন। সাধারণ মানুষও বাড়ির মধ্যে অবাধে ঢুকতে পারত। অথচ সেই বাড়ির এই অবস্থা দেখে অবাক হচ্ছেন। সোমবার রাত থেকে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় বাড়িটি। দেখে ভূতুড়ে বাড়ি বলে মনে হয়।